নিউইয়র্ক ১১:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অন্তরঙ্গ সব্যসাচী ও মিঠু চক্রবর্তী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১১৫ বার পঠিত

সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

বিনোদন ডেস্ক : সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তী। এর আগে গত ১০ বছরে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা হলেও চাক্ষুষ যোগাযোগের সুযোগ এসে গেল অনেকটা মেঘ না চাইতে জলের মতোই। দেশকাল পত্রিকার শারদীয় সংখ্যার বদৌলতে। কোনো এক রবিবারের নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগেই হাজির হলাম গলফ গার্ডেন্সে তাদের আস্তানায়। বাড়ি খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি একটুও, এক চায়ের দোকানের দিদি দেখিয়ে দিলেন সবার প্রিয় ফেলুদা অর্থাৎ অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর আবাসস্থল।

সাক্ষাৎকার না বলে বরং বলা ভালো সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তীর সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মেতে উঠলাম আমি সত্যগোপাল দে…

কথোপকথনের শুরুতেই এসে গেল মিঠুর হাতে তৈরি রিফ্রেশিং চা। শুরু হলো আড্ডা। প্রথম থেকেই কি অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল? সব্যসাচীর চটজলদি উত্তর, না কখনোই তা বলা যাবে না, বরং পর্দার পেছনে, মঞ্চের পেছনে, লাইট এডিটিং-এসবের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। তাছাড়া কখনোই অভিনেতা হতে চাননি সব্যসাচী-‘আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল খেলাধুলা করব। ক্রিকেট-ফুটবলসহ সবরকম খেলাধুলার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। বিবেকানন্দের কথা আমার অনুপ্রেরণা, এক সময় মনে হলো, পুলিশ হব। সে সাধ অবশ্য অভিনয়ের পর্দায় মিটেছে। তারপরে মনে হলো ইঞ্জিনিয়ার হব। তখন আরেকটু বয়স বেড়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যে মার্কস দরকার সেটা অর্জন করা গেল না, প্রি-মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আবেদন করলাম; কিন্তু সেটাও পাস করতে পারলাম না। এরপর ইচ্ছা হলো ফাইটার পাইলট হব। কারণ আমার প্লেন খুব ভালো লাগত…যুদ্ধজাহাজ চালাব এমন একটা ইচ্ছাও হয়েছে জীবনে।’

মিঠু এসে যোগ দিলেন এই আড্ডায়। মিঠুর উপস্থিতি প্রসঙ্গটিকে বিষয়ান্তরে নিয়ে গেল। সব্যসাচী কীভাবে জীবনে এলো, মানে প্রেম-ট্রেম আর কি?-‘প্রেম করার সময় পেলাম কোথায়, আসলে সব্যসাচী আমার দূর সম্পর্কের মামা, সেই সূত্রে আমি ভাগ্নি।’ মিঠুর মায়ের তরফে অনেক অনেক দূর সম্পর্কের ভাই সব্যসাচী। সেই সম্পর্কের সূত্রে সব্যসাচীকে ছোটবেলায় ‘মামা’ ডাকতেন মিঠু, ‘বেনু মামা’। সেই বাল্যকাল থেকে সব্যসাচীর সঙ্গে তার আলাপ। পরবর্তীকালে সেই আলাপ থেকেই বিয়ের ঘটকালি করে পরিবার। তাদের বিয়েটি কিন্তু রীতিমতো অ্যারেঞ্জড। মিঠুর বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের ফাইটার পাইলট এবং পরিবার ছিল রক্ষণশীল।

ইতোমধ্যে আরও এক কাপ চেয়ে এসে গেল, আবার উঠল সব্যসাচীর অভিনয়ের কথা, ‘অভিনয়ের দিকে ঝোঁক আমার কখনো ছিল না। আমি একসময় মিস্ত্রি হয়ে গিয়েছিলাম। ইলেকট্রো মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিকসে এক্সরে মেশিন নিয়ে কাজ করতাম। বাবারই একটা ছোট ফ্যাক্টরি ছিল। সেখানে কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখে গেলাম। মিস্ত্রিই হয়ে গেলাম। আমি তখন দিল্লিতে থাকতাম। বাবা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর মাকে নিয়ে কলকাতা চলে এলাম ১৯৮৪ সালে। সেই থেকে নাটক করতে শুরু করলাম, নাটকের ব্যাকস্টেজে কাজ। আমার পরিবারটাই কিন্তু নাটকের। সবাই নাটক করেন; কিন্তু আমার অভিনয় করার শখ তখনো ছিল না। বলেছিলাম সেট করব, লাইট নিয়ে কাজ করব…।’

