প্রবাসীদের কাছে আমার অনেক ঋণ, আমি কৃতজ্ঞ: ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- প্রকাশের সময় : ০৭:২৩:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০১৬
- / ১১০০ বার পঠিত
ওয়াশিংটন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১/১১ তে গঠিত কেয়ারটেকার সরকার আমলের সংকটের সময় প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার কথা আমি কখনো ভুলবো না। সে সব দিনের দু:সহ স্মৃতি আমাকে গভীর কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে প্রবাসীদের কাছে। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ’খানেক প্রবাসী আমার সহযাত্রী হয়েছিলেন। প্রধামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধ্যান-ধারণার বিস্তার ঘটায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সরকারের সেবার আওতায় এসেছে। প্রশাসনে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতিসাধিত হয়েছে। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন এখন আন্তর্জাতিক মহলেও উচ্চারিত হচ্ছে। এসব তথ্য ইউএস কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ আন্তর্জাতিক মহলকে সবিস্তারে অবহিত করতে একেকজন প্রবাসীকে রাষ্ট্রদূতের ভমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে । তিনি বলেন, চিহ্নিত একটি মহল বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সহ্য করতে পারছে না। তারাই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওদের অপপ্রচারে যাতে আন্তর্জাতিক মহল বিভ্রান্ত না হয় সে জন্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সকল প্রবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার অপরাহ্নে ভার্জিনিয়ায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসার নিকটে টাইসন কর্ণারে অবস্থিত রিটজ কার্লটন হোটেলের মিলনায়তনে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে উপরোক্ত কথা বলেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ঐ হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ ওয়াশিংটন মেট্রে এলাকার আওয়ামী পরিবারের কয়েক শত নেতা-কর্মী সমবেত হন। কিন্তু সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর জন্যে শেখ হাসিনা জন্মদিনের সকল আড়ম্বরতা পরিহার করেন এবং সৈয়দ হকের মৃত্যুর কারণে দেশ ও প্রবাসে জন্মদিনের কেক কাটার সকল আয়োজনও বাতিল করারও নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাঙালী সংস্কৃতি লালন ও বিকাশে আজীবন সোচ্চার থাকা এই মানুষটির চলে যাওয়ায় গোটা জাতির সাথে আমিও ব্যথিত। আমার বড় ইচ্ছা ছিল, ‘জাতির জনক‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান তাঁর (সৈয়দ শামসুল হক) নেতৃত্বে করার। কিন্তু তা আর হলো না। আমি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’ কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সমবেত নেতা-কর্মীদের কাছে এসে সরাসরি মঞ্চে গিয়ে শেখ হাসিনা প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট তিনি বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলো এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলো হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। ‘জাতির জনক’-এর হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার সহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। দেশ বিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবেনা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।
টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষে উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শেষে দেশে ৪-জি নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিদ্যুতখাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রীডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে।নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুত কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাখাতে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।
‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুঃস্থ্, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের সাউথসাউথ, চ্যাম্পিয়ান অব দ্যা আর্থ, ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর আইসিটি, প¬ানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ও এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওর্য়াড ইত্যাদি এওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সফলতা অর্জন সহ নানা বিষয়ে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরকে আরো বেশি করে দেশের উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। তাই পরিবারকে তেমন সময় দেয়া হয়ে উঠেনা। ওয়াশিংটনে বসেও প্রতিদিন ছয় ঘন্টা করে অফিস করে দেশের জরুরি কাজ সমাধান করেছি। বাংলাদেশকে ‘জাতির জনক’-এর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। শুধু একটাই আশা দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। এ ব্যাপারে আপনাদের সবার সহযোগীতা কামনা করি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষে সরাসরি পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় চলে যান।
অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সিনিয়র সহ সভাপতি এম ফজলুর রহমান, সহ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ও আবুল কাশেম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুল হাসীব মামুন, চন্দন দত্ত ও আব্দুর রহীম বাদশা ছাড়াও হাজী এনাম, মুজাহিদুল ইসলাম, আবুল মনসুর খান, তৈয়বুর রহমান টনি, কাজী কয়েস, জাহাঙ্গীর হোসেন, মাহাবুবুর রহমান টুকু, সোলেয়মান আলী, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান মিয়া, সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, এম এ আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহবায়ক তারিকুল হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক বাহার খন্দকার সবুজ, ছাত্রলীগের জাহীদ হাসান, আল-আমিন, মেট্র ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদেক খান, সাধারণ সম্পাদক এম নবী বাকী, মেরিল্যান্ড ষ্টেট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল মজুমদার তাপস, ভার্জিনিয়া ষ্টেট আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক জি আই রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার তিনি ওয়াশিংটন সময় সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটনের ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্ক আসেন। ২১ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় যোগ দেন। (সূত্র: এনআরবি/খবরডটকম)