বাফেলো সিটির সন্ত্রাস কমানো : নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়া : রিয়েল এস্টেটে আমূল পরিবর্তন ও কর্মঠ কমিউনিটি হিসেবে : যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশীরা
- প্রকাশের সময় : ১২:১৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫
- / ১১৮১ বার পঠিত
বাফেলো (নিউইয়র্ক): বাফেলো সিটিতে বাংলাদেশীদের ইতিহাস গড়ার রেকর্ড আবিস্কার করলেন এমা সেপং। এমা সেপং ডেইলি বাফেলো নিউজের সিনিয়র বিজনেস স্টাফ রিপোর্টার। তিনি দীর্ঘ অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের নতুন রেকর্ড গড়ার ইতিহাস আবিস্কার করেন। গত ১২ ডিসেম্বর, শনিবারের বাফেলো নিউজে বাংলাদেশী কমিউনিটি নিয়ে এক দীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বাফেলো শহরের সন্ত্রাস কমাতে, নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়া, রিয়েল এস্টেটে আমূল পরিবর্তন আনয়নসহ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কর্মঠ কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশীদের চিত্রায়িত করেছেন সিনিয়র রিপোর্টার এমা। অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গিয়ে তিনি নিজেও অভিভূত হয়েছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি সম্পর্কে জেনে। নীরবে, অতি অল্প সময়ে একটি শহরের চিত্র বদলে দিল বাংলাদেশীরা।
মিডিয়া এবং সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রে রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থনৈতিক স্বার্থ কিংবা আরো অনেক অভিযোগ থাকলেও এমা সেপং এ ধরনের তিলক চিহ্ন থেকে মুক্ত এ জন্যেই যে, তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির কেউ নয় এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথেও সম্পৃক্ত নন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশীদের থেকে কোন ধরনের ‘সুযোগ-সুবিধা’ পেতে ইতিপূর্বে কোন যোগসূত্র স্থাপন করেছেন বলেও কোন অভিযোগ নেই। স্বনামখ্যাত সাংবাদিক এমা সেপং তাঁর দীর্ঘ রিপোর্টে বাংলাদেশী কমিউনিটি সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন। রিপোর্টের হেডিং ছিল – ‘Bangladeshis transforming Buffalo, one block at a time’‘বাংলাদেশীরা বাফেলোর এক একটি ব্লক নাটকীয়ভাবে বদলে দিচ্ছে’।
এমা তার রিপোর্টে বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলেন। এদের মধ্যে শেখ রহমান, কাজী আলী আহসান, মুজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, তারা নিউইয়র্কের কুইন্স থেকে ২০০৬ এবং ২০১৩ সালে বাফেলোতে মুভ করেছেন। তারা এখন বাড়ির মালিক। নিজেদের জমিতে শাক-শব্জির বাগান করছেন তারা। বাফেলোর ‘বি’ স্ট্রীটে মুজিবুর রহমানের বাড়ির কথা রিপোর্টে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তার বাগানের ছবি তুলেছেন বাফেলো নিউজের চিত্র সাংবাদিক ড্যারিক গি। মুজিবুর রহমানের সম্প্রতি ক্রয়করা একটি বাড়ি ফিক্সিং-এর কথাও তিনি উল্লেখ করেন। জনাব রহমান ইতিমধ্যে একটি এপার্টমেন্ট রেডি করে ভাড়া দিয়েছেন এবং অপরটি রেন্যুভেশন করছেন।