অভিনয় করার শখ না থাকলেও সব্যসাচীর পিসেমশাই জোছন দস্তিদার নাটকের পরিচালক ছিলেন। একরকম জোর করেই অভিনয়ের সঙ্গে সব্যসাচীকে যুক্ত করেন। প্রথম টিভি সিরিয়াল তৈরি করেছিলেন জোছন দস্তিদার। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি চেষ্টা করলে পারবে।’ তারপর ‘তেরো পার্বণ’-এর গোরা তো ইতিহাস। শুরু হলো সব্যসাচীর অভিনয়ের যাত্রা। অনেকের আপত্তি ছিল, এমন একটা লম্বা, মুখে দাগভর্তি মানুষ কী করে লিড রোল পাবে? কিন্তু জোছন দস্তিদার এবং সব্যসাচী চক্রবর্তী বদলে দিলেন নায়কের সংজ্ঞা, যে নায়ক শুধু রোমান্টিক দৃশ্যে নায়িকার চোখে চোখ রাখেন না, যে নায়ক ম্যাচো, যার মাস্কুলিনিটি, হি ম্যান শিপ এবং ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর অনুকরণীয়।

অভিনেতা হিসেবে সব্যসাচীর কোনো স্ক্যান্ডেল নেই, স্ক্যান্ডেল ছাড়া কী করে এত জনপ্রিয়তা? হাসতে হাসতে সব্যসাচীর উত্তর, ‘আরে আমাকে যে বিখ্যাত হতে হবে, জনপ্রিয় হতে হবে তার জন্য ফন্দিফিকির-এসব তো কোনোদিন ভাবিনি। শুরুতে অভিনয় করতে না চাইলেও পরে মন দিয়ে অভিনয় করেছি। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে নিয়ে কোনো স্ক্যান্ডেল নেই অভিনয় জগতে, প্রেমঘটিত কোনো দুর্নামও নেই। সব্যসাচী এ সবের ঊর্ধ্বে। কথায় কথায় জানা গেল, একবার একটি টকশোতে এসে নিজের মুখে বলেছিলেন তার স্ত্রী মিঠুও।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলার দ্বিতীয় ‘ফেলুদা’ সব্যসাচী চক্রবর্তী। তার মতো মানুষ হয় না। শুধু নিকটজনেরা নন, ইন্ডাস্ট্রির সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন সে কথাই। তিনি অমায়িক, দয়ালু এবং স্পষ্টবাদী। অভিনয়ের পাশাপাশি ওয়াইল্ড লাইফে আগ্রহ, সময় পেলেই ক্যামেরা হাতে ছুটে যান দেশ-বিদেশের জঙ্গলে। বই পড়তেও ভালোবাসেন। নিজের পছন্দ ও ভালোলাগা নিয়ে সব্যসাচীর কিছু স্পষ্ট অভিমত আছে। তার কথায়, কেন আর কী ভালো লাগবে সেটা আমার নিজস্ব। মিঠুর রান্না খেতে ভালো লাগে, ওর রান্নার হাত লা জবাব। ভালো লাগে ওয়াইল্ড লাইফ, তাই ক্যামেরা হাতে ছুটে যাই জঙ্গলে। আসলে সব কাজের কি কারণ থাকা আবশ্যক? আমার এই ভালোলাগাগুলো আমাকে ভালো রাখে।

ফেলুদাকে বাদ দিয়ে সব্যসাচীর কথা অসম্পূর্ণ। প্রসঙ্গত এসে গেল ফেলুদার কথা, আর আলোচনায় যোগ দিলেন মিঠু ও সব্যসাচী দুজনই। সব্যসাচী জানান, বই পড়েই চরিত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিনেমা করতে গিয়ে দেখলেন বইয়ের অধিকাংশটাই অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি, ব্যক্তিগত মত তার। তবে ফেলুদা চরিত্রে সব্যসাচীর ডেবিউয়ের ঘটনাটা অনেকেই হয়তো জানেন না।

