নাট্যকার খান শওকতের লেখনী দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১ম ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব

- প্রকাশের সময় : ০৯:২৯:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২
- / ২৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক : “ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবি হোক”- এই শ্লোগান সামনে রেখে আসছে ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে কলকাতায় যাদবপুরের গরফায় সংস্কৃতি চক্র মঞ্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১ম ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব। সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে। এর দুই মাস পর ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঝিনাইদহে, খুলনার ডুমুরিয়ায়, যশোরের নোয়াপাড়ায় এবং কলকাতার একাধিক স্থানে নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকতের লেখা “বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্র”-তে প্রকাশিত বাংলাদেশের জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালী জাতির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনভিত্তিক নাটকসমূহ নিয়ে দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হবে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব-২০২২ এবং ২০২৩। ফেব্রুয়ারি মাসের ২ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে এবং ১৭ ও ১৮ তারিখে ২ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কলকাতার রাশবাহারীর তপন থিয়েটারে এ নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এ পর্যন্ত কখনো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুই দেশের নাট্যকর্মীদের অংশগ্রহনে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার সেই ঐতিহাসিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে আনন্দের কথা যে, এই উৎসবে যতগুলো নাটক মন্চস্থ হবে তার সবকটি নাটকের লেখক বাংলাদেশের সন্তান নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত। তার লেখা নিয়েই এ নতুন ইতিহাসের সুচনা হতে যাচ্ছে দুই বাংলায়।
উল্লেখিত ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারির নাট্য উৎসবের সফলতা দেখে পরবর্তী উৎসবে যে কোন নাট্যকারের লেখা বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক তাদের নাট্য উৎসবে সংযুক্ত করা হবে। মোটকথা এই নাট্য উৎসব কমিটি চেষ্টা করছেন সবাইকে নিয়ে দুই বাংলায় এবং প্রবাসে “শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক”প্রদর্শনীর বিষয়ে একটা বড় প্লাটফরম তৈরী করতে। এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে নাট্যাঙ্গনকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
উক্ত নাট্য উৎসবে কলকাতারঃ যাদবপুর দলমাদল পরিবেশন করবে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, গোবরাপুর সংবিত্তি নাট্যসংস্থা পরিবেশন করবে- কলংকিত-৭৫, বাকসা ব্রাত্য নাট্যজন পরিবেশন করবে- খুনী ডালিম বলছি, এবং টাকীর আমরা অমলকান্তি পরিবেশন করবে- আসামীর কাঠগড়ায় মেজর ডালিম। আর বাংলাদেশেরঃ সিলেটের দেশ থিয়েটার পরিবেশন করবে- স্বাধীনতার ঘোষক, পাবনা থিয়েটার-৭৭ এর- আমার বাড়ি টুঙ্গীপাড়া, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থিয়েটারের- ৭ই মার্চের ভাসন, ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগবাণী থিয়েটারের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন- মুজিবনগর থেকে মুক্তিযুদ্ধ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাটক- মুজিব বাইয়া যাওরে, টঙ্গীর নাট্যভুমির নাটক- শহীদ রাসেল, ফরিদপুরের নাটমহলের নাটকঃ বাকশালী মোশতাক, কুমিল্লার গ্রাম থিয়েটারের নাটক এবং ঝিনাইদহের অংকুর নাট্য একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি নাট্যদল উক্ত নাট্য উৎসবে অংশ নেবেন। এ বিষয়ে সামগ্রীক যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব পরিষদঃ (১). সন্জয় সাহা। কলকাতা। মোবাইলঃ +৯১-৭০৪৪৬৩৪৬৬৪. (২). বসন্ত বর্মন। কলকাতা। মোবাইলঃ ৮৩১৭৮২৩১৮২. (৩). কিশোর দত্ত। কলকাতা। মোবাইলঃ ৯৯৩২৬১৯১২৯. (৪). এজহারুল হক মিজান। গ্রাম থিয়েটার। কুমিল্লা। বাংলাদেশ। মোবাঃ ০১৬১৭.৮০৮২৮২।