বাফেলো শহরের অন্যতম সুপরিচিত মার্কেটের নাম ‘ব্রডওয়ে মার্কেট’ সাংবাদিক এমা ঐ মার্কেটে বাংলাদেশীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেন। ব্রডওয়ে মার্কেটে প্রতি শনিবার বাংলা স্কুল ‘পাঠশালা’তে ক্লাশ হয় নিয়মিত। নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোদেরকে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি শিখানো হয় ঐ স্কুলে। ৭ বছর বয়সের রাফি ইফতেখার, বুশরা তাসমিনের কথা উল্লেখ বলে রিপোর্টার সেপং তাদের বাংলা বর্ণমালা পড়া এবং লেখার বর্ণনা দেন। চার বছর পূর্বে বাংলা স্কুল ‘পাঠশালা’ জনাব মাহবুবুল হক এবং তার সহধর্মীনি ফরিদা ইয়াসমিন তাদের লিভিং রুমে শুরু করেন যা বর্তমানে ব্রডওয়ে মার্কেটে চলছে বলেও উল্লেখ করেন এমা সেপং।
এমা লিখেয়েছে, ব্রডওয়েসহ ফিলমোর, লোয়েপার, উল্ট্জ, গিবসন ইত্যাদি স্ট্রীটে এক সময় ক্রিমিনালস, ড্রাগ ডিলারস, প্রসটিটিউটদের রমরমা ব্যবসা ও পদচারণা থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশীদের আগমনের ফলে এবং ঘর-বাড়ি মেরামত করে তা বাসোপযোগী করার কারণে এলাকাগুলোর চিত্র বলে গেছে। এ সকল স্ট্রীটে এখন সিনিয়র সিটিজেনরা তাদের আঙ্গিনায় নিশ্চিন্তে অবকাশ যাপন করেন। মায়েরা ট্রলিতে বাচ্চা নিয়ে পাশের গ্রোসারী, দোকানে কেনাকাটা করতে যায়। সেখানে রয়েছে হার্ডওয়্যার এবং একাউন্টস অফিস। নাটকীয়ভাবে চিত্রপট বদলে গিয়ে বর্তমানে অত্র এলাকায় একটি শান্ত-স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে বাংলাদেশীরা।
এসকল এলাকার পাশাপাশি দ্রুত বদলে যাচ্ছে জেনেসি, মোসেলি, ফিলমোর-লিরয়, ক্যানজিংটন সহ অনেক এলাকা। ইমিগ্রেন্ট বাংলাদেশী নতুন আগন্তুকেরা তাদের জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মেরামতহীন পড়ন্ত বাড়িগুলোকে ক্রয় করে নতুন ভাবে রেন্যুভেট করে তা বাসোপযোগী করছে এবং এ প্রোপার্টিগুলোকে সিটির ট্যাক্স রোলের মধ্যে আনছে। সাংবাদিক এমা লিখেন যে, সাউথ এশিয়ার বাংলাদেশীরা নিউইয়র্ক থেকে বিগত ১০ বছর বা তার চেয়েও আগে বাফেলোতে আসলেও গত তিন বছর যাবত বাফেলোতে এরা মুভ করছেন দলে দলে। বাফেলোতে বাংলাদেশী পরিবারগুলোর বসতিস্থাপনের সংখ্যা বর্তমানে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সেনসার ব্যুরোর পরিসংখ্যানে বাংলাদেশী পরিবারের সংখ্যা ৩১৬ উল্লেখ করা হলেও মূলত: এর সংখ্যা অনেক বেশী। শুধুমাত্র লিবার্টি ইয়েলো ক্যাবের সাথেই সম্পৃক্ত রয়েছে ৩৬৭ বাংলাদেশী ড্রাইভার। একজন বাংলাদেশী কমিউনিটি লিডার বর্তমানে বাংলাদেশী পরিবারের সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজার বলে উল্লেখ করেন।
এমা তার রিপোর্টে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশী পরিবারগুলোর সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, বাফেলো শহরে বাংলাদেশীদের উপস্থিতির কারণে শহরের ইস্ট সাইড নেইবারহুডের চেহারা বদলে গেছে। প্রোপার্টির ভ্যালু বেড়ে গেছে। বাড়িগুলোর মালিকানা নিচ্ছে বাংলাদেশীরা। নিজেদের বসতির ফলে এলাকার সন্ত্রাস উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। রিটেইল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধন হচ্ছে। ভাঙ্গা বাড়িগুলো ডেমোলিশ করা হচ্ছে, ফলে সিটির জমির মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
