আনসার আহমেদ উল্লাহ : ‘সিটি অফ জাস্টিস’ হিসাবে পরিচিত হল্যান্ডের দি হেগে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তান কর্তৃক সংঘটিত ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে ও বলা হয়।
ইউরোপ ভিত্তিক বাংলাদেশী প্রবাসী সংগঠন, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ), সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন এর সহযোগিতায় ৩০ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পার্লামেন্ট ভবনের ইন্টারন্যাশনাল পারসেন্ট্রাম মিডিয়া সেন্টারে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, বাংলাদেশ সহ মানবতাবিরোধী যে কোনো অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে ত্রিশ লাখ নিহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অত্যন্ত জরুরী। তারা বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে মুক্ত-বিশ্ব গঠন এবং সমগ্র বিশ্বে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য গণহত্যার স্বীকৃতি অপরিহার্য। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি কোনো অপরাধকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে বিশ্ব সম্প্রদায় ভবিষ্যতে সেই অপরাধ আরো ঘটার জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দেবে। একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কোন বিচার হয়নি বলে আজ পাকিস্তানে গণহত্যা ঘটছে, ঘটছে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য অঞ্চলে। তারা বলেন, ৫০ বছর আগে সংঘটিত ‘বাংলাদেশ গণহত্যা’ আজ ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে এবং আমরা প্রচলিত বাক্যটি জানি, ‘জাস্টিজ ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। বক্তারা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে এবং অপরাধের জন্য বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানান।
সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, হংকং, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, কানাডা এবং বাংলাদেশের থেকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আফগান, সিন্ধু, বেলুচ, পশতুনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বক্তারা বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ক্রিস্টোফার এ. আলেকজান্ডার পিসি, কাবুলে নিযুক্ত কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কানাডার সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ গণহত্যার শহীদ পরিবারের সদস্য ডক্টর নুজহাত চৌধুরী, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন, আই সি ই এফ, বেলজিয়াম, ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, সুইস ইন্টারস্ট্র্যাটেজি গ্রুপ, ইউকে, বসির নাভিদ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাউন্সিল, হংকং (সিন্ধ), আওরঙ্গজেব খান জালমে, সম্পাদক, পশতুন টাইমস ও গবেষক, জার্মানি, ড. রায়হান রশিদ, আই সি ই এফ, যুক্তরাজ্য এবং বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সভাপতি, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম, নেদারল্যান্ডস ।
ফিনল্যান্ডের লেখক ও গবেষক ড. মজিবুর দফতোরি দুটি পৃথক সেশন পরিচালনা করেন এবং ইবিএফের বোর্ড সদস্য মিসেস আনার চৌধুরী শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।