সব্যসাচী বলেন, প্রথমে তিনি ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের কাছেই তদবির করেছিলেন। তখন পরিচালক ফেলুদার ছবি তৈরি করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সব্যসাচী প্রশ্ন করেছিলেন, তাহলে কি একটা সুযোগ পাওয়া যাবে না? উত্তরে সত্যজিৎ বলেছিলেন, তিনি আর ফেলুদা করছেন না। তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। পরে ১৯৯৬ সালে নতুন করে আসে ফেলুদা। পরিচালক সন্দীপ রায়, ফেলুদার ভূমিকায় সব্যসাচী। তারপর থেকে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বয়সের কারণে ফেলুদা হিসেবে অবসর নিলেও পরবর্তী প্রজন্মকেও এগিয়ে রাখলেন অভিনেতা।

পুরস্কারের কথা উঠতেই সব্যসাচীর বক্তব্য, ঝুলিতে তো অনেক পুরস্কার-বিএফজে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট; কিন্তু সেরা পুরস্কার দর্শকদের মনে স্থান পাওয়া। অবসর প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিনেতা, তার মতে বিষয়টি নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। তিনি স্পষ্টত জানিয়ে দিলেন, তিনি আর ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না। তবে সম্পূর্ণ অবসর নিচ্ছেন না, বেছে বেছে পছন্দের কাজ করবেন। সাম্প্রতিক প্রজেক্ট নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘আমি খুবই বাছাই করা ছবিতে অভিনয় করতে পছন্দ করি। সেই জন্য শুভ্রজিৎ যখন আমাকে দেবী চৌধুরানী ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। যদিও ছবির নাম শুনে মনে হয়েছিল, এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলে ভালো হবে।’ দেবী চৌধুরানীতে অভিনয় নয়, নিজের চরিত্র হরবল্লভ রায়ের লুক নিয়ে চিন্তিত সব্যসাচী চক্রবর্তী।

এবার আসা যাক মিঠুর কাছে। তিনি সব্যসাচীকে ডাকেন ‘হ্যালো’ বলে! মিঠুর কথায়, ছোট থেকে মা, প্রতিবেশী দক্ষিণ ভারতীয় এক কাকিমাকে দেখে বড় হয়েছি। তারা কেউ স্বামীর নাম ধরে ডাকতেন না। মা বলতেন, ‘ওগো’, ‘হ্যাঁগো’ নয়তো ‘সান্যাল মশাই’। সেই কাকিমা কাকুকে ডাকতেন ‘হ্যালো’ বলে। কাকিমার পথে হেঁটে সব্যসাচীও তাই আমার ‘হ্যালো’। এই ‘হ্যালো’ ডাকে কোনো অভিযোগ নেই সব্যসাচীর। আমার শাশুড়ি মায়েরও ছিল না। বরং অভিনেতা পরিবারে মা-বাবা বিয়ে দেওয়ায় খুব খুশি আমি। এজন্যই বোধ হয় সব সামলে অভিনয়ে মন দিতে পেরেছি। কারণ সব্যসাচীর পরিবারের সবাই আমায়, আমার পেশাকে বুঝেছেন।

মিঠু বলতে থকেন, দাম্পত্যের ৩৭ বছরেও শুরুতে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে। আর বয়সটাই যা বেড়েছে। ৮০০ টাকা রোজগেরে সব্যসাচী আর প্রতিষ্ঠিত সব্যসাচীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। স্কুল অথবা কলেজ জীবনে একটা প্রেমও করতে পারল না! সব্যসাচী চক্রবর্তী মানেই হয় ক্রিকেট, নয় জঙ্গল। তারপরও বলব, ‘হ্যালো’ ভীষণ আবেগপ্রবণ। কিন্তু সেই অনুভূতির কোনো বহিঃপ্রকাশ নেই। আদতে মানুষটা খুবই উদার। ২৪ ক্যারেট সোনার মতোই খাঁটি। হেঁড়ে গলায় বকলেও আজ পর্যন্ত একটাও ভুল কথা বলেনি। সমস্যা একটাই, ‘হ্যালো’ ভীষণ রাগী! তাও তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাগ অনেকটা কমেছে। যখন রেগে যায়, তখন অন্য মানুষ। রাগ পড়লে আবার চেনা মানুষ। তাই সব্যসাচী রাগলে চুপ থাকে মিঠু। জানেন, এই সব্যসাচীর মধ্যেই অন্য এক সব্যসাচী থাকে। সে কিন্তু বেশ রোমান্টিক। যে সব্যসাচী আমার সব ভালো-মন্দের খবর রাখে।

