ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটি ॥ ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের সমাপ্তি ॥ ২০১৯ সালের সম্মেলন নিউইয়র্ক ॥ ২০২০ সালের সম্মেলন ডালাস : ‘যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নেতৃত্ব দেয়ার সময় আসছে বাংলাদেশীদের’
- প্রকাশের সময় : ০২:২২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুলাই ২০১৮
- / ৯৫৮ বার পঠিত
আটলান্টা (জর্জিয়া) থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ॥ ‘আমাদের সন্তান, আগামীর নেতৃত্ব’ শ্লোগানে আর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নেতৃত্ব দেয়ার প্রত্যয়ে সমাপ্ত হলো ৩২তম ফোবানা (ফেডাররেশন অব বাংলাদেশী অর্গানাইজেশন্স ইন নর্থ আমেরিকা)-এর সম্মেলন, তথা আটলান্টা ফোবানা সম্মেলন। সম্মেলনের আয়োজন ভালো, সুন্দর আর দৃষ্টি নন্দন থাকলেও ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটির মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হলো উত্তর আমেরিকা প্রবাসী ‘বাংলাদেশীদের মিলন মেলা’ হিসেবে পরিচিত তিন দিনের এই সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া (বিএএজি)। সম্মেলনের দেশী-প্রবাসী শিল্পীদের পরিবেশনা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে ভেসে উঠে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আমেরিকায় জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এদিকে ৩১তম ফোবানা সম্মেলনে নির্ধারিত সিদ্ধান্ত আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্ক। এই সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন হচ্ছে ড্রামা সার্কল।
তিন দিনের এই সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালায় ছিলো, সেমিনার, আলোচনা, সাহিত্য সভা, কন্স্যুলেট সার্ভিস, বই মেলা, চিত্র প্রদর্শণী, বাংলা ছবি প্রদর্শন, সম্মানণা প্রদান, পুনর্মিলনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে উত্তর আমেরিকায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের জন্যে ফোবানা কর্তৃক ঘোষিত ছাত্র বৃত্তি-২০১৮ প্রদান ছাড়াও বিশেষ অনুষ্ঠান। সম্মেলনের প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা, সেমিনার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে সম্মেলনের শেষ দিনে রোববার ফোবানা’র ২০১৮-২০১৯ সালের জন্য নতুন কমিটি গঠন এবং ২০২০ সালের ফোবানা সম্মেলনের ভেনু নির্বাচন করা হয়। ফোবানার নতুন কমিটিতে গোপন ভোটে নিউজার্সীর মীর ই চৌধুরী চেয়ারপার্সন, টেক্সাসের শাহ হালিম ভাইস চেয়ারপার্সন, নিউইয়র্কের জাকারিয়া চৌধুরী এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী, টেক্সাসের ড. রফিক খান জয়েন্ট সেক্রেটারী এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মাসুদ চৌধুরী রব কোষাধ্যক্ষ পুনরায় নির্বাচিত হন। অপরদিকে ২০২০ সালের ফোবানা সম্মেলনের জন্য স্বাগীতক সংগঠন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বান্ট (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস)।
সম্মেলনের প্রথম দিন: নতুন প্রত্যাশায় ফোবানার পর্দা উঠলো মানবতাবাদী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের শহর তথা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বের অন্যতম প্রধান রাজ্য জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টা সিটির জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে বর্নাঢ্য আয়োজনে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বিশ্বখ্যাত টিভি চ্যানেল ‘সিএনএন’ ভবন সংলগ্ন এই সেন্টারে ২৭-২৯ জুলাই অর্থাৎ শুক্র, শনি ও রোববার এই তিনদিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া (বিএএজি)। ২৭ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের চলমান সম্পর্ক জোরদারে এই সম্মেলন ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আর ইউএস কংগ্রেসম্যান বব উডল। সেই সাথে ফোবানা কর্মকর্তারা ঘোষণা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নেতৃত্ব দেয়ার সময় আসছে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের। বাংলাদেশী-আমেরিকান নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন তারাই নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সিটি, ইউএস কংগ্রেস আর ইউএস সিনেটে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি।
আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি-তে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। গেষ্ট অব অনার ছিলেন ইউএস কংগ্রেসম্যান বব উডল। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএস স্মল বিজনেস এডমিনিসট্রেশন-এর রিজিওন-৪ এর রিজিওনাল এডমিনিসষ্ট্রেটর অ্যাসলে ডি বেল, সিটি অব জর্জিয়ার ডিরেক্টর ভ্যানেসা ইভারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: ২২৭ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উদ্বেধনী অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও এই পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায়। আমন্ত্রিত অতিথি, ফোবানা সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা আর সহ¯্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল মঞ্চ ‘সিডনী মার্কাস অডিটরিয়াম’-এ বেজে উঠে আজানের ধ্বনি। এরপর পর্যায়ক্রমে গীর্জা আর প্যাগোডায় বেজে উঠা ঘন্টার ধ্বনি। সবশেষে ভেসে উঠে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের গ্রামবাংলার সুর। পরবর্তীতে স্থানীয় শিল্পীরা বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জাতীয় সঙ্গীতগুলো পরিবেশনের সময় মূলমঞ্চে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তিন দেশ তুলে ধরা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর স্থানীয় চার শিল্পী যৌথভাবে পরিবেশন করেন ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার…….’ জনপ্রিয় দেশের গান। গানটি পরিবেশনের সময় শব্দ বিভ্রাট দর্শক-শ্রোতাদের বিরক্তির সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল সবাইকে স্বাগত জানিয়ে সম্মেলনের কনভেনর জসিম উদ্দিনকে মঞ্চে আহ্বান জানান। জসিম উদ্দিন অতিথি সহ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান এম আতিকুর রহমান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী শাহ হালিম, ফোবানা সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী এম মওলা দিলু, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, চীফ কনসালটেন্ট গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও পৃষ্ঠপোষকদের মঞ্চে আহ্বান করার পর রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কংগ্রেসম্যান বব উডল যৌথভাবে ফিতা কেটে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মঞ্চে উপস্থিত সবাইকে লাল-সবুজের ফোবানা পতাকা পড়িয়ে দেয় হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কংগ্রেসম্যান বল উডল-কে ফোবানা’র পক্ষ থেকে প্ল্যাক প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সুন্দর শহর আটলান্টায় ৩২তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস এই শহর তথা জর্জিয়ায়। বাংলাদেশীরাও এই শহরকে সমৃদ্ধ করছে। তিনি বলেন, গ্লোবাল যুগে বাংলাদশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফোবানা সম্মেলন ভূমিকা রাখবে। আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করবে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের ভীষণ ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। সরকারের রয়েছে ভীষণ ২০৪১। তিনি বলেন, ডিজিটালের যুগে এখন সবই সম্ভব। তাই বাংলাদেশের পক্ষেও সব কিছুই সম্ভব।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশী-আমেরিকান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ প্রফেশনালরা আমেরিকার উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে আরো সম্পৃক্ত রাখতে এবং বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
কংগ্রেসম্যান বব উডল তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সুস্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ফোবানা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের শিল্প-সংস্কৃতি লালন-পালন করার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, সকল অভিভাসীদের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়েই আমেরিকা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিটি পরিবারকে সুন্দর ও শক্তিশালী করতে করতে চাই।
