মওদুদ আহমদ আর নেই

- প্রকাশের সময় : ১২:৫৪:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ ২০২১
- / ৪৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বিশিষ্ট রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ, অভিজ্ঞ পার্লান্টোরিয়ান, গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান মিডিয়াকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ-এর ইন্তেকালের খবরে দেশ ও প্রবাসে বাংলাদেশীদের মাঝে বিশেষ করে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা গেছে, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এবং বাংলাদেশের পল্লী কবি জসিম উদদীনের জামাতা মওদুদ আহমদ রক্তে হিমোগেøাবিনের পরিমাণ হ্রাস, বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে চিকিৎসা নেন। সেখানে তার হার্টে বøক ধরা পড়ায় তার হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী সিসিইউ থেকে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। গত ২০ জানুয়ারী তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়। এরপর আবার ২১ জানুয়ারী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২ ফেব্রæয়ারী রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন আইসোলেশনে থেকে পরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তার চিকিৎসা ও মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী হাসনা জসিমউদদীন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ছিলেন। সর্বশেষ খবর তার মরদেহ ঢাকায় আনার প্রস্তুতি চলছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। একজন সফল রাজনীতিবিদ। যার রয়েছে ৮১ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ। যিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের শাসনামলে মওদুদ আহমদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৪ মে ১৯৪০ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বøান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন। ১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এক বছর পর ১৯৮৬ এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর/দৈনিক ইত্তেফাক)