একথা সত্য যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে নাটক রচিত হয়েছিলো বলে দুই বাংলার আপাময় জনতার কাছে পৌনে তিনশত বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া নবাব সিরাজের পুরো ইতিহাস মুখস্ত হয়ে গেছে। একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নাটকের মাধ্যমে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার। তাহলে নাটকের সংলাপের মাধ্যমে সত্য ইতিহাস স্মরন রাখা তাদের জন্য সহজ হবে। এমন স্বপ্ন নিয়েই তিনি এ নাটকগুলো লিখেছেন।
খান শওকত রচিত নাটকসমুহ নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার একটি গবেষনা গ্রন্থ লিখেছেন। নামঃ নাট্যকলায় বঙ্গবন্ধু। প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। ড. রুবেল আনছার খান শওকতের কাছে জানতে চেয়েছিলেনঃ
প্রশ্ন ১: সাধারণত নাটকে কোনো বিষয় (সংলাপে/নাট্যঘটনাবস্তুতে) তুলে ধরতে নাট্যকার তথ্যসূত্র দেন না। কিন্তু আপনার অধিকাংশ নাটকে তথ্যসূত্র দিয়েছেন। এর কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে কি?
খান শওকত: ঐতিহাসিক সত্যগুলো সবাই জানুক। আমি যে আবেগের বশে কোন সংলাপে মিথ্যা তথ্য দেই নাই, সেটা সবার কাছে পরিস্কার করার জন্যই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র তুলে ধরেছি।
প্রশ্ন ২: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক রচনা করার ক্ষেত্রে আপনার প্রেরণা কী?
খান শওকত: দেশের একজন সাধারন নাগরিক হত্যা হলেও তার বিচার হয়, কিন্তু জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর তার বিচার বন্ধ রাখা হলো। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত সময় বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের উপর সবচেয়ে বেশী নির্যাতন চালানো হলো, এবং ১৯৯০ এর পর একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আরো বেশী অপবাদ দেয়া শুরু হয়। এসব বিষয় আমার ভেতরে প্রশ্ন তৈরী করে এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষনা করতে ও নাটক লিখতে আগ্রহী করে। ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু করলাম নাটক লেখার কাজ। সেই থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন আমার নাটকের হিরো।
প্রশ্ন ৩: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক রচনা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু বিরোধীদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে, এ কাজটি করতে আপনি নাটককে কেন বেছে নিলেন?
খান শওকত: বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে হত্যার পর প্রায় ১৫০ বছর যাবত মীরজাফরকে নির্দোষ এবং দেশপ্রেমিক বিজ্ঞ নবাব হিসেবে পরিচিতি লেখা হয়েছে ব্রিটিশদের দালালদের বইতে। কিন্তু তাতে কি তিনি নির্দোষী হয়েছেন? একইভাবে ইতিহাসে যার যা অবস্থান আমার লেখা নাটকে তাইই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে। আমার পছন্দ সংলাপ এবং নাটক। তাই নাটকই বেছে নিলাম।
প্রশ্ন ৪: আমাদের জানামতে বাংলা নাট্যসাহিত্যে আপনিই প্রথম নাট্যকার যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৩৫টা নাটক লিখে “বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্র” প্রকাশ করেছেন। এক ব্যক্তিকে নিয়ে এতবেশী নাটক কেন লিখলেন?
