নিউইয়র্ক ১১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফ্লোরিডায় দৃষ্টিনন্দন, সফল ফোবানা সম্মেলন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৯:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭
  • / ৭৬৯ বার পঠিত

ফ্লোরিডা: ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানকে সামনে  রেখে ঐতিহাসিক ফোবানা সম্মেলন উপহার দিলো ফ্লোরিডা অর্থাৎ সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা। যুক্তরাষ্ট্রের সূর্যোদয়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হলো ৩১তম ফোবানা সম্মেলন। গত ৬, ৭ ও ৮ অক্টোবর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার মায়ামী শহরের বিলাশ বহুল হায়াত রিজেন্সী হোটেলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেনন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়াও সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মায়ামী সিটির মেয়র টমাস পেড্রো রিগাল্ডো ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী’র সম্পাদক এম এ মালেক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের চেয়ারম্যান এবং চলচ্চিত্র ও নাট্যকার নাসির উদ্দিন ইউসূফ, ঢাকার ম্যাক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সম্মেলনের সাংস্কৃতিক পর্বে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, ফকির আলমগীর, অ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, তাহসানস সহ দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ইতিপুর্বে ১৯৯৬, ২০০৫ এবং ২০১২ সালে ফ্লোরিডায় ফোবানার সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এবার চতুর্থবারের মতো ফ্লোরিডায় ফোবানা সম্মেলন হলো। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের সম্মেলন সবদিক থেকেই ছিলো দৃষ্টিনন্দন, সফল সম্মেলন। যা ফোবানা’র ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফোবানা ৩১ তম সম্মেলনের কনভেনর এম রহমান জহির জানান, ফ্লোরিডায় ৩১তম ফোবানা সম্মেলন সফল করায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেে বলেন, এবারের ফোবানা সম্মেলন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল সম্মেলন হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
ফোবানা কমিটির সদস্য সচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ বলেন, ফোবানা সম্মেলন সফল করতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন কমিটির রাত-দিন পরিশ্রম করে উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সহযোগিতায় সম্মেলনটি সফল করেছেন। এই কৃতিত্ব সকল বাংলাদেশীর। তিনি বলেন, এবারের ফোবানা সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান সকলের বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকানদের সংগঠন ফোবানার সম্মেলন শুরু হয়। শুক্রবার হোটেল হায়াতে এক আলোক ঝলমলে পরিবেশের বিপুল দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
স্থানীয় শিশুকিশোরদের সমবেত কন্ঠে বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের  জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানের এবারের ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব। এরপর নিউইয়র্ক প্রবাসী শিল্পীদম্পতি রায়ান তাজ ও প্রমি পরিবেশন করেন ‘স্বাগতম ফোবানা’ শিরোনামে সূচনা সঙ্গীত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ফোবানা প্রবাসীদের মিলন মেলা। প্রবাসীরা দেশের জন্য যে অবদান রাখছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ ২০২১ ও ২০৪১-এর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
এই পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ আজ এক অনন্য অবস্থানে স্থান পেয়েছে বিশ্বে। প্রবাসীরা বাংলাদেশকে অনেক ওপরে উঠতে সহযোগিতা করছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটি পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন প্রবাসীরা। নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের নিকট অনুরোধ, আপনি সব ভাষা শিখুন, কিন্তু বাংলাটা যেন অবহেলা না পায়।
উদ্বোধনী পর্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনিস আহমদ, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফোবানার ১১ জন সাবেক চেয়ারম্যানের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়৤ এসময় অসম্ভব গোছালো ও সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দর্শক ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এই সময় উপস্থিত ছিলেন ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের ফোবানার চেয়ারম্যান আজাদুল হক, সভাপতি মোহাম্মদ এমরান, আহ্বায়ক এম রহমান জহির, সদস্যসচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ, নির্বাহী সম্পাদক এম মওলা দিলু, প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যান এবিএম গোলাম মোস্তফা, উৎসব ডটকমের কর্ণধার রায়হান জামান সহ অন্যরা।
