নিউইয়র্ক ০৯:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দিলীপ কুমার: যার এক ফোনেই থেমে যায় কারগিল যুদ্ধ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • / ৩৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: ১৯৯৯ সালে কারগিল সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি, তখন চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে এক ফোনেই দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের ক্রান্তিকালে চমৎকার ওই কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন কিংবদন্তি বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমার, যার আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মেহমুদ কোরেশী তার আত্মজীবনীতে এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে তার এক সহকারী জানালেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ফোন করেছেন এবং দ্রæত তার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন।
নওয়াজ শরীফ ফোন ধরা মাত্রই বাজপেয়ী বলছেন, এটা কি হচ্ছে? আপনি যখন লাহোরে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন তখন পাকিস্তানী সেনারা কারগিলে আমাদের ভূখন্ড দখল করেছে।
খুরশিদ মেহমুদ কোরেশী তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, ওই ফোনালাপ শেষ হওয়ার আগে বাজপেয়ী নওয়াজ শরীফকে বলেন, আমি চাই আমার পাশে বসা একজনের সঙ্গে আপনি কথা বলুন, যিনি আমাদের আলোচনা শুনেছেন।
আর এটা এমন একজনের সঙ্গে ছিলো যার কণ্ঠ শুধু নওয়াজ শরীফের কাছেই নয় বরং পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই সুপরিচিত ছিলো।
এটা ছিলো দিলীপ কুমারের কণ্ঠ, যা কয়েক দশক ধরে সিনেমাপ্রিয় ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের হৃদয় শাসন করেছে।
দিলীপ কুমার নওয়াজ শরীফকে বলেছিলেন, মিঞা সাহেব এটা আমরা আপনার কাছ থেকে আশা করিনি। আপনি সম্ভবত জানেন না যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা দেখা দেয় তখন ভারতে মুসলিমদের অবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কখনো ঘরের বাইরে যাওয়াটাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। দয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু একটা করুন।
আর এভাবেই তিনি একটি সংঘাত থেকে দুটি দেশকে সংঘাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কেবল চলচ্চিত্র নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন কিংবদন্তি এ বলিউড অভিনেতা।
নীরবতার ভাষা
দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু তিনি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। খালসা কলেজে পড়ার সময় দিলীপ কুমারের সহপাঠী ছিলো রাজ কাপুর। তাঁরা ঘোড়ার গাড়িতে করে প্রায় ঘুরে বেড়াতেন।
এসময় রাজ কাপুর পার্সি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতেন তখন দিলীপ কুমার এক কোনায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন এবং তাদের দিকে কমই তাকাতেন। কেউ জানতো না যে এই ব্যক্তিই একদিন ভারতীয় সিনেমাকে নীরবতার ভাষা সম্পর্কে শেখাবেন যা অনেক লম্বা সংলাপের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।
১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা একটি স্টাইলে পারফর্ম করতেন যাকে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’ এবং এটি এসেছিলো মূলত: পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে।
বিখ্যাত গল্প লেখক সালিম বলছেন, ‘দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষœ বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন কিন্তু সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেতো’।
মুঘল-ই-আযম মুভিতে প্রখ্যাত অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুরের চরিত্র ছিলো খুবই প্রভাবশালী ও বলিষ্ঠ। তার মতো করে আর কেউই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। কিন্তু দিলীপ কুমার তাঁর কণ্ঠকে নিচু স্বরে এমন অভিজাতভাবে ও দৃঢতার সাথে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে।
দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর ও দেব আনন্দকে বলা হতো ‘ত্রিমূর্তি’ বা চলচ্চিত্রের তিন বিখ্যাত আইকন। কিন্তু দিলীপ কুমারের মতো বহুমাত্রিক অভিনয় দক্ষতা রাজ কাপুর ও দেব আনন্দের ছিলো না। সূত্র: বিবিসি

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দিলীপ কুমার: যার এক ফোনেই থেমে যায় কারগিল যুদ্ধ

প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

হককথা ডেস্ক: ১৯৯৯ সালে কারগিল সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি, তখন চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে এক ফোনেই দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের ক্রান্তিকালে চমৎকার ওই কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন কিংবদন্তি বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমার, যার আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মেহমুদ কোরেশী তার আত্মজীবনীতে এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে তার এক সহকারী জানালেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ফোন করেছেন এবং দ্রæত তার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন।
নওয়াজ শরীফ ফোন ধরা মাত্রই বাজপেয়ী বলছেন, এটা কি হচ্ছে? আপনি যখন লাহোরে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন তখন পাকিস্তানী সেনারা কারগিলে আমাদের ভূখন্ড দখল করেছে।
খুরশিদ মেহমুদ কোরেশী তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, ওই ফোনালাপ শেষ হওয়ার আগে বাজপেয়ী নওয়াজ শরীফকে বলেন, আমি চাই আমার পাশে বসা একজনের সঙ্গে আপনি কথা বলুন, যিনি আমাদের আলোচনা শুনেছেন।
আর এটা এমন একজনের সঙ্গে ছিলো যার কণ্ঠ শুধু নওয়াজ শরীফের কাছেই নয় বরং পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই সুপরিচিত ছিলো।
এটা ছিলো দিলীপ কুমারের কণ্ঠ, যা কয়েক দশক ধরে সিনেমাপ্রিয় ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের হৃদয় শাসন করেছে।
দিলীপ কুমার নওয়াজ শরীফকে বলেছিলেন, মিঞা সাহেব এটা আমরা আপনার কাছ থেকে আশা করিনি। আপনি সম্ভবত জানেন না যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা দেখা দেয় তখন ভারতে মুসলিমদের অবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কখনো ঘরের বাইরে যাওয়াটাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। দয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু একটা করুন।
আর এভাবেই তিনি একটি সংঘাত থেকে দুটি দেশকে সংঘাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কেবল চলচ্চিত্র নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন কিংবদন্তি এ বলিউড অভিনেতা।
নীরবতার ভাষা
দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু তিনি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। খালসা কলেজে পড়ার সময় দিলীপ কুমারের সহপাঠী ছিলো রাজ কাপুর। তাঁরা ঘোড়ার গাড়িতে করে প্রায় ঘুরে বেড়াতেন।
এসময় রাজ কাপুর পার্সি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতেন তখন দিলীপ কুমার এক কোনায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন এবং তাদের দিকে কমই তাকাতেন। কেউ জানতো না যে এই ব্যক্তিই একদিন ভারতীয় সিনেমাকে নীরবতার ভাষা সম্পর্কে শেখাবেন যা অনেক লম্বা সংলাপের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।
১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা একটি স্টাইলে পারফর্ম করতেন যাকে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’ এবং এটি এসেছিলো মূলত: পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে।
বিখ্যাত গল্প লেখক সালিম বলছেন, ‘দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষœ বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন কিন্তু সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেতো’।
মুঘল-ই-আযম মুভিতে প্রখ্যাত অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুরের চরিত্র ছিলো খুবই প্রভাবশালী ও বলিষ্ঠ। তার মতো করে আর কেউই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। কিন্তু দিলীপ কুমার তাঁর কণ্ঠকে নিচু স্বরে এমন অভিজাতভাবে ও দৃঢতার সাথে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে।
দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর ও দেব আনন্দকে বলা হতো ‘ত্রিমূর্তি’ বা চলচ্চিত্রের তিন বিখ্যাত আইকন। কিন্তু দিলীপ কুমারের মতো বহুমাত্রিক অভিনয় দক্ষতা রাজ কাপুর ও দেব আনন্দের ছিলো না। সূত্র: বিবিসি