বর্তমানে সাজানো সংসার সব্যসাচী-মিঠুর। তাদের দুই পুত্র গৌরব এবং অর্জুনও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। বৌমাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সব্যসাচী-মিঠু। বড় বৌমা ঋদ্ধিমা ঘোষ, ছোট বৌমা সৃজা সেন। দুজনই দাদু-ঠাম্মা হয়েছেন-পাঁচ বছরের নাতনি অবন্তিকা চক্রবর্তী ছোট ছেলের সন্তান, আর এক মাস বয়সী নাতি ধীর চক্রবর্তী বড় ছেলের সন্তান।

ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে থাকে না কেন? মিঠুর চটজলদি উত্তর, ছোটবেলা থেকে ছেলেদের একটা কথাই বলেছি, ঘর-সংসার করবে তখনই যখন তোমরা আলাদা থাকতে পারবে। আসলে কী জানেন এখন সময়টা পালটে গেছে। আমি তো আমার শাশুড়িকে নিয়ে থেকেছি, আজ এই পরিবর্তিত সময়ে এই জেনারেশনকে একটু স্পেস দেওয়া দরকার। কারণ ওদের জীবনটা ওদের। সব্যসাচী যোগ দিলেন কথা প্রসঙ্গে, আলাদা থাকলেও কথা হয়, আলোচনা হয় পেশা নিয়ে, যাওয়া-আসা, আদান-প্রদান চলতেই থাকে। এই তো আজই আমদের গেট টুগেদার, বাইপাসের ধারে একই কমপ্লেক্সে দুটি আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে গৌরব ও অর্জুন। আমরা আলাদা থেকেও আলাদা নই।

দুজনে এ পর্যন্ত কটি সিনেমা এবং সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন? মিঠুর উত্তর, আমিও কিন্তু তেরো পার্বণে একটি কম সময়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এটা কেউ জানে না। ‘এই সময়’ মেগা সিরিয়ালে প্রথমদিন আমাকে এক দৃশ্যে ১৪ বার শট দিতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টা মেগা সিরিয়াল এবং সিনেমায় অভিনয় করেছি। সব্যসাচী বলেন, আমার কথা তো আগেই বলেছি, তেরো পার্বণে অনেকেই বিপক্ষে ছিলেন হিন্দি মেশানো বাংলা বলে যে সে করবে অভিনয়। রিস্ক নিলেন কিংবদন্তি জোছন দস্তিদার, তারপর সব ইতিহাস। ১৫০টা ছবিতে অভিনয় হয়ে গেল, শুরু হবে দেবী চৌধুরানী। জানেন তো ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ালে আমরা সপরিবারে অভিনয় করেছি।

এসে গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গ, সব্যসাচীর অভিমত-রবীন্দ্রনাথের গান বুঝতে গেলে গানের কথাকে বুঝতে হবে, সুর বা গায়কী নিয়ে এত মাতামাতি চলবে না। সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য এক্সপেরিমেন্ট চলতেই পারে, যে এক্সপেরিমেন্ট ঋতুপর্র্ণ ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ায়ালে করেছেন। এই সিরিয়ালে জয়দীপ মুখার্জীর লেখা একটি গান ছিল, ‘ভুলে যাই থেকে থেকে/গানের ওপারে তোমাকে মানায়/গলির এপারে আমি,/রবি হয়ে থাক তোমার বাড়িওয়ালা,/আমার অন্তর্যামী।’ আসলে রবীন্দ্রনাথ তো অন্তরের। সাম্প্রতিককালের সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকলাপ নিয়ে সব্যসাচী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ-যাকে সামনাসামনি গালি দেওয়া যায়, তাকে নিয়ে মিম আর ঘৃণ্য কথাবার্তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক প্রসারিত হোক।

যেহেতু এটা একটা নির্ভেজাল আড্ডা; তাই আগের কথা পরে, পরের কথা আগে এসে গেছে। আড্ডার প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গেল ছোটবেলার কথা। সব্যসাচী জানালেন, জন্ম ১৯৫৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতায়। বাবার নাম জগদীশ চন্দ্র চক্রবর্তী আর মা মনিকা চক্রবর্তী। দুজনই অভিনয় জগতের মানুষ।

আড্ডা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিঠু ও সব্যসাচীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমাকে উঠতেই হলো, ঘণ্টা দুয়েক সময় যে কীভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না। অনেক কথাই হয়তো বাকি রয়ে গেল, কিন্তু কোনো শেষ প্রশ্ন ছিল না, কারণ কবির কথায় ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে।’ নির্ভেজাল ভালো মানুষ সব্যসাচী ও মিঠুর কোনো শেষ নেই, তারা চিরকালীন। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অন্তরঙ্গ সব্যসাচী ও মিঠু চক্রবর্তী