সম্মেলনের মাঝে সকল অতিথিদেরকে ফোবানার উত্তরীয় পড়িয়ে দেন ফোবানার হোস্ট কমিটির প্রধান সমন্বয়কারি আতিকুর রহমান। বক্তাদের মুখে বারবার দেশের বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট ও সাম্প্রতিককালে ফ্লোরিডার ভয়াবহ টর্ণেডো ইরমা’র কথা উঠে আসে। বক্তরা বলেন, গত এক বছর আগের ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের জন্য ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ যে শ্লোগান নির্ধারন করা হয়েছিল তা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটা এবারের ফোবানার জন্য একটি বড় সার্থকতা।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব মানবতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আটলান্টা, জর্জিয়া, টেক্সাস, শিকাগো, মিশিগান, অরল্যান্ডো, কানেকটিকাট, নিউইয়র্কসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রবাসীরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
ফোবানা সম্মেলনে অবিন্তাকে স্মরণ: ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরকে স্মরণ করা হলো ফোবানা সম্মেলনে। সম্মেলন উদ্বোধনের পরপরই মূলমঞ্চে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরকে স্মরণে প্রথমে ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। অবিন্তা কবিরের অসমাপ্ত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে গঠিত ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের’ কার্যক্রম বর্ণনা করা হয়। অনুষ্ঠানে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘অবিন্তা নেই, কিন্তু এই ফাউন্ডেশনের নানা কাজের মধ্য দিয়ে তার উপস্থিতি থাকবে। অবিন্তা বিশ্বাস করত, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে তার জন্ম। তরুণ বয়সেই অবিন্তা স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে, বিশেষ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য, নারীদের জন্য কাজ করতে।’
রুবা আহমেদ বলেন, অবিন্তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন। গত এক বছরে এই ফাউন্ডেশন সাতটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছে, গাছ লাগানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সাইবার সেন্টার ও আর্কাইভ করা হয়েছে। তিনি জানান, অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাবৃত্তির ব্যবস্থা করবে। তিনি আরও বলেন, অবিন্তা তাঁর আত্মার সঙ্গী। অবিন্তাকে নিয়ে তিনি গর্বিত। এ সময় তিনি অবিন্তার সঙ্গে জঙ্গি হামলায় নিহত তাঁর বন্ধু ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও তারিশি জৈনকে স্মরণ করেন।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিনব্যাপী চলে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, সাহিত্য আলোচনা, আড্ডা প্রভৃতি।
ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ: ফোবানা সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প শোনালেন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ৭ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ৩১তম ফোবানা সম্মেলনস্থল মায়ামী হায়াত রিজেন্সী হোটেলে সম্মেলন কমিটি আয়োজিত ‘বিলিভ ইন বাংলাদেশ ইনভেষ্ট ইন বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, কিনোট স্পীকার ছিলেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এছাড়াও উপস্থিত ও বক্তব্য রাখেন কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালিপ্রদীপ দাস, কনর একিউজিশনের সিইও মাইক পাটেল, এনএইচসিজি গ্রুপের সিনিয়র এসোসিয়েট উইলিয়াম হ্যামিলটন, জিআরপি ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার রিক পাটেল, আলফা কন্সটাকসনের সিইও মাইক সারোনা, উৎসব গ্রুপের সিইও রায়হান জামান সহ ফোবানা স্বাগতিক কমিটি ও সেন্ট্রাল কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ আরো অনেকে।
মধ্যাহ্নভোজে আমেরিকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিশ^ আজ অবাক বিষ্ময়ে বাংলাদেশের সাফল্য দেখছে। বাংলাদেশের এই সাফল্য লাভ করবে কেউ কোনদিন ভাবতে পারেনি। এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসাবে উল্লেখ করা হত। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ তার আতœমর্যাদা নিয়ে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশে^র নিরাপদ একটি স্থান হিসাবে পরিনত হয়েছে। অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৬০০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে ধরে রেখেছে, রফতানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা ৮ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমতুল্য), খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে পনিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নিরাপদ ব্যবসার স্থান। বাংলাদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টায় শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য পূরণে আমি আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা নেতৃবৃন্দকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই আমরা কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনতে পারব।’
বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের দেয়া সুবিধাদির প্রসঙ্গে বলেন, আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদান, ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, রয়্যালটির রেমিটেন্স, শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি, লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুবিধাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৯২টি দেশে রফতানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, গার্টেনারের মতে- সফটওয়্যার ও আইটি সার্ভিসের জন্য বিশ্বের ৩০টি শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের তৈরি হাজারো সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এখন আইফোন, স্যামসাং গ্যালাক্সি এবং ব্ল্যাকবেরি ফোনে ব্যবহূত হচ্ছে। গত বছর আমাদের আইটি কোম্পানিগুলো এবং ফ্রিল্যান্স আইটি পেশাজীবীরা ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন। প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট এই খাতে যোগ দিচ্ছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্মাতারা বিশ্বমানের হালকা ও মাঝারি সামুদ্রিক জাহাজ নির্মাণ করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই শিল্পের ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজারের ১ শতাংশ শেয়ার এখন বাংলাদেশের দখলে। ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ‘সেকেন্ড হোম’ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিশন ২০৩০’র মধ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মধ্যাহ্নভোজে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন সহ অন্যান্যদের মাঝে অ্যাওয়ার্ডপ্রদান করেন প্রধান অতিথি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া মধ্যাহ্নভোজে ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ নামে একটি ম্যাগাজিন এবং সম্মেলন উপলক্ষে ‘চেতনায় শাণিত বাংলা’ নামে বিশেষ সাময়িকী প্রকাশ করা হয়। সম্পূর্ণ রঙিন এই সাময়িকীর সম্পাদনায় ছিলেন রফিকুল হক।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটি ২০১৭-১৮: আতিক চেয়ারম্যান হালিম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি, ড্রামা সার্কেল ৩৩তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন
ফোবানার নতুন কমিটি: ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) ২০১৭-১৮ সালের মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হয়েছে ফ্লোরিডার অত্যন্ত পরিচিত মুখ সফল ব্যবসায়ী সাংস্কৃতিক কর্মী আতিকুর রহমান আতিক। ৮ অক্টোবর ফ্লোরিডার মায়ামী শহরের হায়াত রিজেন্সী হোটেলে ফোবান এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে ছিলেন ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আজাদুল হক। সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসাবে ছিলেন ফোবানা ভেটারান মাহবুব রেজা রহিম ও একে এম আযাদ।
নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হন শাহ মোহাম্মদ হালিম এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে বিজয় লাভ করেন জাকারিয়া চৌধুরী। এছাড়া ভোটাভুটির মাধ্যমে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয় লাভ করেন মোহাম্মদ আলমগীর এবং ট্রেজারার পদে মাসুদ রব চৌধুরী।
এছাড়া পদাধীকার বলে ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আজাদুল হক, প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি এম মাওলা দিল, ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের কনভেনার এম রহমান জহির, সদস্য সচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ, নিউইয়র্কের বেদারুল ইসলাম বাবলা, ক্যানসাসের রেহান রেজা এবং নিউজার্সীর নাহিদ চৌধুরী মামুন এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসাবে বিজয়ী হন।
২০১৯ সালের সম্মেলনের হোস্ট ড্রামা সার্কেল: এদিকে একই দিন বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় আগামী ২০১৯ সালে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন আয়োজন করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে নিউইয়র্কের ড্রামা সার্কেল। প্রবাসের অত্যন্ত পরিচিত মুখ নার্গিস আহমেদ এবং জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব আবির আলমগীর তত্বাবাধানে আগামী ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে ড্রামা সার্কেলের আয়োজনে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৩৩তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন হবার গৌরব অর্জন করে ড্রামা সার্কেল কর্মকর্তা নার্গিস আহমেদ ও আবীর আলমগীর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনে অংশগ্রহন করার জন্য উপস্থিত সবাইকে সাদর আমন্ত্রন জানান। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

