শ্রমিক পাঠানো বেড়েছে, প্রবাসী আয় বাড়েনি
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৫৭ বার পঠিত
গেল বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেলেও দেশের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) অর্জনের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন হয়নি। ২০২১ সালে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২২ সালেও তা একই থেকেছে। দেশের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে এর কারণ জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে নিরুত্সাহিত হওয়াসহ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে রেমিট্যান্সে তেমন প্রভাব পড়েনি। বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠালে যা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তা আরো বেশি পাওয়া যায়।
চাঁদপুরের আবুল কালাম মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে সিংগাপুরে থাকেন। ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমন অবস্থায় আমরা কখনোই পড়িনি। এখানে সবকিছুর দাম বাড়তি। আগে যে জিনিস কিনতে ১০০ ডলার লাগত, এখন তা ১৫০ ডলারে কিনতে হয়। আবার দেশে টাকাও বাড়তি পাঠাতে হয়। আগে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পাঠালে চলত, এখন পাঠাতে হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।’ আবুল কালাম মোল্লা জানান, যারা একটু অফিশিয়াল চাকরি করেন, তাদের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু খরচ বেড়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে, ২২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন ১১ লাখ কর্মী, যা ২০১৩ সাল থেকে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৩ সালে ৪ লাখ ৯ হাজার, ২০১৪ সালে ৪ লাখ ৭৬ হাজার, ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫৬ হাজার, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৫৭ হাজার, ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৬৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার, ২০১৯ সালে ৭ লাখ, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার এবং ২০২১ সালে ৬ লাখ হাজার কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। কর্মী প্রেরণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরও রেমিট্যান্সে তার প্রভাব পড়েনি। মূলত অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর কারণে রেমিট্যান্সে তার প্রভাব পড়েনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠালে প্রবাসীরা মার্কিন ডলারের যে বিনিময় হার পেয়ে থাকেন, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তারা এর চেয়ে বেশি পান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি মাধ্যমে অন্তত তিন থেকে চার টাকা তারতম্য থাকে। জনশক্তি রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স-প্রবাহ নিয়ে কাজ করেন এ খাতের বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ইত্তেফাককে তিনি জানান, প্রবাসীরা অবৈধ পথে অর্থ পাঠালে নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে তারতম্য তো আছেই। এছাড়া হুন্ডিওয়ালারা শ্রমিকদের কর্মস্থলে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ব্যাংকে যেতে হয় না। যিনি দেশে অর্থ গ্রহণ করেন, তার কষ্টও কম। বাড়িতে বসেই সপ্তাহের যে কোনো দিন তিনি টাকা পেয়ে থাকেন। এটি অনেককে হুন্ডিতে অর্থ প্রেরণে উত্সাহিত করে। কিরণ বলেন, প্রতি বছর প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের ওপর নির্ভর করে সরকার বিভিন্ন ব্যক্তিকে সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইমপরট্যান্ট পারসন) মর্যাদা দিয়ে থাকেন। গত কয়েক বছর ধরে ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি এ মর্যাদা পাচ্ছেন। তবে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার ১০ জন করে রেমিট্যান্সযোদ্ধা নির্বাচিত করে তাদের পুরস্কৃত করলে তাদের মধ্যে উত্সাহ আরো বাড়বে। তবে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে তিনি আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। করোনাকালীন বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসী বাংলাদেশিরা দেশে চলে এসেছেন। আসার সময় অনেকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থও নিয়ে এসেছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের অধিকাংশ অভিবাসী থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সের ওপর তা চাপ বাড়চ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর ফলে সেখানকার শ্রমিকদের দৈনন্দিন খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। এর ফলে একজন অভিবাসী আগে যে পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাতেন সেটি এখন কমে গেছে।