সেনচুরি ২১ গোল্ড স্টেন্ডার্ড-এর সেলসপার্সন ম্যাট লেপোভিচ বলেন- ‘আমার কেরিয়ারে এবারই প্রথম দেখছি যে, কোন ইনভেস্টমেন্ট প্রোপার্টিতে মালিকরা নিজেরাই থাকতে আগ্রহী এবং থাকছেন’। বাংলাদেশীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইস্ট সাইডের অত্র এলাকার বাড়িগুলোতে কোন কমিউনিটির ইনভেস্টররা নিজেরা সেখানে বসবাস করছেন এবং বাড়িগুলো মেনটেইন করছেন- বিষয়টি আসলেই আনন্দের।’ সস্তা বাড়িগুলোর মালিকানা পেয়ে বাংলাদেশীরা গর্বিত।
মডেস্ট রিয়েল এস্টেটের জোসেফিন বলেন- ‘বাংলাদেশীরা নিউইয়র্ক সিটি থেকে মুভ করে বাফেলো সিটির জাংক, সস্তা বাড়িগুলো কিনছেন সাচ্ছন্দে, কেননা নিউইয়র্ক সিটির বাড়ি ভাড়া আকাশচুম্বি; তাছাড়া নিউইয়র্কে বাড়ির মালিক হওয়া অনেক ব্যয়বহুল। তাই বাংলাদেশীরা এখানকার সস্তা বাড়িগুলো কিনে তা মেরামত করছেন সাচ্ছন্দে। এমনকি বাংলাদেশীরা খালি জমিগুলো কেনার প্রতিও আগ্রহী। তারা সেখানে চাষাবাদ করছেন এবং নিজেদের আঙ্গিনায়ও তরিতরকারীর বাগান করছেন’।
এমা তার রিপোর্টে বলেন- সরকারী এজেন্সীগুলো বাফেলোকে নতুন জীবন দিতে কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিলেও বাংলাদেশীরা নিজেদের রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা নিয়ে বাফেলোতে তাদের নতুন জীবন শুরু করেছেন। মডেস্ট-নিভেস বলেন, ‘বাংলাদেশীরা বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাফেলোতে এসেছে, তাই তারা এখানে ব্যতিক্রম তৈরি করবে’।
নিউইয়র্কের ব্রুকলীন থেকে ২০০৮ সালে বাফেলোতে মুভ করেছেন মিরাজ দেওয়ান। বর্তমানে আপার ইস্ট সাইডে তার রয়েছে ১০টি রেন্যুভেটেড বাড়ি। তিনি তার মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘বাফেলোর মত বেটার লাইফ নিউইয়র্কে অনেকেরই নেই’।
নিউইয়র্ক থেকে ২০১৩ সালে মুভ করে আসা জনাব মুজিব রহমান তার কুইন্সের দুটি বাড়ি বিক্রি করে দেন এবং পাঁচ সন্তানসহ বাফেলোতে বসতি গড়েন। তিনি নিউইয়র্কের জীবন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নিউইয়র্কের জীবন ছিল খুবই স্ট্রেসফুল এবং আমি কখনো পরিবারকে সময় দিতে পারতাম না।’
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটি লিডার নুরুন্নবী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে নিউইয়র্কের স্বপ্ন বাফেলোতে এসে পূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। নিউইয়র্কের বাংলাদেশীরা সাফল্যের আশায়, সুযোগের সন্ধানে সবসময় নিউইয়র্ক থেকে যেকোন স্থানে বেরিয়ে যেতে চায়। বাস্তবে বাফেলো তেমনি একটি জায়গা, যেখানে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়।’
নাজমুল ভুইয়া ব্রঙ্কসে ট্যাক্সি ডাইভিং পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দশ বছর পূর্বে বাফেলোতে আসেন। এক বন্ধুর কাছে বাফেলো সিটির ট্যাক্স ফরক্লোজার অকশন সম্পর্কে জেনে আগ্রহী হন এ শহরে আসতে। দুই সন্তানের জনক নাজমুল বলেন, ‘আমি বাফেলোকে মনে করেছিলাম এটি একটি কান্ট্রি এরিয়া। যেখানে গাছ-গাছালি থাকবে, ঘর বাড়িগুলো হবে অনেক দূরে দূরে’। দশ বছর পূর্বে তার এক বন্ধু তাকে জানান যে, অকশনে হাজার ডলারে বাড়ি কেনা যায়। এমন কথা শুনে নাজমুল ভুইয়া সাথে সাথে বাফেলো আসেন এবং অকশন থেকে ওল্টজ এভিনিউতে মাত্র ৪৫০০ ডলারে একটি ডুপলেক্স বাড়ি কিনেন। কিন্তু তিনি বাড়ির কাছে গিয়ে দেখেন নেইবারহুডের অবস্থা খুব খারাপ। তাঁর প্রথম দর্শনে ব্রডওয়ে-ফিলমোর এলাকা ছিল থমথমে এবং অত্র এলাকার সব ঘর-বাড়িগুলো ছিলো ভাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘আজো বিশ্বাস করতে পারিনা যে অত্র এলাকায় এত পরিবর্তন হয়েছে। আমার স্বপ্ন সত্যিই বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন। আমি নিউইয়র্কে গিয়ে আমার সকল বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনকে বাফেলো সম্পর্কে জানিয়েছি।’