ফ্লোরিডায় দৃষ্টিনন্দন, সফল ফোবানা সম্মেলন

প্রকাশের সময় : ০১:০৯:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

ফ্লোরিডা: ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানকে সামনে  রেখে ঐতিহাসিক ফোবানা সম্মেলন উপহার দিলো ফ্লোরিডা অর্থাৎ সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা। যুক্তরাষ্ট্রের সূর্যোদয়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হলো ৩১তম ফোবানা সম্মেলন। গত ৬, ৭ ও ৮ অক্টোবর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার মায়ামী শহরের বিলাশ বহুল হায়াত রিজেন্সী হোটেলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেনন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়াও সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মায়ামী সিটির মেয়র টমাস পেড্রো রিগাল্ডো ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী’র সম্পাদক এম এ মালেক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের চেয়ারম্যান এবং চলচ্চিত্র ও নাট্যকার নাসির উদ্দিন ইউসূফ, ঢাকার ম্যাক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সম্মেলনের সাংস্কৃতিক পর্বে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, ফকির আলমগীর, অ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, তাহসানস সহ দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ইতিপুর্বে ১৯৯৬, ২০০৫ এবং ২০১২ সালে ফ্লোরিডায় ফোবানার সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এবার চতুর্থবারের মতো ফ্লোরিডায় ফোবানা সম্মেলন হলো। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের সম্মেলন সবদিক থেকেই ছিলো দৃষ্টিনন্দন, সফল সম্মেলন। যা ফোবানা’র ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফোবানা ৩১ তম সম্মেলনের কনভেনর এম রহমান জহির জানান, ফ্লোরিডায় ৩১তম ফোবানা সম্মেলন সফল করায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেে বলেন, এবারের ফোবানা সম্মেলন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল সম্মেলন হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
ফোবানা কমিটির সদস্য সচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ বলেন, ফোবানা সম্মেলন সফল করতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন কমিটির রাত-দিন পরিশ্রম করে উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সহযোগিতায় সম্মেলনটি সফল করেছেন। এই কৃতিত্ব সকল বাংলাদেশীর। তিনি বলেন, এবারের ফোবানা সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান সকলের বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকানদের সংগঠন ফোবানার সম্মেলন শুরু হয়। শুক্রবার হোটেল হায়াতে এক আলোক ঝলমলে পরিবেশের বিপুল দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
স্থানীয় শিশুকিশোরদের সমবেত কন্ঠে বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের  জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ শ্লোগানের এবারের ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব। এরপর নিউইয়র্ক প্রবাসী শিল্পীদম্পতি রায়ান তাজ ও প্রমি পরিবেশন করেন ‘স্বাগতম ফোবানা’ শিরোনামে সূচনা সঙ্গীত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ফোবানা প্রবাসীদের মিলন মেলা। প্রবাসীরা দেশের জন্য যে অবদান রাখছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ ২০২১ ও ২০৪১-এর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
এই পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ আজ এক অনন্য অবস্থানে স্থান পেয়েছে বিশ্বে। প্রবাসীরা বাংলাদেশকে অনেক ওপরে উঠতে সহযোগিতা করছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটি পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন প্রবাসীরা। নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের নিকট অনুরোধ, আপনি সব ভাষা শিখুন, কিন্তু বাংলাটা যেন অবহেলা না পায়।
উদ্বোধনী পর্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনিস আহমদ, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফোবানার ১১ জন সাবেক চেয়ারম্যানের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়৤ এসময় অসম্ভব গোছালো ও সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দর্শক ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এই সময় উপস্থিত ছিলেন ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের ফোবানার চেয়ারম্যান আজাদুল হক, সভাপতি মোহাম্মদ এমরান, আহ্বায়ক এম রহমান জহির, সদস্যসচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ, নির্বাহী সম্পাদক এম মওলা দিলু, প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যান এবিএম গোলাম মোস্তফা, উৎসব ডটকমের কর্ণধার রায়হান জামান সহ অন্যরা।
