বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে : যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের স্বাগত সমাবেশ
- প্রকাশের সময় : ১০:২২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
- / ৩৬ বার পঠিত
হককথা রিপোর্ট: বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন এসে পৌছেছেন। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) স্থানীয় বিকের ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর শেষে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র আসেন। প্রধানমন্ত্রী ডুলাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌছলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একেএম আব্দুল মোমেন এমপি সহ অন্যান্য সফরসঙ্গীরাও রয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র আগমন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরে স্বাগত সমাবেশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদেও নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে অংশ নেন। এসময় তারা ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘জয় বাংলা জয় বাংলা’ প্রভৃতি শ্লোগান তুলে ডুলাস এয়ারপোর্ট মুখরিত করে তোলেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ১ মে সোমবার ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংক-এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস-এর আমন্ত্রনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন সফরে এসেছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন অভিজ্ঞ মহল। প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্ব দরবারে আরো উজ্জ্বল করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন, যখন মাত্র আট মাস পরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা সরকারের অর্জিত সাফল্য দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আর এই সাফল্যের পালকে অনেক আগেই যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু। এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাংকের নাম। একসময় পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নেই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। পরে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। গোটা বিশ্ব তাঁর সরকারের এই সাফল্য দেখেছে। বিশ্বব্যাংকও তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আর এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান সাড়ম্বরে উদযাপন করতে চায় বিশ্বব্যাংক। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে দায়িত্বশীল সরকারী ও দলীয় সূত্র বলছে, আগামী ২৯ এপ্রিল শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ ডেলিগেশনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকে সংস্থাটি বাংলাদেশকে যে ঋণসুবিধা দিয়েছে সে বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। ১ মে সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বিশ্ব ব্যাংক ভবনের সামনে ‘জয় বাংলা সমাবেশ’-এর কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এদিন বিশ্ব ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।
২ মে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-আমেরিকা বিজনেস কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা হবে বিকেল ৫টায় ভার্জিনিয়ার রিজ-কার্লটন ম্যকলেন মিলনায়তনে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হোটেলেই অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।
৩ মে বুধবার ওয়াশিংটনে একাধিক ইউএস কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
৪ মে বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে, এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। এ নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলে। তবে বিশ্বব্যাংক এ দেশে তাদের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারিমূলক কর্মসূচি লাখ লাখ বাংলাদেশীর জীবনকে উন্নত করেছে। অর্ধশতক সময়ের এই অংশীদারীত্ব উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক।
সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারী বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশ সফরে আসেন। সে সময় তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ম্যাকনামারার সফরের ছয় মাসের মধ্যেই ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ১১৭তম সদস্য হয়।
গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাংক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী। পাঁচ কোটি ডলার সহায়তা দিয়ে দেশের সঙ্গে সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্থাটির ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার সহায়তাপুষ্ট ৫৭টি প্রকল্প চলমান।