খান শওকত: আমি নিজেও ভাবিনি যে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতগুলো নাটক লিখবো। আমিও চেয়েছিলাম ২/৩ টা নাটক লিখে থেমে যাবো। কিন্তু ইমেইলে এবং আমার প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ বিভিন্নজনকে দেওয়ার পর, অনেক নাট্যগ্রুপ ছোট নাটক বা কম চরীত্রের নাটক বা একক অভিনয়ের নাটক চাইলেন। কারন ২৫/৩০ জন শিল্পীর বড় গ্রুপ আজকাল ধরে রাখা কঠিন। তাই তাদের কথা রাখতে যেয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন দিককে ভাগ করে করে লিখতে লিখতে মোট ৩৭ টা নাটক লেখা হয়ে গেছে।
প্রশ্ন ৫: ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব নিয়ে কিছু বলুন।
খান শওকত: বাংলাদেশে বইমেলার স্বপ্ন সফল করতে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এখন তো বইমেলা দুই বাংলা এবং প্রবাসের বিভিন্ন দেশে হাজার কোটি টাকার এক জনপ্রিয় উৎসব। একইভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের স্বপ্ন দেখেছিলাম একদিন। ১৯৯৩ সাল থেকে এ স্বপ্নটা লালন করছি। অনেককেই বলেছি কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক রচনা করে রাজনৈতিক ঝুঁকি নেবার আগ্রহ দেখাননী। এরপর আমি নিজেই লেখা শুরু করি। আমরা হয়তো এখন ছোট আকারে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব শুরু করছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন যদি মুজিব সৈনিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারি এ আয়োজন অনেক ব্যাপক হবে একদিন। এবার আমরা দুই দেশে শুরু করছি। তবে সবার সহযোগিতা পেলে আগামীতে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে বাঙালী অধ্যুশিত শহরগুলোতে এ উৎসব করার স্বপ্ন আছে আমাদের।
একথা অনেকেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য একসময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি ছাড়া নাটক করা যেতো না। এজন্য বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা বন্ধ ছিলো। এরপরও যারা নাটক করার চেষ্টা করেছেন তারা বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদের চরীত্র অনুপস্থিত রেখে নাটক লিখতেন। একারনেই কিংবদন্তি সাংবাদিক ও অমর একুশের গানের লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা এবং বিখ্যাত চিত্র-পরিচালক হাসান ইমামের নির্দেশিত পলাশী থেকে ধানমন্ডি নাটকটির বাংলাদেশে মন্চায়নের সুযোগ হয়নি। খান শওকত ২০১৭ সাল থেকে এই আইনটি বাতিলের জন্য চেষ্টা শুরু করেন। তার প্রতিটা নাটকই মেমোরিয়াল ট্রাষ্টে জমা দেন এবং কতৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন বঙ্গবন্ধুর চরীত্র অনুপস্থিত রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটক তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। দর্শকরা নবাব সিরাজের মতো বঙ্গবন্ধু চরীত্রের সংলাপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও বুঝতে চায়। পরবর্তীতে দেশের শিল্পী সমাজের ব্যাপক অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই বিধানটি তুলে নেয়া হয়। এজন্য ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে নাটক মন্চায়ন বা নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আর কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটকের চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশময় এবং বিশ্বময়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারত বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব।
