ডিএসিএ বা ডাকা প্রকল্প : সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প
- প্রকাশের সময় : ০৩:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
- / ৩৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছে না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। একে তো করোনা নিয়ে বিপদ কমেনি, তার ওপর গত ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে অভিবাসীদের নিয়ে নিজের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাড়ে ছয় লাখ তরুণ-তরুণীকে দেশটি থেকে বের করে দিতে ট্রাম্প প্রশাসন যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা আটকে দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে নেওয়া ‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস’ (ডিএসিএ বা ডাকা) প্রকল্পে ওই তরুণ-তরুণীদের যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে থাকা ও কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সংবাদসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
বাবা-মায়ের সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এ অনিবন্ধিতরাই ‘ড্রিমার্স’ নামে পরিচিত। তাদের বহিঃসমর্পণ আটকাতে ২০১২ সালে ওবামা প্রশাসন ডিএসিএ বা ড্রিমার্স প্রকল্প নিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প এ সুরক্ষা কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক কর্মসূচিটি বাতিলে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার বিপক্ষে অবস্থান নেন। ওবামা আমলের এ কর্মসূচি বাতিলে ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে আগেই ‘বিধিবহির্ভূত’ বলেছিল নিম্ন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নেন, বিপক্ষে থাকেন চারজন। রক্ষণশীল হিসেবে খ্যাত প্রধান বিচারক জন রবার্টস এদিন সুপ্রিম কোর্টের চার উদারপন্থি বিচারকের সঙ্গে একত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন। ড্রিমারদের সুরক্ষা বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রপ্র্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘খামখেয়ালি ও অবিবেচনাপ্রসূত’ কাজ বলে অভিহিত করেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ফলে অস্থায়ীভাবে থাকা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ তরুণ-তরুণী যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই বছর কাজ করার সুযোগ পেলেন। সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশের পরও ট্রাম্প ডিএসিএ প্রকল্প বাতিলে ফের পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যদিও নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আইনি লড়াইয়ে জড়াবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এদিন বলেন, ‘ডিএসিএ কর্মসূচি কিংবা এটি বাতিল, কোনটি ভালো নীতি- এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের পদক্ষেপের পক্ষে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হাজিরের নিয়ম যথাযথভাবে মেনেছিল কিনা, সে বিষয়ে।’
সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অবস্থান রিপাবলিকান ও রক্ষণশীলদের জন্য ‘চপেটাঘাত’। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ডিএসিএ নিয়ে আইনি সমাধান চেয়েছিলাম, রাজনৈতিক নয়। এখন পুরোটাই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’
অন্যদিকে, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ড্রিমারদের সুরক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এবার ট্রাম্পের বিজ্ঞাপন : সরাল ফেসবুক
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের পস্ন্যাটফর্ম থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের বেশ কিছু বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ‘আপত্তিকর’ ওই বিজ্ঞাপনগুলোতে নাৎসিদের ব্যবহার করা একটি প্রতীক থাকায় সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
লাল রঙের উল্টো ত্রিভুজাকৃতির ওই প্রতীক ব্যবহার করে নাৎসিরা সাধারণত তাদের বিরোধী পক্ষ বিশেষ করে কমিউনিস্টদের বিষোদ্গার করত। গত মাসে আরেক স্যোশাল মিডিয়া জায়ান্ট টুইটার ট্রাম্পের একটি পোস্টের বিরুদ্ধে তাদের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে টুইটটিকে ‘হাইড’ করে দিয়েছিল। ট্রাম্পের টুইটে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ লেবেলও সেঁটে দিয়েছিল তারা।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের আইনি সুরক্ষা প্রত্যাহারে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। ট্রাম্পের প্রচার শিবির জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর-বামপন্থি গোষ্ঠী অ্যান্টিফাকে ইঙ্গিত করে করা ওই বিজ্ঞাপনগুলোতে এই প্রতীকটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, নাৎসিদের ব্যবহৃত ওই প্রতীক তাদের ‘সংঘবদ্ধ ঘৃণা ঠেকানোর’ নীতিমালা লঙ্ঘন করায় তারা প্ল্যাটফর্ম থেকে বিজ্ঞাপনগুলো সরিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের বানানো এসব বিজ্ঞাপনগুলো প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো পেজে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ছিল।
এদিকে, মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হওয়া দাঙ্গা ও সহিংসতার পেছনে অ্যান্টিফা-ই ছিল বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। কট্টর বামপন্থি এ গোষ্ঠীকে ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করা হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মাসে হুঁশিয়ারও করেছিলেন। উল্লেখ্য, অ্যান্টিফার সদস্যরা গত কয়েক বছর ধরেই ট্রাম্পের মুসলমানবিরোধী, অভিবাসনবিরোধী ও জাতীয়তাবাদী নানা পদক্ষেপ ও নীতির সমালোচনা করে আসছে। (দৈনিক যায়যায়দিন)