অটোয়ায় ৩২তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- প্রকাশের সময় : ০৯:৩২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৬৬০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): কানাডার রাজধানী অটোয়ায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ৩২তম ফোবানা সম্মেলন-২০১৮ (একাংশ)। এর আগে অটোয়ায় কোন সম্মেলন হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে অর্থাৎ গত ১-২ সেপ্টেম্বর অটোয়ার কনফারেন্স এন্ড ইভেন্ট সেন্টারে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের স্বাগতিক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডা, অটোয়া। সম্মিলিত উদ্যোগে এই সম্মেলন সফল করার দাবী জানিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফোবানা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অটোয়ায় এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফোবানার ৩৩তম সম্মেলন হবে নিউইয়র্কে। অপরদিকে অটোয়া সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২০ সালের ফোবানা সম্মেলন হবে জর্জিয়ার আটলান্টায়। এদিকে ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির নতুন চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন খান। খবর ইউএনএ’র।
কানাডা’র অটোয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দু’দিনের এই সম্মেলনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো দেশ ও প্রবাসের শিল্পীদের পরিবেশনা ছাড়াও ছিলো সেমিনার, কাব্য জলসা প্রভৃতি। সম্মেলনে ফোবানা’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান ও এজাজ আক্তার তৌফিক, সাবেক মেম্বার সেক্রেটারী আবু জুবায়ের দারা, ফোবানা (একাংশ)-এর স্টীয়ারিং কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী ইমাম, মেম্বার সেক্রেটারী কাজী আজম, অটোয়া ফোবানা’র আহ্বায়ক সুলতানা শিরীন সাজি, মেম্বার সেক্রেটারী সাঈদ ইসলাম খোকন ও চীফ কো অর্ডিনেটর জলফিকার রহমান ফুলু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহ নেওয়াজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম। আলোচনায় অংশ নেন মোহাম্মদ হোসেন খান, এজাজ আক্তার তৌফিক, আলী ইমাম শিকদার, শাহ নেওয়াজ প্রমুখ।
সেমিনারে মোর্শেদ আলম বলেন, দেশের মানুষ মনে করেন প্রবাসীদের জীবন সুখের, আনন্দের। আসলে কি তাই? অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেই প্রবাসীদের অবস্থান তৈরী করতে হয়। আর মূলধারার রাজনীতিতে অনেক পরীক্ষা, যাচাই-বাছাইর পর্ব অতিক্রম করতে হয়। তবে সততার সাথে এড়িয়ে গেলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, প্রবাসীদের নিজেদের পাশাপাশি দেশ আর দেশের মানুষের কথাও ভাবতে হবে। সবাই মিলে বাংলাদেশকে সুন্দর করতে হবে।
সেমিনারের অন্যান্য বক্তা তাদের বক্তব্যে দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলেও দু:খজনক সত্য যে, দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বড় অসহায়, অবহেলিত। বিশেষ করে ঘর-বাড়ী নির্মাণ, জমি ক্রয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। বক্তারা বলেন, সরকার প্রবাসীদের যত সুযোগ-সুবিধা দেবেন, সহযোগিতা করবেন দেশ-জাতি তত উপকৃত হবে।
সম্মেলনের সাংস্কৃতিক পর্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায় ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী ছাড়াও উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে রানো নেওয়াজ, তানভীর শাহীন, চন্দ্রা রায়, নাভিন আন্না, ডা. নার্গিস রহমান, ডা. শাহানাজ লিপি প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বানী আর নৃত্য পরিবেশন করেন নক্ষত্র। কাব্য জলসায় নিউইয়র্কের এম এ সাদেক সহ কানাডার আবৃত্তি শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি করেন। সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে শিল্পীদের পরিবেশনা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এই পর্বে সামিনা চৌধুরী গান পরিবেশনের সময় দর্শক সারি থেকে শিল্পী চন্দ্রা রায়-কে নিয়েও সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং চন্দ্রা রায় জনপ্রিয় শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়ের কন্যা সেকথা জেনে তাকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করেন।
১ সেপ্টেম্বর শনিবার সম্মেলন উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সভাপতিত্বন করেন স্টিয়ারিং কমিটির বিদায়ী চেয়ারম্যান টরন্টোর আবু জুবায়ের দারা। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফোবানা’র নতুন চেয়ারম্যান মোনীত হন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন খান। স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী সহ অন্যান্য কর্মকর্তার নাম পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। এছাড়াও সভায় ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনের হোস্ট সংগঠন হিসেবে ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি’ এর এই সম্মেলনের কনভেনর হিসেবে শাহ নেওয়াজ ও সদস্য সচিব হিসেবে কাজী সাখাওয়াত হোসেন (কাজী আজম)-কে মনোনীত করা হয়।
সম্মেলনে নিউইয়র্ক থেকে উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ফোবানার কর্মকর্তা নিশান রহীম, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, ওয়াহিদ কাজী এলিন, মাকসুদুল হক চৌধুরী, ডা. শাহনাজ রহমান, ডা. শাহানাজ আলম, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ সহ ২৫/৩০জন প্রবাসী যোগ দেন।
সম্মেলনে সুলতানা শিরীন সাজি বলেন, কানাডার অটোয়ায় পার্লামেন্ট সহ এখানে অনেক কিছুই দেখার রয়েছে। অটোয়ায় বাংলাদেশীদের বসতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তারা ফোবানা সম্মেলনের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আমরা মনে করি সবার সহযোগিতায় সম্মেলন সফল হয়েছে।
সাঈদ ইসলাম খোকন বলেন, সবার সহযোগিতায় অটোয়ায় একটি সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। এজন্য তিনি ফোবানা’র স্টীয়ারিং কমিটির কর্মকর্তা সহ সকল প্রবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২ সেপ্টেম্বর রোববার সম্মেলনের শেষ দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ফোবানা’র কর্মকর্তা এবং স্বাগতিক সম্মেলনের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। এসময় ২০১৯ সালের ফোবানা’র আহ্বায়ক শাহ নেওয়াজ তার বক্তব্যে উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে আরো সুন্দর সম্মেলন উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সবাইকে এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আহবান জানান।
কানাডার বিভিন্ন শহর সহ নিউইয়র্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সম্মেলনে প্রায় চার শ প্রবাসী বাংলাদেশ অংশ নেন। সম্মেলনে প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিন লোক সমাগম ঘটে বেশী।