সম্মেলনের মাঝে সকল অতিথিদেরকে ফোবানার উত্তরীয় পড়িয়ে দেন ফোবানার হোস্ট কমিটির প্রধান সমন্বয়কারি আতিকুর রহমান। বক্তাদের মুখে বারবার দেশের বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট ও সাম্প্রতিককালে ফ্লোরিডার ভয়াবহ টর্ণেডো ইরমা’র কথা উঠে আসে। বক্তরা বলেন, গত এক বছর আগের ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের জন্য ‘মানবতার জন্য ঐক্য’ যে শ্লোগান নির্ধারন করা হয়েছিল তা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটা এবারের ফোবানার জন্য একটি বড় সার্থকতা।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব মানবতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আটলান্টা, জর্জিয়া, টেক্সাস, শিকাগো, মিশিগান, অরল্যান্ডো, কানেকটিকাট, নিউইয়র্কসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রবাসীরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
ফোবানা সম্মেলনে অবিন্তাকে স্মরণ: ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরকে স্মরণ করা হলো ফোবানা সম্মেলনে। সম্মেলন উদ্বোধনের পরপরই মূলমঞ্চে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরকে স্মরণে প্রথমে ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। অবিন্তা কবিরের অসমাপ্ত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে গঠিত ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের’ কার্যক্রম বর্ণনা করা হয়। অনুষ্ঠানে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘অবিন্তা নেই, কিন্তু এই ফাউন্ডেশনের নানা কাজের মধ্য দিয়ে তার উপস্থিতি থাকবে। অবিন্তা বিশ্বাস করত, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে তার জন্ম। তরুণ বয়সেই অবিন্তা স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে, বিশেষ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য, নারীদের জন্য কাজ করতে।’
রুবা আহমেদ বলেন, অবিন্তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন। গত এক বছরে এই ফাউন্ডেশন সাতটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছে, গাছ লাগানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সাইবার সেন্টার ও আর্কাইভ করা হয়েছে। তিনি জানান, অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাবৃত্তির ব্যবস্থা করবে। তিনি আরও বলেন, অবিন্তা তাঁর আত্মার সঙ্গী। অবিন্তাকে নিয়ে তিনি গর্বিত। এ সময় তিনি অবিন্তার সঙ্গে জঙ্গি হামলায় নিহত তাঁর বন্ধু ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও তারিশি জৈনকে স্মরণ করেন।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিনব্যাপী চলে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, সাহিত্য আলোচনা, আড্ডা প্রভৃতি।
ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ: ফোবানা সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প শোনালেন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ৭ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ৩১তম ফোবানা সম্মেলনস্থল মায়ামী হায়াত রিজেন্সী হোটেলে সম্মেলন কমিটি আয়োজিত ‘বিলিভ ইন বাংলাদেশ ইনভেষ্ট ইন বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, কিনোট স্পীকার ছিলেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এছাড়াও উপস্থিত ও বক্তব্য রাখেন কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালিপ্রদীপ দাস, কনর একিউজিশনের সিইও মাইক পাটেল, এনএইচসিজি গ্রুপের সিনিয়র এসোসিয়েট উইলিয়াম হ্যামিলটন, জিআরপি ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার রিক পাটেল, আলফা কন্সটাকসনের সিইও মাইক সারোনা, উৎসব গ্রুপের সিইও রায়হান জামান সহ ফোবানা স্বাগতিক কমিটি ও সেন্ট্রাল কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ আরো অনেকে।
মধ্যাহ্নভোজে আমেরিকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিশ^ আজ অবাক বিষ্ময়ে বাংলাদেশের সাফল্য দেখছে। বাংলাদেশের এই সাফল্য লাভ করবে কেউ কোনদিন ভাবতে পারেনি। এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসাবে উল্লেখ করা হত। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ তার আতœমর্যাদা নিয়ে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশে^র নিরাপদ একটি স্থান হিসাবে পরিনত হয়েছে। অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৬০০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে ধরে রেখেছে, রফতানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা ৮ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমতুল্য), খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে পনিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নিরাপদ ব্যবসার স্থান। বাংলাদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টায় শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য পূরণে আমি আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা নেতৃবৃন্দকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই আমরা কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনতে পারব।’
বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের দেয়া সুবিধাদির প্রসঙ্গে বলেন, আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদান, ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, রয়্যালটির রেমিটেন্স, শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি, লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুবিধাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৯২টি দেশে রফতানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, গার্টেনারের মতে- সফটওয়্যার ও আইটি সার্ভিসের জন্য বিশ্বের ৩০টি শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের তৈরি হাজারো সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এখন আইফোন, স্যামসাং গ্যালাক্সি এবং ব্ল্যাকবেরি ফোনে ব্যবহূত হচ্ছে। গত বছর আমাদের আইটি কোম্পানিগুলো এবং ফ্রিল্যান্স আইটি পেশাজীবীরা ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন। প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট এই খাতে যোগ দিচ্ছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্মাতারা বিশ্বমানের হালকা ও মাঝারি সামুদ্রিক জাহাজ নির্মাণ করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই শিল্পের ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজারের ১ শতাংশ শেয়ার এখন বাংলাদেশের দখলে। ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ‘সেকেন্ড হোম’ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিশন ২০৩০’র মধ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মধ্যাহ্নভোজে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন সহ অন্যান্যদের মাঝে অ্যাওয়ার্ডপ্রদান করেন প্রধান অতিথি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া মধ্যাহ্নভোজে ফোবানা বিজনেস পাওয়ার লাঞ্চ নামে একটি ম্যাগাজিন এবং সম্মেলন উপলক্ষে ‘চেতনায় শাণিত বাংলা’ নামে বিশেষ সাময়িকী প্রকাশ করা হয়। সম্পূর্ণ রঙিন এই সাময়িকীর সম্পাদনায় ছিলেন রফিকুল হক।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটি ২০১৭-১৮: আতিক চেয়ারম্যান হালিম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি, ড্রামা সার্কেল ৩৩তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন
ফোবানার নতুন কমিটি: ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) ২০১৭-১৮ সালের মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হয়েছে ফ্লোরিডার অত্যন্ত পরিচিত মুখ সফল ব্যবসায়ী সাংস্কৃতিক কর্মী আতিকুর রহমান আতিক। ৮ অক্টোবর ফ্লোরিডার মায়ামী শহরের হায়াত রিজেন্সী হোটেলে ফোবান এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে ছিলেন ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আজাদুল হক। সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসাবে ছিলেন ফোবানা ভেটারান মাহবুব রেজা রহিম ও একে এম আযাদ।
নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হন শাহ মোহাম্মদ হালিম এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে বিজয় লাভ করেন জাকারিয়া চৌধুরী। এছাড়া ভোটাভুটির মাধ্যমে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয় লাভ করেন মোহাম্মদ আলমগীর এবং ট্রেজারার পদে মাসুদ রব চৌধুরী।
এছাড়া পদাধীকার বলে ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আজাদুল হক, প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি এম মাওলা দিল, ৩১তম ফোবানা সম্মেলনের কনভেনার এম রহমান জহির, সদস্য সচিব আরিফ আহমেদ আশরাফ, নিউইয়র্কের বেদারুল ইসলাম বাবলা, ক্যানসাসের রেহান রেজা এবং নিউজার্সীর নাহিদ চৌধুরী মামুন এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসাবে বিজয়ী হন।
২০১৯ সালের সম্মেলনের হোস্ট ড্রামা সার্কেল: এদিকে একই দিন বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় আগামী ২০১৯ সালে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন আয়োজন করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে নিউইয়র্কের ড্রামা সার্কেল। প্রবাসের অত্যন্ত পরিচিত মুখ নার্গিস আহমেদ এবং জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব আবির আলমগীর তত্বাবাধানে আগামী ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে ড্রামা সার্কেলের আয়োজনে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৩৩তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন হবার গৌরব অর্জন করে ড্রামা সার্কেল কর্মকর্তা নার্গিস আহমেদ ও আবীর আলমগীর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনে অংশগ্রহন করার জন্য উপস্থিত সবাইকে সাদর আমন্ত্রন জানান। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)