নাট্যকার খান শওকত রচিত “বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্র”-র নাটক সমুহ নিয়ে এই নাট্য উৎসবের বাইরেও দুই বাংলার বেশ কিছু নাট্যদল কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধু নাট্যসমগ্রে প্রকাশিত নাটক ও চরীত্র সংখ্যা হলোঃ (১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক, ২৬ টি চরিত্র), ২. কলংকিত-৭৫ (১ দৃশ্যের নাটক, ১ টি চরীত্র). ৩. আমাদের বঙ্গবন্ধু (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক, ২৫ টি চরিত্র), ৪. স্বাধীনতার ঘোষক (১ দৃশ্যের নাটক, ৫ টি চরিত্র). ৫.বঙ্গবন্ধুর সামনে জিয়া (১ দৃশ্যের নাটক, ৫ টি চরিত্র). ৬. মহামান্য রাষ্ট্রপতি (১ দৃশ্যের নাটক, ৭ টি চরিত্র). ৭. খুনী ডালিম বলছি (১ দৃশ্যের নাটক, ৭ টি চরিত্র). ৮. আমার বাড়ি টুঙ্গীপাড়া (১ দৃশ্যের নাটক ১ টি চরিত্র). ৯. ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন (১ দৃশ্যের নাটক, ৯ টি চরিত্র). ১০. মুজিবনগর থেকে মুক্তিযুদ্ধ (১ দৃশ্যের নাটক, ৪ টি চরিত্র). ১১. হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু (১ দৃশ্যের নাটক, ৯ টি চরিত্র). ১২. বঙ্গবন্ধুর বাকশাল (১ দৃশ্যের নাটক, ৩ টি চরিত্র). ১৩. বাকশালী মোশতাক (১ দৃশ্যের নাটক, ২ টি চরিত্র). ১৪. মোশতাকের তেলেসমাতি (১ দৃশ্যের নাটক, ৪ টি চরিত্র). ১৫. খুনী মোশতাক (১ দৃশ্যের নাটক. ৪ টি চরিত্র). ১৬. বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় বিদেশী শক্তি (১ দৃশ্যের নাটক. ৬ টি চরিত্র). ১৭. মোশতাকের ষড়যন্ত্র (১ দৃশ্যের নাটক. ৭ টি চরিত্র). ১৮. মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের অবদান (১ দৃশ্যের নাটক. ৫ টি চরিত্র). ১৯. স্বাধীনতা তুমি (গীতিনাট্য). ২০. জনতার সংগ্রাম (গীতিনাট্য). ২১. বাংলাদেশের মাটি (গীতিনাট্য). ২২. ৭ই মার্চের ভাষণ (১ দৃশ্যের নাটক. ৫টি চরিত্র). ২৩. বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক. ১২ টি চরিত্র). ২৪. হানাদার (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক. ৭ টি চরিত্র). ২৫. বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক. ৯ টি চরিত্র). ২৬. রক্তাক্ত ১৫ই আগষ্ট (১ দৃশ্যের নাটক. ১৪ টি চরিত্র). ২৭. মুজিব হত্যা (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক. ২০ টি চরিত্র). ২৮. মুজিব হত্যার বিচার (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক). ২৯. আসামির কাঠগরায় মেজর ডালিম. (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক, ১৮ টি চরীত্র). ৩০. আমরা তোমাদের ভুলবো না (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক, ১১ টি চরীত্র). ৩১. জেল হত্যা (পূর্নদৈর্ঘ্য নাটক, ১০ টি চরীত্র). ৩২. আমার নেতা শেখ মুজিব (পূর্নদৈর্ঘ্যনাটক, ৫ টি চরীত্র). ৩৩. শহীদ রাসেল (১ দৃশ্যের নাটক, ৫ টি চরীত্র). ৩৪. বাকশাল নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জিয়া (১ দৃশ্যের নাটক, ৩ টি চরিত্র). এবং ৩৫. আমার নাম শেখ মুজিব (১ দৃশ্যের নাটক, ২ টি চরিত্র)। এছাড়া আগষ্ট ট্রাজেডির কারন এবং মুজিব বাইয়া যাওরে নামে তিনি আরও দুটো নাটক রচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার লেখা নাটকের সংখ্যা মোট ৩৭ টা। ইতিমধ্যে এসব নাটক দুই বাংলায় বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার শাহপুরের সন্তান নাট্যকার খান শওকতের জন্ম ১৯৬০ সালের জানুয়ারিতে। ৩০ বছর বয়ষে ভাগ্যান্বষনে ১৯৯০ সালে নিউইয়র্কে আসেন। এসেই নির্মান করেন প্রবাসী কম্যুনিটির শিল্পীদের উদ্যোগে নির্মিত প্রথম ভিডিও চলচ্চিত্র “স্বপ্ন সুখের আমেরিকা”। প্রায় ৫৩ জন শিল্পী ও কলাকুশলী নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি এ ছবির পরিচালক ও কেন্দ্রীয় অভিনেতা। ১৯৯৩ সালের ২৩ জুন তারিখে এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো। এরপর নেশাগ্রস্থ শিল্পীর মতো ম্যাজিক শো শুরু করলেন। টানা প্রায় ৩০ বছর তার বিশ্ময়কর জাদু প্রদর্শনী উপভোগ করেছেন দেশী বিদেশী কম্যুনিটির লাখ লাখ মানুষ। জাদু দেখিয়ে আটবার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে অদ্যাবধি চালু রয়েছে “অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক কম্পিটিশন” ফেসবুক গ্রুপে প্রতিমাসে বিশ্ব জাদু প্রতিযোগিতা। এটি বিশ্বময় বেশ জনপ্রিয়। খান শওকত এই প্রতিযোগিতা কমিটির জুরি বোর্ডের সভাপতি।