জনাব ভুইয়া প্রতি বছর অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক শহরে গিয়ে ডজনস অফ পরিবারকে অকশনে নিয়ে আসেন, এবং বাফেলোতে তাদের নতুন জীবন শুরু করতে সহায়তা করেন। তিনি বলেন, অকশনের সময় আমার বাসা ২০-৩০ জন মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। ২০০-এর অধিক পরিবার নাজমুল ভুইয়ার দ্বারা বাফেলোতে বসতি স্থাপন করেছেন বলেন জানান তিনি।
এছাড়াও রিয়েল এস্টেট এজেন্সীদের দ্বারা অনেক বাংলাদেশী বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিনছেন। এমনকি ইস্ট সাইডের বাড়ির মালিকদের দরজায় কাড়া নেড়ে তাদের বাড়িগুলো ক্যাশ পয়সায় কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছে বাংলাদেশীরা।
২৭ অক্টোবর ‘বাফেলো নায়াগ্রা কনভেনশন সেন্টারে’ অকশন চলাকালে এই প্রতিবেদকের মুখোমুখী হন সাংবাদিক এমা সেপং। তিনি বাংলাদেশীদের সম্পর্কে আমার কাছ থেকে জানতে চান। বাফেলোতে কেমন সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে? এই অকশনে তাদের অংশগ্রহণের সংখ্যাইবা কত? ইত্যাদি প্রশ্নের যে উত্তর আমি দিয়েছি তা তিনি এভাবে লিখেছেন- “Look around, the Bengalis are many,” said Niaz Makhdum, a Bengali-language newspaper (Bangla Patrika) Executive-Editor, as he took in the record crowd that converged at the Buffalo Niagara Convention Center on Oct. 27 for the first day of the 2015 auction. “There are hundreds of Bengalis here from New York City who are looking for a home and better life in Buffalo.”
সেপং লিখেন- বেলি এভিনিউ’র একটি ডুপলেক্স বাড়ির জন্য ২০জন বিডার হাত তুলেন। বিড প্রতিযোগিতায় বেলি এভিনিউ একটি বাড়ি জয় করে শেখ জাফর বলেন- ‘আমি আনন্দিত এজন্যে যে, একটি ভাল বাড়ি, ভাল ডিলে ক্রয় করতে পেরেছি।’ তিনি এ বাড়িটি ৪২ হাজার ডলারে বিড করেছেন, মাত্র পাঁচ বছর পূর্বে ঐ এলাকার বাড়ির মূল্য ছিল ৩,৪৫০ ডলার।
এমনি ভাবে যে এলাকাতে বাংলাদেশীরা বাড়ি কেনা শুরু করেছে সেখানে প্রোপার্টিগুলোর দাম বেড়ে গেছে। ২০০৯ সালে অকশনে বিক্রির প্রোপার্টির সংখ্যা ছিল ৮২৬ যার দ্বারা সিটি আয় করেছিল ৪.৬ মিলিয়ন ডলার। মাত্র পাঁচ বছর পরে একই অকশনে ৮০৮ প্রোপার্টি বিক্রির বিনিময়ে সিটি উপার্জন করেছে ৯.২ মিলিয়ন ডলার।
পুরনো বাড়ি ফিক্সড করার প্রসঙ্গে রিপোর্টে সেপং মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন, সোহেল ভুইয়া, উদ্দিনের নাম উল্লেখ করেন। বাংলাদেশীরা নিজেদের কায়িক পরিশ্রমে, নিজেদের সঞ্চিত অর্থ, বাংলাদেশ থেকে আনা অর্থের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে এ সকল প্রপোর্টিগুলোকে কিভাবে বাসোপযোগী করছেন তার বর্ণনা দেন।