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

বিনোদন ডেস্ক : সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তী। এর আগে গত ১০ বছরে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা হলেও চাক্ষুষ যোগাযোগের সুযোগ এসে গেল অনেকটা মেঘ না চাইতে জলের মতোই। দেশকাল পত্রিকার শারদীয় সংখ্যার বদৌলতে। কোনো এক রবিবারের নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগেই হাজির হলাম গলফ গার্ডেন্সে তাদের আস্তানায়। বাড়ি খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি একটুও, এক চায়ের দোকানের দিদি দেখিয়ে দিলেন সবার প্রিয় ফেলুদা অর্থাৎ অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর আবাসস্থল।

সাক্ষাৎকার না বলে বরং বলা ভালো সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তীর সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মেতে উঠলাম আমি সত্যগোপাল দে…

কথোপকথনের শুরুতেই এসে গেল মিঠুর হাতে তৈরি রিফ্রেশিং চা। শুরু হলো আড্ডা। প্রথম থেকেই কি অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল? সব্যসাচীর চটজলদি উত্তর, না কখনোই তা বলা যাবে না, বরং পর্দার পেছনে, মঞ্চের পেছনে, লাইট এডিটিং-এসবের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। তাছাড়া কখনোই অভিনেতা হতে চাননি সব্যসাচী-‘আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল খেলাধুলা করব। ক্রিকেট-ফুটবলসহ সবরকম খেলাধুলার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। বিবেকানন্দের কথা আমার অনুপ্রেরণা, এক সময় মনে হলো, পুলিশ হব। সে সাধ অবশ্য অভিনয়ের পর্দায় মিটেছে। তারপরে মনে হলো ইঞ্জিনিয়ার হব। তখন আরেকটু বয়স বেড়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যে মার্কস দরকার সেটা অর্জন করা গেল না, প্রি-মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আবেদন করলাম; কিন্তু সেটাও পাস করতে পারলাম না। এরপর ইচ্ছা হলো ফাইটার পাইলট হব। কারণ আমার প্লেন খুব ভালো লাগত…যুদ্ধজাহাজ চালাব এমন একটা ইচ্ছাও হয়েছে জীবনে।’

মিঠু এসে যোগ দিলেন এই আড্ডায়। মিঠুর উপস্থিতি প্রসঙ্গটিকে বিষয়ান্তরে নিয়ে গেল। সব্যসাচী কীভাবে জীবনে এলো, মানে প্রেম-ট্রেম আর কি?-‘প্রেম করার সময় পেলাম কোথায়, আসলে সব্যসাচী আমার দূর সম্পর্কের মামা, সেই সূত্রে আমি ভাগ্নি।’ মিঠুর মায়ের তরফে অনেক অনেক দূর সম্পর্কের ভাই সব্যসাচী। সেই সম্পর্কের সূত্রে সব্যসাচীকে ছোটবেলায় ‘মামা’ ডাকতেন মিঠু, ‘বেনু মামা’। সেই বাল্যকাল থেকে সব্যসাচীর সঙ্গে তার আলাপ। পরবর্তীকালে সেই আলাপ থেকেই বিয়ের ঘটকালি করে পরিবার। তাদের বিয়েটি কিন্তু রীতিমতো অ্যারেঞ্জড। মিঠুর বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের ফাইটার পাইলট এবং পরিবার ছিল রক্ষণশীল।

ইতোমধ্যে আরও এক কাপ চেয়ে এসে গেল, আবার উঠল সব্যসাচীর অভিনয়ের কথা, ‘অভিনয়ের দিকে ঝোঁক আমার কখনো ছিল না। আমি একসময় মিস্ত্রি হয়ে গিয়েছিলাম। ইলেকট্রো মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিকসে এক্সরে মেশিন নিয়ে কাজ করতাম। বাবারই একটা ছোট ফ্যাক্টরি ছিল। সেখানে কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখে গেলাম। মিস্ত্রিই হয়ে গেলাম। আমি তখন দিল্লিতে থাকতাম। বাবা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর মাকে নিয়ে কলকাতা চলে এলাম ১৯৮৪ সালে। সেই থেকে নাটক করতে শুরু করলাম, নাটকের ব্যাকস্টেজে কাজ। আমার পরিবারটাই কিন্তু নাটকের। সবাই নাটক করেন; কিন্তু আমার অভিনয় করার শখ তখনো ছিল না। বলেছিলাম সেট করব, লাইট নিয়ে কাজ করব…।’

