শেখ হাসিনার আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম নিউইয়র্কে : পেলো না কনস্যুলেট সেবা
- প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: আবারও আলোচনায় বহুল আলোচিত সেই পানি জাহাঙ্গীর। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দেখা গেছে। স্থানীয় বাংলাদেশ কনস্যুলেট কার্যালয়ে বেশ কিছু ডকুমেন্ট পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করাতে তাকে অপেক্ষমাণ দেখা গেছে বলে খবর বেরিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে জাহাঙ্গীরকে নিউইয়র্কে প্রকাশ্যে দেখা যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন। যেখানে জাহাঙ্গীরের চারটি ছবি যুক্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘৪০০ কোটি টাকার বেশি লোপাট করে পরিবারসহ আমেরিকায় পাড়ি জমানো জাহাঙ্গীর কখনও টুপি পরে নিজের মাথাসহ পুরো মুখ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গোপন ক্যামেরায় তিনি ঠিকই ধরা পড়ে যান।’
গত ১৪ জুলাই ঢাকায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের নাম উল্লেখ না করে ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করা পিয়ন, যে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যেই তড়িঘড়ি দেশ ছেড়ে ‘মার্কিন মুলুকে’ পাড়ি দেন জাহাঙ্গীর। পরে জাহাঙ্গীর ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। স্থানীয় সময় বুধবার তাঁকে সেবা নেওয়ার জন্য সেখানে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নাহারখিল গ্রামে। তাঁর বাবা রহমতউল্যা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে কেরানি হিসেবে চাকরি করতেন। ৯০-এর দশকে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনের স্টাফ হিসেবে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। তখন সুধা সদনে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন তিনি। সেই থেকে তার নাম হয় ‘পানি জাহাঙ্গীর’।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারের শেষের চার মেয়াদের প্রথম দুই মেয়াদের পুরোটা এবং তৃতীয় মেয়াদের প্রথম কিছুদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল এইড’ পদে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর। তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী’ পরিচয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম ছাড়াও গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।
পরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়ে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে, চাটখিল ও মাইজদীতে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। তাঁর নির্দেশেই চলত পুলিশ ও প্রশাসনের সব রদবদল। এলাকায় গেলে তাঁর গাড়ির সামনে-পেছনে থাকত পুলিশের গাড়ি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। ছবি: সংগৃহীত
এমপি হতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বহর নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করতেন। যাতায়াতে ব্যবহার করতেন হেলিকপ্টার। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েও সরে দাঁড়ান। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জাহাঙ্গীর বিপুল সম্পদ করেছেন। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নোয়াখালীর চাটখিলে পৈতৃক ভিটায় চার তলা বাড়ি ও ৭০০ শতক জমি, খিলপাড়া পূর্ববাজারে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ, মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুরে স্ত্রীর নামে আট তলা বিলাসবহুল ভবন, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেলের পাশে ১০০ বিঘা জমি এবং রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে সাড়ে ৫ হাজার বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট, মিরপুরে সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে তার। ব্যাংকে তার ডিপোজিট ছিল কয়েকশ কোটি টাকা। স্ত্রী-শাশুড়িসহ নামে-বেনামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জাহাঙ্গীর নিজ নামে আড়াই কোটি টাকা, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সোয়া এক কোটি টাকা, এফডিআর সোয়া ১ কোটি টাকা, স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল গাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানিতে কোটি টাকার শেয়ার এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলে দেখান। হলফনামায় বিভিন্ন খাত মিলিয়ে বছরে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা জানান। জাহাঙ্গীর তিনটি বিয়ে করেছেন। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে নিউইয়র্কের কোন কোন কমিউনিটি নেতার মতে জাহাঙ্গীর আলম যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের পর নিউইয়র্ক সিটির ওজন পার্ক এবং বাফেলো সিটিতে পরিবার-পরিজন অথবা আতœীয়-স্বজনদের বাসাবাড়ীতে বসবাস করছেন। আর সঙ্গত কারণেই নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম বাসার বাইরে প্রকাশ্যে আসছেন না।