মসজিদ সম্পর্কে সেপং তার রিপোর্টে সর্বমোট ১৪ মসজিদের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সোবিস্কি স্ট্রীটের মসজিদ জাকারিয়া, ওয়ালডেন এভিনিউর বাফেলো ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, জেনেসি স্ট্রীটের মসজিদ জামি, পার্কার এভিনিউতে মসজিদ আত্-তাকওয়ার নাম উল্লেখ করেন যেখানে অধিকসংখ্যক বাংলাদেশী মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে যায়।
নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এমা লিখেন- বাংলাদেশীরা বাড়ি কেনা এবং রিপেয়ার করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে বাফেলোতে। হালাল মার্কেট, রেস্টুরেন্টে, ড্রাইভিং স্কুল, বারবার সপ খুলছে বাংলাদেশীরা যাদের অধিকাংশই নবাগত।
একাউন্টেন্ট আতিকুর রহমান বাংলাদেশীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলিষ্ঠতার সাথে বলেন, “This is nothing, we’re just getting started,” তিনি সম্প্রতি ব্রডওয়ের কাছে একটি হার্ডওয়্যার স্টোর উদ্বোধন করেন। জনাব রহমান বাংলাদেশীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একাউন্টিং বিষয়াদির ক্ষেত্রেও সহায়তা করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশীদের ২০টি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে এবং আগামী বছরের মধ্যে আরো প্রায় ৩০ বিজনেস ওপেনিং হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, “Give us five years, Broadway-Fillmore and the East Side won’t be the same.”
ব্রডওয়ের উপরে মদিনা ফার্মেসী গত কয়েক সপ্তাহ পূর্বে উদ্বোধন হয় যার মালিকগণ বাংলাদেশী। সিটির ওয়েস্ট সাইডে অতি সম্প্রতি শুভ উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘লেস প্রাইস গ্রোসারী, হালাল মিট এন্ড ভেরাইটি’ নামে একটি গ্রোসারী স্টোর। চারজন বাংলাদেশী মিলে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন, যার পরিচালনায় রয়েছেন মোহাম্মদ জি. নবী এবং মঞ্জুরুল ইসলাম। জনাব মোহাম্মদ নবী বলেন, বাফেলো সিটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওপেন করার জন্য এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় শহর। তিনি বলেন, আমি নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি; তুলনা করলে নির্দিধায় বলা যায় যে, নিউইয়র্কের চেয়ে অনেক সহজে ব্যবসা ওয়েন করা এবং মার্কেট তৈরি করা বাফেলোতেই সম্ভব।
ইতিপূর্বে ওয়েস্টসাইড এলাকায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী একত্রিত হয়ে এক বিরাট সুপার বাজার উদ্বোধন করেন। সিটির মেইন স্ট্রিমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশী মালিকানাধীন ঐ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত হন। তাদের মন্তব্য ছিল- ‘বাফেলোকে বাংলাদেশীরাই পরিবর্তন করে ছাড়বে’। বাংলাদেশী মালিকানাধীন ঐ প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ইউনাইটেড সুপার বাজার’। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় রয়েছেন- আল-আমিন লিপু, নাসির উদ্দিন সহ অন্যানরা। বাংলাদেশীদের এই ব্যবসায়িক গ্রুপটি ২০১১ সালে ‘ইউনাইটেড গ্রোসারী’ নামে ওয়েস্ট সাইডে আরো একটি গ্রোসারী চালু করেন। এটিই ওয়েস্ট সাইড এলাকায় প্রথম বাংলাদেশী গ্রোসরী।