অভিনয় করার শখ না থাকলেও সব্যসাচীর পিসেমশাই জোছন দস্তিদার নাটকের পরিচালক ছিলেন। একরকম জোর করেই অভিনয়ের সঙ্গে সব্যসাচীকে যুক্ত করেন। প্রথম টিভি সিরিয়াল তৈরি করেছিলেন জোছন দস্তিদার। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি চেষ্টা করলে পারবে।’ তারপর ‘তেরো পার্বণ’-এর গোরা তো ইতিহাস। শুরু হলো সব্যসাচীর অভিনয়ের যাত্রা। অনেকের আপত্তি ছিল, এমন একটা লম্বা, মুখে দাগভর্তি মানুষ কী করে লিড রোল পাবে? কিন্তু জোছন দস্তিদার এবং সব্যসাচী চক্রবর্তী বদলে দিলেন নায়কের সংজ্ঞা, যে নায়ক শুধু রোমান্টিক দৃশ্যে নায়িকার চোখে চোখ রাখেন না, যে নায়ক ম্যাচো, যার মাস্কুলিনিটি, হি ম্যান শিপ এবং ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর অনুকরণীয়।

অভিনেতা হিসেবে সব্যসাচীর কোনো স্ক্যান্ডেল নেই, স্ক্যান্ডেল ছাড়া কী করে এত জনপ্রিয়তা? হাসতে হাসতে সব্যসাচীর উত্তর, ‘আরে আমাকে যে বিখ্যাত হতে হবে, জনপ্রিয় হতে হবে তার জন্য ফন্দিফিকির-এসব তো কোনোদিন ভাবিনি। শুরুতে অভিনয় করতে না চাইলেও পরে মন দিয়ে অভিনয় করেছি। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে নিয়ে কোনো স্ক্যান্ডেল নেই অভিনয় জগতে, প্রেমঘটিত কোনো দুর্নামও নেই। সব্যসাচী এ সবের ঊর্ধ্বে। কথায় কথায় জানা গেল, একবার একটি টকশোতে এসে নিজের মুখে বলেছিলেন তার স্ত্রী মিঠুও।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলার দ্বিতীয় ‘ফেলুদা’ সব্যসাচী চক্রবর্তী। তার মতো মানুষ হয় না। শুধু নিকটজনেরা নন, ইন্ডাস্ট্রির সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন সে কথাই। তিনি অমায়িক, দয়ালু এবং স্পষ্টবাদী। অভিনয়ের পাশাপাশি ওয়াইল্ড লাইফে আগ্রহ, সময় পেলেই ক্যামেরা হাতে ছুটে যান দেশ-বিদেশের জঙ্গলে। বই পড়তেও ভালোবাসেন। নিজের পছন্দ ও ভালোলাগা নিয়ে সব্যসাচীর কিছু স্পষ্ট অভিমত আছে। তার কথায়, কেন আর কী ভালো লাগবে সেটা আমার নিজস্ব। মিঠুর রান্না খেতে ভালো লাগে, ওর রান্নার হাত লা জবাব। ভালো লাগে ওয়াইল্ড লাইফ, তাই ক্যামেরা হাতে ছুটে যাই জঙ্গলে। আসলে সব কাজের কি কারণ থাকা আবশ্যক? আমার এই ভালোলাগাগুলো আমাকে ভালো রাখে।

ফেলুদাকে বাদ দিয়ে সব্যসাচীর কথা অসম্পূর্ণ। প্রসঙ্গত এসে গেল ফেলুদার কথা, আর আলোচনায় যোগ দিলেন মিঠু ও সব্যসাচী দুজনই। সব্যসাচী জানান, বই পড়েই চরিত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিনেমা করতে গিয়ে দেখলেন বইয়ের অধিকাংশটাই অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি, ব্যক্তিগত মত তার। তবে ফেলুদা চরিত্রে সব্যসাচীর ডেবিউয়ের ঘটনাটা অনেকেই হয়তো জানেন না।

