নিউইয়র্ক ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪, ১১ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নৃত্যবিদ দুলাল তালুকদার মারা গেছেন

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১২:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • / ৮২ বার পঠিত

নৃত্যবিদ দুলাল তালুকদার

বুলবুল ললিতকলা একাডেমির খ্যাতনামা নৃত্যবিদ ও হার্ভার্ড স্কুল অব ডান্সের শিক্ষক দুলাল তালুকদার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের পার্শ্ববর্তী মেডফোর্ড শহরে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দুলাল তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী সাবিহা তালুকদার ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দুলাল তালুকদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোস্টন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা টিপু চৌধুরী।

দুলাল তালুকদার বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাঙালি শিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। তিনি একাধারে নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, কোরিওগ্রাফার ও সংগীতজ্ঞ। দুলাল তালুকদারের জন্ম ১৯৪৬ সালে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা ঢাকায় চলে আসেন। সেই থেকে কমলাপুরের ঠাকুর পাড়ায় তাদের বসবাস। ছেলেবেলায় গান ও নাচ শেখার ঝোঁক ছিল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার বড় ভাই। আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নিউ হ্যাম্পশায়ারে বসবাস করছেন।

দুলাল তালুকদারের সৃজনশীল নাচের কম্পোজিশনে গভীর যত্ন, নিষ্ঠা, শৈল্পিক বোধসহ নানা আঙ্গিক ও শৈলী সার্থকভাবে ফুটে উঠত। ‘আমি দুলাল তালুকদার’ নামে তার জীবনস্মৃতি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা থেকে। বইটিতে স্থান পেয়েছে একটি রক্ষণশীল পরিবার ও সমাজের ব্যূহ ভেদ করে কীভাবে তিনি নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠলেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা।

দুলাল তালুকদারকে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) ভর্তি হতে উৎসাহিত করেন বড় ভাই মাহবুব তালুকদার। এরপর বাফায় নাচ শেখা শুরু। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বাফার নাচের ক্লাসে প্রথম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন মন্দিরা নন্দী, দুলাল তালুকদার ও রাহিজা খানম ঝুনু। তাদের নৃত্য-গুরু অজিত সান্যাল ছিলেন নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর দলের অন্যতম সদস্য।

১৯৬৩ সালে নবাবপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে দুলাল। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ষাটের দশকে সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে তিনি বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ইরানের বাদশাহ রেজা শাহ পাহলভি, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতেন দুলাল তালুকদার। তিনি সান্নিধ্য পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বখ্যাত ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, গজলসম্রাট মেহেদী হাসান, নৃত্যরানি সিতারা দেবী, উদয়শঙ্কর, পণ্ডিত রবিশঙ্করসহ বহু গুণীর।

১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান স্থায়ীভাবে দুলাল তালুকদার। সেখানে তিনি নাচের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), বোস্টন ইউনিভার্সিটি, বিশ্বখ্যাত লোক নৃত্য দল ‘মান্দালা’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তিনি দীর্ঘদিন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ডান্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সূত্র : সমকাল

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

নৃত্যবিদ দুলাল তালুকদার মারা গেছেন

প্রকাশের সময় : ১২:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

বুলবুল ললিতকলা একাডেমির খ্যাতনামা নৃত্যবিদ ও হার্ভার্ড স্কুল অব ডান্সের শিক্ষক দুলাল তালুকদার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের পার্শ্ববর্তী মেডফোর্ড শহরে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দুলাল তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী সাবিহা তালুকদার ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দুলাল তালুকদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোস্টন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা টিপু চৌধুরী।

দুলাল তালুকদার বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাঙালি শিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। তিনি একাধারে নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, কোরিওগ্রাফার ও সংগীতজ্ঞ। দুলাল তালুকদারের জন্ম ১৯৪৬ সালে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা ঢাকায় চলে আসেন। সেই থেকে কমলাপুরের ঠাকুর পাড়ায় তাদের বসবাস। ছেলেবেলায় গান ও নাচ শেখার ঝোঁক ছিল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার বড় ভাই। আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নিউ হ্যাম্পশায়ারে বসবাস করছেন।

দুলাল তালুকদারের সৃজনশীল নাচের কম্পোজিশনে গভীর যত্ন, নিষ্ঠা, শৈল্পিক বোধসহ নানা আঙ্গিক ও শৈলী সার্থকভাবে ফুটে উঠত। ‘আমি দুলাল তালুকদার’ নামে তার জীবনস্মৃতি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা থেকে। বইটিতে স্থান পেয়েছে একটি রক্ষণশীল পরিবার ও সমাজের ব্যূহ ভেদ করে কীভাবে তিনি নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠলেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা।

দুলাল তালুকদারকে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) ভর্তি হতে উৎসাহিত করেন বড় ভাই মাহবুব তালুকদার। এরপর বাফায় নাচ শেখা শুরু। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বাফার নাচের ক্লাসে প্রথম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন মন্দিরা নন্দী, দুলাল তালুকদার ও রাহিজা খানম ঝুনু। তাদের নৃত্য-গুরু অজিত সান্যাল ছিলেন নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর দলের অন্যতম সদস্য।

১৯৬৩ সালে নবাবপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে দুলাল। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ষাটের দশকে সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে তিনি বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ইরানের বাদশাহ রেজা শাহ পাহলভি, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতেন দুলাল তালুকদার। তিনি সান্নিধ্য পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বখ্যাত ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, গজলসম্রাট মেহেদী হাসান, নৃত্যরানি সিতারা দেবী, উদয়শঙ্কর, পণ্ডিত রবিশঙ্করসহ বহু গুণীর।

১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান স্থায়ীভাবে দুলাল তালুকদার। সেখানে তিনি নাচের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), বোস্টন ইউনিভার্সিটি, বিশ্বখ্যাত লোক নৃত্য দল ‘মান্দালা’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তিনি দীর্ঘদিন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ডান্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সূত্র : সমকাল