এনএবিসি কনভেনশন ৩২তম না দশম?
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৫৯৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও অনুষ্ঠিত হলো এনএবিসি সম্মেলন (নর্থ আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা সম্মেলন)। ১ ও ২ সেপ্টেম্বর শনি, রবি এই দুইদিন বষ্টন মালবোরো হোটেল হলিডে ইন’র বলরুমে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন আয়োজকদের এবারের সম্মেলন ৩২তম সম্মেলন। কিন্তু ইতিহাস বলে এই সম্মেলম ১০তম সম্মেলন।
ফলে অতীতের মতো এবারের এনএবিসি কনভেনশন কত তম তা নিয়েও কমিউনিটিতে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত: ফোবানা’র আদলে নিউইয়র্কে জন্ম নেয়া এবিসি কনভেনশন (আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা কনভেনশন)-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। এই এবিসি কনভেনশন পরবর্তীতে এনএবিসি (নর্থ আমেরিকা-বাংলাদেশ কনভেনশন)-এ রূপান্তরিত হয়। সেই হিসেবে এবারের এনএবিসি কনভেশন ১০তম হওয়ার কথা, ৩২তম নয়। এব্যাপারে এনএবিসি কনভেনশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা কোন সুদুত্তর দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএবিসি’র শীর্ষস্থানীয় এক নেতা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান, আমরা আগামীতে ভুল-ক্রুটি শোধরানোর চেষ্টা করবো। কমিউনিটিরকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবো।
সূত্র মতে, ফোবানা সম্মেলন ঘিরে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের বিভক্তির জের ধরেই এনএবিসি সম্মেলনের যাত্রা। তাই ফোবানা কর্মকর্তাদের দাবী এবারের এনএবিসি সম্মেলন কখনোই ৩২তম হতে পারে না। অপরদিকে নেতৃত্বের বিভাজনের শিকারে যারা এনবিসি সম্মেলনের শুরু করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয়। একসময় তারা ফোবানা সম্মেলনের সাথে যেমন ওতোপ্রতোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, পরবর্তীতে তারাই এবিসি তথা এনএবিসি সম্মেলনের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মানবতাবাদী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের শহর তথা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বের প্রধান শহর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টায় চলতি বছরের অর্থাৎ ৩২তম ফোবানা সম্মেলন ২৭-২৯ জুলাই যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার তিন দিনব্যাপী আটলান্টার ডাউন টাউনস্থ ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া। অপরদিকে বিভক্ত ফোবানার অপরাংশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় লেবার ডে উইকেন্ডে অর্থাৎ গত ১-২ সেপ্টেম্বর কানাডার রাজধানী অটোয়ায়। সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডা, অটোয়া।
ইতিহাস বলে: ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফোবানা সম্মে¥লনের যাত্রা শুরু হয়। উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্য, দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার মাধ্যমে নির্মল আনন্দ আর মহামিলনই হচ্ছে ফোবানা সম্মেলনের মূল লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য। সমগ্র উত্তর আমেরিকায় এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অর্জন করতেই ফোবানা সম্মেলন বিকশিত হতে থাকে। ক্রমে ক্রমে সম্মেলন ছড়িয়ে পড়ে নিউইয়র্ক, বস্টন, ডালাস, শিকাগোতে। এরপর ১৯৯৩ সালে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের কর্মকর্তাদের স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘ঐক্য ও সংহতি’র প্রতীক ফোবানা’য় বিভক্তি দেখা দেয়। বিভক্তির সেই বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে গোটা কমিউনিটিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ভাঙ্গনের দামামা বেজে উঠে কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সংগঠনে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সাধারণ প্রবাসী আর নতুন প্রজন্মের মাঝে। ফলশ্রুতিতে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয় ফোবানা সম্মেলন থেকে। যার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান।
পরবর্তীতে কমিউনিটির বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ঐক্যের প্রচেষ্টা শুরু হয়। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় চেষ্টা ও সহযোগিতায় ১৯৯৮ সালে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়। সেই বছর বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক নিউইয়র্ক-এর আয়োজনে ঐতিহাসিক মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে দ্বাদশ ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই ঐক্যের স্থায়িত্ব বেশী দিন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। দ্বাদশ সম্মেলনের পর ত্রয়োদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জর্জিয়ার আটলান্টায়। এই আটলান্টার সম্মেলন থেকেই আবার শুরু হয় বিভক্তির ফোবানা সম্মেলন।
নানা কনভেনশনের নামে উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভক্ত করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ সচেতন প্রবাসীদের। তাদের প্রশ্ন এই বিভক্তির শেষ কোথায়?