সব্যসাচী বলেন, প্রথমে তিনি ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের কাছেই তদবির করেছিলেন। তখন পরিচালক ফেলুদার ছবি তৈরি করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সব্যসাচী প্রশ্ন করেছিলেন, তাহলে কি একটা সুযোগ পাওয়া যাবে না? উত্তরে সত্যজিৎ বলেছিলেন, তিনি আর ফেলুদা করছেন না। তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। পরে ১৯৯৬ সালে নতুন করে আসে ফেলুদা। পরিচালক সন্দীপ রায়, ফেলুদার ভূমিকায় সব্যসাচী। তারপর থেকে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বয়সের কারণে ফেলুদা হিসেবে অবসর নিলেও পরবর্তী প্রজন্মকেও এগিয়ে রাখলেন অভিনেতা।

পুরস্কারের কথা উঠতেই সব্যসাচীর বক্তব্য, ঝুলিতে তো অনেক পুরস্কার-বিএফজে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট; কিন্তু সেরা পুরস্কার দর্শকদের মনে স্থান পাওয়া। অবসর প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিনেতা, তার মতে বিষয়টি নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। তিনি স্পষ্টত জানিয়ে দিলেন, তিনি আর ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না। তবে সম্পূর্ণ অবসর নিচ্ছেন না, বেছে বেছে পছন্দের কাজ করবেন। সাম্প্রতিক প্রজেক্ট নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘আমি খুবই বাছাই করা ছবিতে অভিনয় করতে পছন্দ করি। সেই জন্য শুভ্রজিৎ যখন আমাকে দেবী চৌধুরানী ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। যদিও ছবির নাম শুনে মনে হয়েছিল, এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলে ভালো হবে।’ দেবী চৌধুরানীতে অভিনয় নয়, নিজের চরিত্র হরবল্লভ রায়ের লুক নিয়ে চিন্তিত সব্যসাচী চক্রবর্তী।

এবার আসা যাক মিঠুর কাছে। তিনি সব্যসাচীকে ডাকেন ‘হ্যালো’ বলে! মিঠুর কথায়, ছোট থেকে মা, প্রতিবেশী দক্ষিণ ভারতীয় এক কাকিমাকে দেখে বড় হয়েছি। তারা কেউ স্বামীর নাম ধরে ডাকতেন না। মা বলতেন, ‘ওগো’, ‘হ্যাঁগো’ নয়তো ‘সান্যাল মশাই’। সেই কাকিমা কাকুকে ডাকতেন ‘হ্যালো’ বলে। কাকিমার পথে হেঁটে সব্যসাচীও তাই আমার ‘হ্যালো’। এই ‘হ্যালো’ ডাকে কোনো অভিযোগ নেই সব্যসাচীর। আমার শাশুড়ি মায়েরও ছিল না। বরং অভিনেতা পরিবারে মা-বাবা বিয়ে দেওয়ায় খুব খুশি আমি। এজন্যই বোধ হয় সব সামলে অভিনয়ে মন দিতে পেরেছি। কারণ সব্যসাচীর পরিবারের সবাই আমায়, আমার পেশাকে বুঝেছেন।

মিঠু বলতে থকেন, দাম্পত্যের ৩৭ বছরেও শুরুতে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে। আর বয়সটাই যা বেড়েছে। ৮০০ টাকা রোজগেরে সব্যসাচী আর প্রতিষ্ঠিত সব্যসাচীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। স্কুল অথবা কলেজ জীবনে একটা প্রেমও করতে পারল না! সব্যসাচী চক্রবর্তী মানেই হয় ক্রিকেট, নয় জঙ্গল। তারপরও বলব, ‘হ্যালো’ ভীষণ আবেগপ্রবণ। কিন্তু সেই অনুভূতির কোনো বহিঃপ্রকাশ নেই। আদতে মানুষটা খুবই উদার। ২৪ ক্যারেট সোনার মতোই খাঁটি। হেঁড়ে গলায় বকলেও আজ পর্যন্ত একটাও ভুল কথা বলেনি। সমস্যা একটাই, ‘হ্যালো’ ভীষণ রাগী! তাও তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাগ অনেকটা কমেছে। যখন রেগে যায়, তখন অন্য মানুষ। রাগ পড়লে আবার চেনা মানুষ। তাই সব্যসাচী রাগলে চুপ থাকে মিঠু। জানেন, এই সব্যসাচীর মধ্যেই অন্য এক সব্যসাচী থাকে। সে কিন্তু বেশ রোমান্টিক। যে সব্যসাচী আমার সব ভালো-মন্দের খবর রাখে।