রিজিওনাল এডমিনিসষ্ট্রেটর অ্যাসলে ডি বেল তার বক্তব্যে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। আমরা ফ্রেন্ডশীপে বিশ্বাস করি। আমরা নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আটলান্টা সিটি মেয়রের প্রতিনিধি, সিটি অব জর্জিয়ার ডিরেক্টর ভ্যানেসা ইভারা বলেন, এই শহরে ৪০ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস। সিটিবাসীদের সুন্দর রাখতে, ভালো রাখতে সিটি প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল বলেন, আমরা প্রবাসে থাকলেও আমাদের গোল হচ্ছে বাংলাদেশ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী বংশদ্ভুত নতুন প্রজন্মের শিল্পী ছাড়াও প্রবাসের শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের একাধিক দলীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উপস্থিত সকল দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মধ্য রাত একটার দিকে শেষ হয় উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠান।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন: আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৮ জুলাই শনিবারের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো সাহিত্য সভা ‘কথা ও কবিতা’, নতুন প্রজন্মের অনুষ্ঠান ‘এনগেজ ফোবানা’, বাংলাদেশী ছবি প্রদর্শনী, বাংলাদেশ কনস্যুলেট সার্ভিস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইদের পুনর্মিলনী, ফোবানা’র কার্যকরী কমিটির সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।
বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘কথা ও কবিতা’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন রাজিয়া সুলতানা, ডা. মুহাম্মদ আলী মানিক, সাজ্জাদ বিপ্লব, রুমী কবীর, শিখা কর্মকার, জুয়েল সাদাত, আরেফিন পিয়াল, আবু রায়হান, রীটা আলী, জাফরিন ফরিদ ও লতিফুল ইসলাম শিবলী। এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করেন আবীর আলমগীর, কবীর কিরণ, লায়লা হারুন, মাহবুবুর রহমান, ড. সালাউদ্দিন আহমেদ, রাশেদ চৌধুরী, মারুফ ভুইয়া, জাকিয়া তৌফিক, ইকবাল এমদাদ, রিজোয়ান হৃদয় প্রমুখ। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন রিজোয়ানা হৃদয়। এদিনের কবি ও কবিতায় বাংলাদেশ ফুটে উঠার পাশাপাশি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, অধিকার, প্রেম-বিরহ, ভালবাসা আর গ্রাম বাংলা শোভা পায় কবি-আবৃৃত্তিকারদের কন্ঠে।
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রদর্শিত হয়। তবে ছবিটি প্রদর্শনের সময় সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে সংশিষ্টদের চরম ভোগান্তির শিকার হন এবং দর্শক-শ্রোতারাও বিরক্ত হন।
শনিবার রাতে মূল মঞ্চে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে জর্জিয়ার ১১জন কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে এককালীন এক হাজার ডলার ও ক্রেস্ট তুলে দেন ফোবানা কর্মকর্তারা। এই পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর ড. ফাজলে হোসেন। এই পর্ব উপস্থানায় ছিলেন রেহান রেজা। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- তাসমিয়া রাজিয়া, ফাহিম দিশা, তাসনিম খন্দকার, পাইভি তালুকদার, সুরাইয়া মহিদুল, আশকার ইবনে আওয়াল, সাঈদ সামিন, নাজিফা হোসাইন, কানিশা আহমেদ, তানিয়া আনোয়ার ও নাভাজ হোসাইন। উল্লেখ্য, বিগত ৪ বছর ধরে ফোবানা সম্মেলনে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। চার বছর আগে প্রথমে নিউইয়র্ক সম্মেলনে বৃত্তি প্রদান শুরু হয়। এরপর ওয়াশিংটন ডিসি আর ফ্লোরিডার পর এবার আটলান্টা সম্মেলনে বৃত্তি প্রদান করা হলো।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ড. ফাজলে হোসেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদেরকে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য স্টকহোমে যেতে হবে। সব সময় বেস্ট থাকতে হবে, সেকেন্ডে হওয়া যাবে না। লক্ষ্য অর্জনে সব সময় ‘সিরিয়াস’ থাকতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শনিবারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়াও নিউইয়র্ক, টেক্সাস, জর্জিয়া, ভার্জেনিয়া সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সংগঠন ও শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। প্রবাসের শিল্পীদেও মধ্যে কৃষ্ণা তিথি, রানো নেওয়াজ, নাদিয়া লিনা, তানজিনা ইসলাম তৃষা প্রমুখ একক সঙ্গঅত পরিবেশন করেন। নিউইয়র্কের ড্রামা সার্ক-এর শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন চন্দন চৌধুরী, শারমীন মহসিন, সোমা, লিমন চৌধুরী, তুলি ও রুবি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও নৃত্র পরিবেশন করেন আলেয়া ফেরদৌস। কান্তা, এছাড়াও বাংলাদেশের কিংবদন্তী জনপ্রিয় শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ছাড়াও এস আই টুটুল, তাহসান খান, চন্দন (ব্যান্ড শিল্পী) সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত শত শত দর্মক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে পৃষ্ঠপোষকদের মঞ্চে ডেকে তাদেও সম্মানিত এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে শুরু হওয়া এই পর্ব চলে ভোর রাত তিনটা পর্যন্ত। সৈয়দ আব্দুল হাদী, এস আই টুটুল, তাহসান খান আর চন্দন-এর গান সবাইকে মুগ্ধ করে।
