হককথা ডেস্ক : প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলামের দাফন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সময় গত ১০ মে বুধবার ওয়াশিংটনে মেরিল্যান্ডের রিভার রোডের ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারের মসজিদে তার জানাজায় ছেলে নাঈম ইসলামসহ পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীরা উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক নূরুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৮ মে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওয়াশিংটনে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম (৯৪) মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে রুমিন ইসলাম বিশ্ব ব্যাংকে অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করছেন।
অধ্যাপক নুরুল ইসলামের জানাজায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ, জাতিসংঘের উন্নয়ন-গবেষণা টিমের প্রধান নজরুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও লেখক আব্দুন নূর, লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আহমেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিক, বিএএআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট আবু সোলায়মান, কম্যুনিটি লিডার ও লেখক ওয়াহেদ হোসেনী, মিজানুর রহমান, সোয়েব চৌধুরী, ওয়াশিংটনের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল বাহার চৌধুরী, মাসুমা খাতুন, ওয়ালি ফাহমি, মহসিন সিদ্দিকী, হাসান ইমাম প্রমুখ অংশ নেন। জানাজার পর আডেলফির রিগস রোডে জর্জ ওয়াশিংটন সিমেট্রিতে প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদের মরদেহ দাফন করা হয়। এরপর সবাই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন নুরুল ইসলাম। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মৃত্যুর আগপর্যন্ত খাদ্য নীতিবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) ইমেরিটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে তিনি সংস্থাটির মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ নীতি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার আগে ছয় দফা ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পরামর্শদাতা। স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতি ও সামাজিক নীতি বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অ্যাকাডেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইয়েল, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স।
পাঁচ বছর আগে ঢাকায় নুরুল ইসলামের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘অ্যান অডিসি জার্নি অব মাই লাইফ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেছিলেন, নুরুল ইসলাম একজন পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের অমর্ত্য সেন হতে না পারার কোনো কারণ তার ছিল না। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও সেই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি উনাকে দেখি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত দেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে।
অধ্যাপক নুরুল ইসলামের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫টির বেশি। তার মধ্যে রয়েছে করাপশন, ইটস কন্ট্রোল অ্যান্ড ড্রাইভারস অব চেঞ্জ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ : এ প্রাইমার অন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি। তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক উন্নয়ন অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সুমি/হককথা