নিউইয়র্কে সমস্যাগ্রস্থ ও নবাগত প্রবাসীদের কল্যানে তিনি চালু করেন চাকুরী বিষয়ক বিনামূল্যে সহযোগিতামুলক প্রোগ্রাম “জব সেমিনার”। ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আয়োজিত ১৬০ টি জব সেমিনারের সহায়তায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার প্রবাসী চাকুরী পেয়ে এবং প্রায় ৪০০ টি পরিবার অতি অল্প ভাড়ায় সরকারি বাসা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন।
১৯৯৩ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষনা শুরু করলেন। প্রথমে নির্মান করলেন “কেন তিনি জাতির পিতা”। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একের পর এক নাটক লিখলেন। ২০১৫ সাল থেকে তার লেখা নাটক আমেরিকা, কানাডা, ভারত, কাতার, দুবাই ও বাংলাদেশে মন্চস্থ হচ্ছে। ২০১৮ সালে তার লেখা নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব” মন্চস্থ হয় কলকাতার জ্ঞান মন্চে। উক্ত প্রদর্শনীতে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। ভারতের মাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন সফল আয়োজন আমি আগে কখনো দেখিনি। ইউটিউবে Bongobondhu drama written by Khan Showkat লিখে এ নাটকের ভিডিও দেখা যায়। তার লেখা অত্যন্ত নিরপেক্ষ, হৃদয়গ্রাহী এবং সত্য ইতিহাস। এ পর্যন্ত তার লেখনী নিয়ে দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো নাট্য সেমিনার ও পাঠচক্র। আমার বিশ্বাস তার লেখা নাটকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাসমুহ নাটকের সংলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
খান শওকত রচিত বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের গানঃ দুই বাংলার নাট্যমোদিরা/ ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা/ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা/ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান …../ সাতচল্লিশে ভাগের আগে/ আমরা কি আলাদা ছিলাম, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হওয়াতে/ বিভক্ত হয়ে গেলাম। কাঁটাতারের সীমানা থাকুক/ দেশ ভাগের নামে, আমরা মিলবো ভাষার টানে/ ভালোবাসার খামে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান …./ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে মুজিব হলেন শহীদ, আজও বাঙালিদের মন ও মননে মুজিব চিরন্জীব। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা/ ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা/ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান …..। এ গানটি ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে গাওয়া হবে।
কোন নাট্যকারের জীবদ্দশায় তার লেখনী নিয়ে দুই বাংলায় নাট্য উৎসব খুব কম দেখা যায়। এদিক দিয়ে বলা যায় খান শওকত ভাগ্যবান। যেহেতু তার নাটকের নায়ক হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাই তার লেখা এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর অগনিত ভক্তের মধ্যে। ইতিমধ্যে তার লেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নাটকটি ঢাকার উত্তরার ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্য বিভাগে পাঠ্য করা হয়েছে। তার নাটকসমুহ নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের লেখা গবেষনা গ্রন্থ “নাট্যকলায় বঙ্গবন্ধু”সরকারি অনুদানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে তার লেখা নাটকসমুহ নিয়ে দুই বাংলায় নাট্যকর্মীদের উদ্যোগে নাট্য-সেমিনার এ পাঠচক্র শুরু হয়েছে। যেগুলো বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তার লেখা নাটকসমুহ একদিন অনেক সুনাম বয়ে আনবে। এসব লেখনীর মাধ্যমে তিনি স্বরনীয় হয়ে থাকবেন। আমি তার এবং ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি। নাটকের জয় হোক।