আসন নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা: শনিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে রাত ৯টার দিকে মূল মঞ্চের ভিআইপ সারির আসনে একজনের বসা নিয়ে সম্মেলন স্থলে হৈচৈ আর পুলিশ ডাকার ঘটনা ঘটে। একজন কর্মকর্তা অন্য এক ব্যক্তিকে আসন ছেড়ে দেয়ার কথা বলায় এই অপ্রীতিতকর ঘটনা ঘটে। এজন্য ৮/১০ মিনিট অনুষ্ঠানে বিশৃংখল পরিবেশ বিরাজ করে। ফলে পুলিশ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দু’জন সদস্যকে হলে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে ফোবানা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অপ্রীতিকর এই ঘটনায় অন্যান্য দর্শক-শ্রোতারা বিব্রত বোধ করেন।
সম্মেলনের শেষ দিন: উত্তর আমেরিকায় ‘ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি’র প্রত্যাশায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ২৯ জুলাই রোববার মধ্য রাতে তিন দিনের ফোবানা সম্মেলন শেষ হয়। এদিনের অনুষ্ঠান মধ্যে ছিলো সেমিনার, বাংলাদেশী চিত্র প্রদর্শনী, বাংলাদেশ কনস্যুলেট সার্ভিস, ফোবানা’র সাধারণ সভা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শিল্পীরা ছাড়াও দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিলো শনিবারের চেয়ে অনেক কম। তবে বিভিন্ন স্টলে বিশেষ করে পোশাক-পরিচ্ছেদের স্টলে প্রবাসীদের কেনাকাটায় বেশ ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত ব্ল্যাক ডায়মন্ড খ্যাত বেবী নাজনীন, জনপ্রিয় শিল্পী ফাহমিদা নবী, শাহনাজ বেলী ও ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পী এবং প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রবাসের উল্লেখযোগ্য শিল্পীর মধ্যে ছিলেন তাজুল ইমাম, শাহ মাহবুব, রানো নেওয়াজ, রনি প্রমুখ।
সম্মেলনের শেষ দিনে ফোবানা’র ২০১৮-২০১৯ সালের জন্য নতুন কমিটি গঠন এবং ২০২০ সালের ফোবানা সম্মেলনের ভেনু নির্বাচন করা হয়। ফোবানার নতুন কমিটিতে গোপন ভোটে নিউজার্সীর মীর এই চৌধুরী চেয়ারপার্সন, টেক্সাসের শাহ হালিম ভাইস চেয়ারপার্সন, নিউইয়র্কের জাকারিয়া চৌধুরী এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী, টেক্সাসের ড. রফিক খান জয়েন্ট সেক্রেটারী এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মাসুদ চৌধুরী রব কোষাধ্যক্ষ পুনরায় নির্বাচিত হন। এই ৫ পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে ২০২০ সালের ফোবানা সম্মেলনের জন্য স্বাগীতক সংগঠন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বান্ট (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস)। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ফোবানা’র নির্বাহী কমিটির সভা চলে। ফোবানার চেয়ারপার্সন আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন-পুরাতন মিলে ৭৫টির মতো সংগঠন যোগ দেন। নতুন কমিটি নির্বাচনে ভোটাভুটিতে অংশ নেন ৪৬টি সংগঠন। সভায় ফোবানার বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী শাহ হালিম আর আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রব চৌধুরী। সভার নতুন সিদ্ধান্তের মধ্যে ফোবানার এক্সিকিউটিভ কমিটিতে পরপর দুইবারের বেশী কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
সবশেষে ফোবানা’র নতুন কমিটির নাম ঘোষণা এবং তাদের মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন আতিকুর রহমান। এছাড়াও ফোবানা কর্মকর্তাদের প্ল্যাক ও তিনটি সংগঠনকে কালচারাল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালের ফোবানা সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন ড্রামা সার্কল-এর কাছে বর্তমান ফোবানা কমিটির নেতৃবৃন্দ ফোবানা পতাকা হস্তান্তর করেন। এসময় ড্রামা সার্কল-এর সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ এবং নবনির্বাচিত ফোবানা চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী জাকারিয়া চৌধুরী শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এরপর
