স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ
নিউইয়র্কেই বসবাস লোক চক্ষুর আড়ালে! ‘পিয়ন’ জাহাঙ্গীর ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের ২৩ ব্যাংক হিসাব, জমা হয়েছিল ৬২৭ কোটি টাকা
- প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৮ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই আলোচিত পিয়ন মো. জাহাঙ্গীর আলমের দূর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। আর এই তদন্তে বেড়িয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জাহাঙ্গীর আলমের নামে ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা গণ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দূর্নীতির কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন তার পিয়ন-ই (জাহাঙ্গীর আলম) তো ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সে হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের পর জাহাঙ্গীর আলম কৌশলে তড়িঘরি করে দেশ ছাড়েন। চলে আসেন নিউইয়র্কে। তার পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই নিউইয়র্ক সিটির ওজনপার্কে বসবাস করছিলেন বলে জানা যায়।
আরো জানা যায় যে, জাহাঙ্গীর আলম পারিবারিকভাবে আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী। তার ভিসাও ছিলো। তাই তিনি অবস্থা বুঝেই নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। নিউইয়র্কেই আসার পর থেকেই থাকছেন লোক চক্ষুর আড়ালে। সূত্র মতে কখনো ওজনপার্কে কখনো বাফেলোতে বাসবাস করছেন। অতি সম্প্রতি তার সহায়-সম্পত্তির ব্যবস্থা করতে ‘পাওয়া অব এটর্নী’র প্রয়োজনে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। সেখানে কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা তাকে চিনতে পেরে তাকে সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে বিফল হয়ে ফিলে আসেন কনস্যুলেট থেকে। এর পর থেকে তাকে আর প্রকাশে দেখা যাচ্ছে না। আবার চলে গেছেন লোক চক্ষুর আড়ালে।
এদিকে ঢাকার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে ও তাঁর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংক হিসাবগুলোয় প্রায় ৬২৭ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে জমা হয়েছে। উত্তোলন করা হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা। জমা ও উত্তোলন মিলিয়ে ব্যাংক হিসাবগুলোয় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক বলছে, জাহাঙ্গীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার। তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীর ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদক জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরের প্রায় ১৯ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠান স্কাই রিঅ্যারেঞ্জ লিমিটেডের নামে নোয়াখালীতে খোলা একটি ব্যাংক হিসাবে চলতি বছরের ৮৩ দিনে ১৭৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ওই হিসাব থেকে সমপরিমাণ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় মোট প্রায় ৫৫৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিজে জীবিকা নির্বাহের জন্য চিত্রনায়িকার গাড়ি চালিয়েছেন। জাতীয় সংসদে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেছেন। পরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
শেখ হাসিনা গত জুলাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক…কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রথম আলো গত জুলাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল জাহাঙ্গীর আলম, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তখন জাহাঙ্গীর মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার চৌদ্দগুষ্টির সম্পদ বিক্রি করলেও ৪০০ কোটি টাকা হবে না। আমার ট্যাক্স ফাইল (কর নথি) সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া আছে। এর বাইরে কোনো সম্পদ নেই।’ যদিও দুদক এখন জাহাঙ্গীরের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেল।
জাহাঙ্গীরের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, তিনি অর্থবিত্তের মালিক হতে শুরু করেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নিয়োগ-বাণিজ্য, বদলিসহ নানা তদবির করতেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তবে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।