ভেনিসে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব, আলোচনায় যে বাংলাদেশি
- প্রকাশের সময় : ১২:১৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
- / ৩৯ বার পঠিত
ইতালির ভেনিসে বিলিয়ন ডলারের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশিকে নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। কে এই শিল্পপতি? কি তার পরিচয়? যুদ্ধ-মহামারিসহ বৈশ্বিক সংকটে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট যখন চরমে তখন একজন বাংলাদেশির কাঁড়িকাঁড়ি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ইতালির বাংলাদেশ মিশন এটা নিশ্চিত করেছে যে, ভেনিসে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী বাংলাদেশির নাম মোহা. ডাবলু চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি মোটর কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মিস্টার চৌধুরীর আদি নিবাস সিলেটে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীসহ দুনিয়ার দেশে দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার খোঁজে অবিরাম ছুটে চলেন তিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন লন্ডনে কাটালেও ক’বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। মেরিল্যান্ডে এফসিলন মোটরস নামে একটি কোম্পানি গড়েছেন। যেখানে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে তার। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন না-কি ইনভেস্টর হিসেবে দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনা এবং বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো সূত্রই।
ইতালির বাণিজ্য নগরী মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সহায়তায় মেরিল্যান্ড বেইজড এফসিলন মোটরের মাধ্যমেই ভেনিসে বিনিয়োগ করতে চান ডাবলু চৌধুরী। সেভাবেই তিনি তার প্রোফাইল এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করেছেন।
তাকে সর্বোতভাবে সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এমজেএইচ জাভেদ।
ভেনিসে আরও বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি তথা দেশের কল্যাণ বিবেচনায় সহকর্মীদের পরামর্শে তিনি মেয়র লুইগি ব্রুগনারোর দপ্তরের সঙ্গে ওই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিল্পোদ্যোক্তার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। কনসাল জেনারেল দাবি করেন- বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাবসহ একটি প্রোফাইল মেয়রের দপ্তরে জমা হয়েছে। ডেপুটি মেয়র এবং মেয়রের দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো মেয়রের সাক্ষাৎ পাননি। শিল্পোদ্যোক্তা ডাবলু চৌধুরী বর্তমানে ইতালিতে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে যা বলা হয়েছে-ইতালির সংবাদ মাধ্যম প্রেস ডটকমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, এক হাজার চাকরি এবং ২৫০ হেক্টরের একটি এলাকা। ভেনিসের পোর্তো মারঘেরায় বাংলাদেশের একজন উদ্যোক্তা বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই নিজের ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে ব্রুগনারো জান্তার বাণিজ্য কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করেছেন। দেখা করেছেন ডেপুটি মেয়র সেবাস্তিয়ানো কোস্টালোঙ্গার সঙ্গে। সেবাস্তিয়ানো এই খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, মেয়র লুইগি ব্রুগনারো বিষয়টি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলেননি। মেয়রকে উদ্ধৃত করে সেবাস্তিয়ানো জানিয়েছেন, ‘এক্ষেত্রে ইচ্ছার অভাব নেই। প্রশাসন যেকোনো বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে চায়, বিশেষ করে যদি তারা পোর্তো মারঘেরা পুনরায় চালু করতে পরিবেশগতভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। আমি কনসালকে বলেছিলাম যে, এটিও একটি ভালো বাণিজ্য খাত, কারণ যদি এটি বাস্তবায়িত হয় তবে এর মাধ্যমে অর্থ আসবে। তাই এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করুন এবং সম্পদ তৈরি করুন। কারণ এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিকরা এখানে কাজ করতে এসেছেন, কিন্তু কখনো এই শহরে বিনিয়োগ করেননি।
ব্যবসা: বিশ্বজুড়ে মোটরগাড়ি সেক্টরে ব্যবসার বিকাশ ঘটছে। ভেনিসকে বেছে নেয়ার কারণ একদিকে এটি সক্ষম একটি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে, সেখানে প্রতিষ্ঠিত কোনো উদ্যোক্তা নিজের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের শিল্পপতি ভালো জানেন যে, ভেনিস ইউরোপীয় তহবিল পেতে কঠোর পরিশ্রম করছে। এখানে ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রমের ভালো বিকাশ ঘটতে পারে এবং পোর্তো মারঘেরা একটি মুক্ত স্থান। এছাড়াও এখানে লজিস্টিক সহ ট্যাক্স, ট্যারিফ এবং ক্রেডিটের সুবিধা আছে। এছাড়াও নতুন কারখানায় দক্ষ কর্মীরা রয়েছেন যারা সবুজ উৎপাদন বা গ্রিন প্রোডাকশনে পারদর্শী। ভেনিস ফাউন্ডেশন চালু করতে তারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। পাশাপাশি এলাকাটির একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে যেখানে মানব পুঁজির বিকাশ ঘটতে পারে। ভেনিস এবং এর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কোনো শিল্প স্থাপনের জন্য টেকসই পরিবেশ দিতে পারে। সবশেষে মেয়র যদি রাজি থাকেন নতুন অফিসের যথাযথ তদন্ত করে এগিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র দেন তাহলে ভেনিসে নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ওই শিল্পপতি। ভেনিসের জন্য তিনি হতে পারেন প্রথম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একজন।
প্রোডাকশন: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান দেশ নয় যেখানে স্বয়ংচালিত খাতটি উন্নত, তবে দেশে তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির ব্র্যান্ড রয়েছে- একটি হলো সোবারি, যার মালিক টাটা মোটরস, বহুজাতিক ভারতীয় সংস্থা। বর্তমানে এটি সাশ্রয়ী মূল্যের কমপ্যাক্ট ভ্যান উৎপাদন করে যার ভালো চাহিদা রয়েছে। তারপর আছে মিশুক, ইলেকট্রিক রিকশা প্রস্তুতকারক, এটি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এছাড়াও আছে অমধঃব, এটি একটি স্বয়ংচালিত কোম্পানি যা ইউরেশিয়া জুড়ে কাজ করে এবং গাড়ি তৈরি না করলেও বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করে। অন্যান্য গাড়ি কোম্পানিগুলোর চাহিদাও বাংলাদেশ সামপ্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন খাতে, উন্নয়নশীল দেশটির মাঝারি-নিম্ন শ্রেণির বেশির ভাগ মানুষ কাজ করছেন। ভারতীয় টাটা কোম্পানিও ভেনিসে বিনিয়োগে আগ্রহী, এই বহুজাতিক সংস্থার আন্তর্জাতিক স্তরে একাধিক চ্যানেলও আছে। কিন্তু অন্যরা সবাই প্রার্থী হতে পারে, কারণ বিষয়টি নিয়ে কনসাল জেনারেল ইতিমধ্যেই অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। তবে এটি একটি খুব জটিল পরিকল্পনা, তাই এলাকাটিকে ভালো করে বুঝে নিয়ে তবেই মেপে পা ফেলতে চাইছেন বাংলাদেশি শিল্পপতি।