সম্মেলনের কনভেনর জসিম উদ্দিন ও সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল ৩২তম ফোবানা সম্মেলনকে সফল সম্মেলন হিসেবে দাবী করে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর শুভেচ্ছা জানান। ফোবানা সম্মেলনের কনভেন মধ্যরাত আড়াইটার দিকে সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীনের গান আর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।
‘এনগেজ ফোবানা’ অনুষ্ঠান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: এবারের ফোবানা সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে ‘এনগেজ ফোবানা’ শীর্ষক টিন এজদের ‘এক্সক্লসিভ অনুষ্ঠানটি’ নিয়ে অনেকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনুর্ধ্ব ৩০ বয়সী ছেলে-মেয়েদের এই অনুষ্ঠানে বড়দের উপস্থিত হতে দেয়া হয়নি। এমনিকি মিডিয়ার প্রতিনিধিদেরও সেই অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকারে বারণ ছিলো। তবে এই প্রতিনিধির বিশেষ অনুরোধে অনুষ্ঠানটি আয়োজকদের একজন ছবি তোলার অনুমতি দিলে ঐ অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে ‘ডিজে পার্টি’র মতো ভিন্ন ভাষায় নাচ-গান দেখতে পান। যা ফোবানা সম্মেলন তথা বাংলাদেশী শিল্প-সংস্কৃতির সাথে বেমানান। এমন কি এক সময় হলের লাইট বন্ধ করে দিয়ে ছেলে-মেয়েদের নাচা-নাচি করতে দেখা যায়। তাদের অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে ফোবানার কোন কর্মকর্তার কাছে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এব্যাপারে এক কর্মকর্তা জানান, অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে তারা পরিষ্কার ছিলেন না। তবে এর আয়োজক ছিলো নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।
অন্যান্য প্রসঙ্গ: জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারের সুবিশাল সিডনী মার্কাস অডিটোরিয়াম ১৮০০ আসন বিশিষ্ট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩/৪শত প্রবাসীর অংশগ্রন লক্ষ্য করা যায়। তবে সম্মেলনে যোগ দিতে প্রথম দিন ৩৭টি সংগঠন রেজিষ্ট্রেশন করে এবং দেড় থেকে দুই হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী যোগ দেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১২/১৩শত মানুষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। তবে অনুষ্ঠানের সময়সূচি সংক্রান্ত ফ্লায়ারটি ছিলো বিব্রতকর। কখন কোন অনুষ্ঠান হবে তার ধারাবাহিকতা ছিলো না অনুষ্ঠান সূচীতে। অপরদিকে সময় মতো কোন অনুষ্ঠানই শুরু ও শেষ হয়নি। এজন্য এক অনুষ্ঠানের পর অন্য অনুষ্ঠান শুরু নিয়ে দর্শক-শ্রোতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে সাউন্ড সিস্টে ছিলো যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ফলে শিল্পীদের পরিবেশনার সময় মাঝে মধ্যেই সাউন্ড হয় বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো মাইক্রোফোন বদলাতে হয়েছে। এতে শিল্পীরা বিব্রত বোধ করেন। খোদ শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী তার গান শুরু করতে না করতেই সাইন্ড বন্ধ হয়ে যায়। এতে সুর তুলেই হঠাৎ দু’হাত উঠিয়ে গান বন্ধ করে দেন তিনি এবং বিব্রতও বোধ করেন। এমন ঘটনা অন্যান্য শিল্পীর বেলায়ও ঘটতে দেখা যায়। ফোবানা সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘পরানের কথা’ শীর্ষক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পাদনা করেছেন আশফাক স্বপন।
উপেক্ষিত মিডিয়া: তবে ফোবানা সম্মেলনে প্রবাসের বাংলাদেশী মিডিয়া উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। এনিয়ে অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নানা অভিযোগও করেছেন। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়ার একাধিক সম্পাদক এই প্রতিনিধিকে জানান, এবারের ফোবানা সম্মেলনে প্রবাসের বাংলা মিডিয়াগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এজন্যই নিউইয়র্কের অনেক মিডিয়া যোগ দেয়নি সম্মেলনে। এদিকে সম্মেলন স্থলে ফোবানার মিডিয়া সেন্টার থাকলেও সেখানে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। সাংবাদিকদের জন্য ছিলো না কোন ব্রিফিং-এর ব্যবস্থা। সম্মেলনের অনুষ্ঠান সূচী বা যাবতীয় তথ্যাদিও জানানো হয়নি সম্মেলন কভার করতে যোগদানকারী সাংবাদিকদের। ফলে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। হাতেগোনা যে কয়জন সাংবাদিক এই সম্মেলন কভার করেছেন তাদের মধ্যেও এনিয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে। মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গদেরও কোন দেখা মেলেনি, বা তারাও সাংবাদিকদের কোন খোঁজ নেননি।