নিউইয়র্ক: ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির ব্যানারে একক সঙ্গীত সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক মাতালেন বাংলাদেশের ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ খ্যাত কোকিলা কণ্ঠি শিল্পী বেবী নাজনীন। এমন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মুগ্ধ হলেন শিল্পী নিজে আর মুগ্ধ করলেন সর্বস্তরের সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের। গত ২৬ জুলাই রোববার সন্ধ্যায় সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে এই লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্কে বেবী নাজনীনের এটিই ছিলো প্রথম একক কনসার্ট।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই এমন কনসার্টে প্রবাসীদের বাড়তি আনন্দে ভড়িয়ে দিলেন শিল্পী বেবী নাজনীন। সামারের ছুটিতে দিনটি উকেন্ড থাকায় স্বাভাবিক কারণেই সঙ্গীতপ্রেমী প্রবাসীদের দৃষ্টি ছিলো এই কনসার্টের দিকে। অনেকে শহর ছেড়ে দূর-দূরান্তে বনভোজন উপভোগ করে যোগ দেন এই কনসার্টে। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বেবী নাজনীন ভক্ত দর্শক-শ্রোতায় পূর্ণ হয়ে যায় কুইন্স প্যালেস মিলনায়তন। দৃষ্টি নন্দন উপস্থাপনা, গানের তালে তালে মনোমুগ্ধকর নাচ আর সুরের মুর্ষনায় পুরো মিলনায়তন আনন্দ জোয়ারে ভেসে যায়। নিউইয়র্কের ইতিহাসে কোন মেলা কিংবা কনসার্টে এরকম উৎসাহী দর্শক-শ্রোতার সমাগম হয়নি কখনো-এমন মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
‘দুচোখে ঘুম আসে না, কাল সারারাত ছিল স্বপ্নেরো রাত, এক নজর না দেখিলে বন্ধু, বন্ধু কই কই রে,……..’ এরকম অংসখ্য জনপ্রিয় গানে এবং সুরে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের পাগল করলেন শিল্পী বেবী নাজনীন। তিনি হিন্দী ও আঞ্চলিক ভাষায়ও কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। এমন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঈদ পূণর্মিলনীতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। আসন না পেয়ে সাধারণ প্রবাসীদের পাশাপাশি কমিউনিটি নেতা ও মূলধারার রাজনীতিকদেরও লাইনে দাঁড়িয়ে বেবীর গানের সাথে তাল মেলাতে দেখা যায়। সব শেষে দেখা গেলো শেষ হয়েও হইলো না শেষ………..।
অনুষ্ঠানে প্রথম বেবী নাজনীন একক কয়েকটি গান পরিবেশন করার পর মঞ্চে আসেন তার ছোট বোন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী লিনি সাবরিন। এসময় বেবী লিনিকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর দুই বোন যৌথভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাদের পরিবেশনাও সবাইকে মুগ্ধ করে। মঞ্চে এসে বড় বোন বেবীর পা ছুঁয়ে সাল করে বিনয়ের সাথে লিনি বলেন, বড় বোনের সামনে গান গাইতে আমার বুক কাঁপে, ভয়ও লাগে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পন্সর বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও বাংলা সাংস্কৃতিক চর্চার পৃষ্ঠপোষক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারোয়ার খান বাবু। অনুষ্ঠান সফল করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান এবং আয়োজকদের পরিচয় করিয়ে দেন জিল্লুর রহমান জিল্লু। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিলো নাহার জেনারেল কনস্ট্রাকশন, ওয়ার্ল্ড টক ইউএসএ লিমিটেড-এর সিইও মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস, বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, আহবাব হোসেন চৌধুরী খোকন, মোহাম্মদ ফখরুল ইসসলাম দেলোয়ার, ভিপি জসিম উদ্দিন, বিলাল আহমেদ চৌধুরী, জুবের চৌধুরী শাহীন, মোহাম্মদ আলী রাজা।
অনুষ্ঠানটি ছিলো সবার জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠান আয়োজনের নেপথ্যে ছিলো একটি কমিটি, ছিলো ব্যাপক প্রস্তুতিও। কমিটির আহবায়ক ছিলেন নিজাম উদ্দিন আর সদস্য সচিব সারওয়ার খান বাবু। এছাড়াও আয়োজক কমিটির অন্যতম কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন, যুগ্ম আহবায়ক- এবাদ চৌধুরী, যুগ্ম সদস্য সচিব- শাহাদাত হোসেন রাজু। সার্বিক সহযোহিতায় বিশিষ্ট রাজনীতিক জিল্লুর রহমান জিল্লু ও জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া। সহযোগিতায় ছিলেন মিয়া মোহাম্মদ দুলাল, মফিজুল ইসলাম (রুমী), আমানত হোসেন আমান, হল ব্যবস্থাপনায় সেলিম রেজা, সাইদুর রহমান সাইদ, ভিপি আলমগীর। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন শামসুল ইসলাম মজনু, হেলাল উদ্দিন, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, ড. নুরুল আমিন পলাশ, এমলাক হোসেন ফয়সাল, মোহাম্মদ বশির উদ্দিন, এম এ বাসিত, শরিফুল খালিশদার, কাজী আমিনুল ইসলাম স্বপন, রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহমান সায়েম, রফিক উদ্দিন বাহার, নীরা রাব্বানী, হিমেল চৌধুরী সোহেল, কামাল উদ্দিন দিপু, সৈয়দ এনাম আহমেদ, এজিএম হোসেন জাহাঙ্গীর, ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম, মেহবুব খান, মোহাম্মদ বসির উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু প্রমুখ। প্রচার ও যোগাযোগে ছিলেন আবু সাইদ আহমদ ও একেএম রফিকুল ইসলাম ডালিম।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে পেশাগত কারণে আমেরিকায় অবস্থান করছেন প্রখ্যাত সঙ্গীত তারকা বেবী নাজনীন। একমাত্র ছেলে মহারাজ অমিতাভ কানাডায় অবস্থানের কারণে একবার কানাডা আর ছোটবোন সঙ্গীত শিল্পী লিনি সাবরিন নিউজার্সী বসবাস করায় আবার যুক্তরাষ্ট্র ঘরে বেড়াচ্ছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। তবে ছেলে আর বোনের সাথে এবছর ঈদুর ফিতর উদযাপন করেছেন বোনের বাসায় নিউজার্সীতে। আরো উল্লেখ্য, শিল্পী বেবী নাজনীনের একক লাইভ কনসার্ট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সঙ্গীতপ্রেমী প্রবাসীদের বাইরেও নিউইয়র্কে মূলত: বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসীদের মিলন মেলা হলো। কেননা গানের জগতের বাইরেও বেবী নাজনীন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত। তার এই কনসার্ট প্রবাসের জাতীয়তাবাদী আদর্শের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত আর ঐক্যবদ্ধ করবে বলে সংশ্লিস্টদের প্রত্যাশা।