এমা তার রিপোর্টে বলেন, জনাব উদ্দীন এবং তার পার্টনারগণ মিলে ব্রডওয়ের উপরে একটি বড় কমার্শিয়াল বিল্ডিং কিনেছেন। আগামী বছর তিনটি রিটেল বিজনেস ওপেন হবে বলে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশী উদ্দীন বলেন, বাফেলো আবার গ্রেট সিটিতে রূপান্তরিত হবে এবং আমরা এর অংশীদার হতে চাই।
এমা সেপং তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, বাফেলো সিটির যে সব এলাকায় বাংলাদেশীরা বসতি স্থাপন করেছে বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সিটির সেসকল স্থানে শতকরা ৩০ ভাগ সন্ত্রাস (ক্রাইম) কমে গেছে। এমনকি কোন কোন স্থানে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী ৭০ ভাগ পর্যন্ত সন্ত্রাস (ক্রাইম) কমে গেছে বাংলাদেশীদের কারণে। লোয়েপার স্ট্রীট যেখানে ৮০টি বাড়ি বাংলাদেশীদের মালিকানায় রয়েছে। ঐ এলাকায় ৬৪%, গিবসন স্ট্রীটে কমেছে ৮৩%, উল্টজ এভিনিউতে ৭০%, রোডনি এভিনিউতে ৬৮% ক্রিমিনাল একটিভিটিস কমে গেছে বাংলাদেশীদের পদচারণায়।
নীরবে বাংলাদেশীরা বাফেলোর সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে বলে উল্লেখ করেন এমা সেপং। শুধু বিধ্বস্ত বাড়ি ঘর মেরামতের মাধ্যমে নিজেদের আবাস্থল তৈরি করাই নয় বাংলাদেশী ইয়াংস্টাররা ভালো ভালো স্কুলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে নীরবে। বাফেলো স্কুল ডিস্ট্রেক্ট-এ বাংলা ভাষা বর্তমানে সপ্তম মোস্ট স্পোকেন ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশীরা কর্মক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে বলে এমা তার রিপোর্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাফেলো সিটির লিবার্টি ইয়েলো ট্যাক্সী কোম্পানী ৭৫টি গাড়ি নিয়ে তাদের ফ্লিট শুরু করলেও বাংলাদেশীদের কারণে গত ৫ বছরে এ কোম্পানীর গাড়ির সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ৪০০ হলেছে; বললেন, কোম্পানীর মালিক জনাব বিল। বর্তমানে ৯১% লিবার্টি ক্যাবের মালিক/অপারেটর বাংলাদেশীরা। কিছু কিছু বাংলাদেশী বাফেলোতে সুবিধাজনক জব না পাওয়ার কারণে নিউইয়র্কে গিয়েও পূর্বের ট্যাক্সি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন বলে রিপোর্টে এমা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশীরা পরিশ্রমি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সিটিকে ট্যাক্স পে করে সুন্দর-উন্নত সিটি হিসেবে বাফেলোকে গড়তে চায়, তাই জব দেয়া, জবের জন্যে ট্রেনিং দেয়া ইত্যাদি ব্যাপারে সিটিও যেন বাংলাদেশীদের দিকে দৃষ্টি দেয় এমন অনুরোধ জানান বাংলাদেশীরা।
সাংবাদিক এমা বাফেলোর নাটকীয় পরিবর্তনে বাংলাদেশীদের ভূমিকা নিয়ে রিপোর্টের শেষ প্রান্তে এসে খন্দকার করিম, সেলিম খান, শেখ রহমান এবং মিসবাহ আবদীনের কথা উল্লেখ করেন। মিসবাহ আবদীন বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইয়ূথ সার্ভিস সেন্টারের কো-ফাউন্ডার এবং সিইও। তিনি বলেন, বাফেলোতে বর্তমানে বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেক বড় এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশীরা শুধু নিউইয়র্ক থেকেই নয়, ডেট্রয়েট, পেনসিলভেনিয়া এবং নিউজার্সী থেকেও বাফেলোতে মুভ করছে।
এমা সেপং তার রিপোর্ট বাফেলোর বাসিন্দা শেখ রহমানের উক্তি দিয়ে শেষ করেন- “We’re so happy in Buffalo. We love Buffalo, It’s a better life. It’s easier.” (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)