বর্তমানে সাজানো সংসার সব্যসাচী-মিঠুর। তাদের দুই পুত্র গৌরব এবং অর্জুনও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। বৌমাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সব্যসাচী-মিঠু। বড় বৌমা ঋদ্ধিমা ঘোষ, ছোট বৌমা সৃজা সেন। দুজনই দাদু-ঠাম্মা হয়েছেন-পাঁচ বছরের নাতনি অবন্তিকা চক্রবর্তী ছোট ছেলের সন্তান, আর এক মাস বয়সী নাতি ধীর চক্রবর্তী বড় ছেলের সন্তান।

ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে থাকে না কেন? মিঠুর চটজলদি উত্তর, ছোটবেলা থেকে ছেলেদের একটা কথাই বলেছি, ঘর-সংসার করবে তখনই যখন তোমরা আলাদা থাকতে পারবে। আসলে কী জানেন এখন সময়টা পালটে গেছে। আমি তো আমার শাশুড়িকে নিয়ে থেকেছি, আজ এই পরিবর্তিত সময়ে এই জেনারেশনকে একটু স্পেস দেওয়া দরকার। কারণ ওদের জীবনটা ওদের। সব্যসাচী যোগ দিলেন কথা প্রসঙ্গে, আলাদা থাকলেও কথা হয়, আলোচনা হয় পেশা নিয়ে, যাওয়া-আসা, আদান-প্রদান চলতেই থাকে। এই তো আজই আমদের গেট টুগেদার, বাইপাসের ধারে একই কমপ্লেক্সে দুটি আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে গৌরব ও অর্জুন। আমরা আলাদা থেকেও আলাদা নই।

দুজনে এ পর্যন্ত কটি সিনেমা এবং সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন? মিঠুর উত্তর, আমিও কিন্তু তেরো পার্বণে একটি কম সময়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এটা কেউ জানে না। ‘এই সময়’ মেগা সিরিয়ালে প্রথমদিন আমাকে এক দৃশ্যে ১৪ বার শট দিতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টা মেগা সিরিয়াল এবং সিনেমায় অভিনয় করেছি। সব্যসাচী বলেন, আমার কথা তো আগেই বলেছি, তেরো পার্বণে অনেকেই বিপক্ষে ছিলেন হিন্দি মেশানো বাংলা বলে যে সে করবে অভিনয়। রিস্ক নিলেন কিংবদন্তি জোছন দস্তিদার, তারপর সব ইতিহাস। ১৫০টা ছবিতে অভিনয় হয়ে গেল, শুরু হবে দেবী চৌধুরানী। জানেন তো ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ালে আমরা সপরিবারে অভিনয় করেছি।

এসে গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গ, সব্যসাচীর অভিমত-রবীন্দ্রনাথের গান বুঝতে গেলে গানের কথাকে বুঝতে হবে, সুর বা গায়কী নিয়ে এত মাতামাতি চলবে না। সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য এক্সপেরিমেন্ট চলতেই পারে, যে এক্সপেরিমেন্ট ঋতুপর্র্ণ ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ায়ালে করেছেন। এই সিরিয়ালে জয়দীপ মুখার্জীর লেখা একটি গান ছিল, ‘ভুলে যাই থেকে থেকে/গানের ওপারে তোমাকে মানায়/গলির এপারে আমি,/রবি হয়ে থাক তোমার বাড়িওয়ালা,/আমার অন্তর্যামী।’ আসলে রবীন্দ্রনাথ তো অন্তরের। সাম্প্রতিককালের সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকলাপ নিয়ে সব্যসাচী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ-যাকে সামনাসামনি গালি দেওয়া যায়, তাকে নিয়ে মিম আর ঘৃণ্য কথাবার্তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক প্রসারিত হোক।

যেহেতু এটা একটা নির্ভেজাল আড্ডা; তাই আগের কথা পরে, পরের কথা আগে এসে গেছে। আড্ডার প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গেল ছোটবেলার কথা। সব্যসাচী জানালেন, জন্ম ১৯৫৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতায়। বাবার নাম জগদীশ চন্দ্র চক্রবর্তী আর মা মনিকা চক্রবর্তী। দুজনই অভিনয় জগতের মানুষ।

আড্ডা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিঠু ও সব্যসাচীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমাকে উঠতেই হলো, ঘণ্টা দুয়েক সময় যে কীভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না। অনেক কথাই হয়তো বাকি রয়ে গেল, কিন্তু কোনো শেষ প্রশ্ন ছিল না, কারণ কবির কথায় ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে।’ নির্ভেজাল ভালো মানুষ সব্যসাচী ও মিঠুর কোনো শেষ নেই, তারা চিরকালীন। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

হককথা/নাছরিন