বিনোদন ডেস্ক: কণ্ঠ আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে রাতারাতি সেলিব্রেটিতে পরিণত হয়েছিলেন রানু মন্ডল নামের এক ভিক্ষুক। যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট স্টেশনে খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করতেন। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই ট্রেনে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করার ভাগ্য বদলে যায় রানু’র। হাইওয়াই জাহাজে উড়ে গেলেন গেলেন মুম্বাইয়ের রেকর্ডিং স্টুডিওতে। প্লে ব্যাক করলেন বলিউডের ছবিতে। তার নাম ছড়িয়ে পড়ে ভারতের সবখানে। তাকে নিয়ে মেতেছিল বাংলাদেশের নেটিজেনরাও। তবে ভাগ্য সব সময় সহায় হয় না। তাই আবার তাঁকে ফিরতে হয়েছে আগের ঠিকানায় সেই রানাঘাট স্টেশনেই, চলতে হচ্ছে আগের মতো মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্যে। আর সেই সেলিব্রেটি দাম্ভিকতা দেখানোর ফলস্বরূপআগের অবস্থানে ফিরে এলেন। নদিয়ার বোগোপাড়ার বাসিন্দা রানুকে আবার সাদরে গ্রহণ করে নিল রানাঘাট স্টেশনের ভিক্ষুকরা। যেখান থেকে শুরু করেছিলেন মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেখানেই ফিরলেন সেই রানু মন্ডল।
ভারতের একাধিক গণমাধ্যম এমনটাই খবর প্রকাশ করছে। তবে ভারতের একটি ইংরেজি গণমাধ্যম বলছে রাণু মন্ডল রানাঘাটেই ফিরেছেন, তবে স্টেশনে নয়, বেগোপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন। এবং সঞ্চিত অর্থ দিয়েই চলছেন। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, সেই পুরনো দিনের মতোই এখন প্রতিদিনের খাবার যোগাতে ঘাম ছুটছে রানুর। প্রায় দিনই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তার। সেই আগের মতোই চলতি পথে মানুষের দেয়া সাহায্যে তার দিন চলছে। পাড়া-প্রতিবেশীদের সাহায্যেই কোনোরকম দিন যাপন করছেন তিনি। আগের ঠাটবাট কিছুই অবশিষ্ট নেই তার।
উল্লেখ্য, রাতারাতি জনপ্রিয়তায় অনেকটা লাইনচ্যুতি ঘটে রানু মন্ডলের। নানা সময়ে নানানবিতর্কিত কান্ড করে ওকথা বলে গণমাধ্যমের শিরোনামে আসেন রানু। নিজেকে অনেক বড় তারকা মনে করতে শুরু করেন। এ সময় কেউ সেলফি তুলতে এলে বা কাছাকাছি ঘেঁষলে ভুলভাল ইংরেজিতে তাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। ভিক্ষুকদের নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেন। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর, তার প্রতি মানুষের সমর্থন-অনুরাগ শুন্যের কোঠায় নেমে আসে। যে কারণে একে একে হাতছাড়া হয়ে পড়ে গানেরও শো। যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে ডাকছিলেন, তারাও দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন। ভারতের করোনা পরিস্থিতি বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়লে একেবারেই কাজহীন হয়ে পড়েন রানু। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে আলো ঝলমলে গানের জগত থেকে আবার রাণু মন্ডল ফিরে গেলেন রানাঘাটের সেই স্টেশন চত্বরে।
জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে কাজের সন্ধানে মুম্বাইয়ে এসে অভিনেতা ফিরোজ খানের বাড়িতে দীর্ঘদিন কাজ করেন রানু। সেখানে শুদ্ধ হিন্দি শেখেন। তারপর ফিরে আসেন আবার সেই রানাঘাটে। গত বছর রানাঘাট স্টেশনে গান গাওয়ার সময় অতীন্দ্র নামে এক যুবক তার গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং নজরে আসে হিমেশ রেশমিয়ার। রানুর কণ্ঠে মুগ্ধ হন বলিউডের মিউজিক কম্পোজার ও অভিনেতা হিমেশ রেশমিয়া। তিনি তাকে বলিউডের একটি ছবির গানে কণ্ঠ দেয়ার সুযোগ দেন। তারপর থেকেই নানা রিয়েলিটি শোতেও ডাক পরে রানু’র। তবে সেই সেনসেশন থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেছেন রাণু মন্ডল। কারণ হিসেবে তার দাম্ভিকতা ও দুর্ব্যবহারকে দায়ী করছেন নেটিজেনরা। সামান্য বিখ্যাত হতেই তিনি নিজেকে কেউকেটা ভাবা শুরু করেন। সেলফি তুলতে এলে ‘ডোন্ট টাচ’ বলে চিৎকার করে উঠেন ভক্তদের উদ্দেশে। ভিখারিদের সম্পর্কেও করেন নানা বাজে মন্তব্য। এরপরই তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজদের। ফলে আবার সেই স্টেশন চত্বরেই ফিরে আসতে হলো তাকে। তার শিক্ষা, রুচি ও সুন্দর আচরণের অভাব রাতারাতি সেনসেশনে পরিণত হওয়া রানু মন্ডলকে ছুড়ে ফেললো আবার সেই রাস্তায়ই। তথ্যসূত্র: এই সময়, নিউজ এইটিন