নিউইয়র্ক ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আজ পবিত্র আশুরা

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৪১৫ বার পঠিত

‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’। ফিরে এলো আজ সেই মোহররম মাহিনা…। আজ মহরমের দশম তারিখ, পবিত্র আশুরা। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা এক অসামান্য তাৎপর্যে উজ্জ্বল। ইবাদত-বন্দেগির জন্যও এই দিবস অতুলনীয়। সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার মর্মন্তুদ সকরুণ শোকগাঁথা এই দিবসকে গভীর কালো রেখায় উৎকীর্ণ করে রেখেছে। ৬১ হিজরি সালের এই দিনে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহিদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। দিনটি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এই দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। মুসলমানদের কাছে বিগত বছরের গোনাহর কাফফারা হিসেবে মহরমের দুটি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মাহে রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহরম মাসের রোজা। এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজ (সহিহ মুসলিম)। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তিনি আশুরার দিনে ইহুদিদের রোজা পালন করতে দেখলেন। ‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ হজরত মুছা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এই দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা (আঃ)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা পালন করলেন এবং অন্যদের রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)। আশুর নিয়ে বহু কথা, অনেক ইতিহাস প্রচলিত থাকলেও সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিস অনুযায়ী পবিত্র আশুরার দিনে মুসা (আ.) ও তার সাথিদের মুক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো ঘটনা প্রমাণিত নয়। এই দিনে মহান আল্লাহ তার রসুল মুসা (আ.) ও তার সঙ্গী বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন এবং ফেরাউন ও তার সঙ্গীদের ডুবিয়ে মারেন। পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য এ কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মহরম নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার :সাধারণ মানুষের মধ্যে মহরম মাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেমন—এই মাসে বিয়েশাদি না করা, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা, কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা, গোশত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা, পান না খাওয়া, নতুন কাপড় ও সুন্দর পোশাক পরিধান না করা, সাদা কাপড় বা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা, সব ধরনের আনন্দ-উৎসব পরিহার করা—এ সবই কুসংস্কার।

আশুরাবিষয়ক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা: ‘উড়িয়া যায়রে জোড়া কবুতর/ফাতেমা কেন্দে কয়, আজ বুঝি কারবালার আগুন লেগেছে মোর কলিজায়/ মা ফাতেমার কান্দন শুনে আরশ থেকে আল্লাহ কয়/যাওগো জিব্রিল বাতাস কর মা ফাতেমার কলিজায়/পুত্রশোকে কলিজা জ্বলে বাতাসে কি ঠাণ্ডা হয়….’ এই সমস্ত নগদ মিথ্যা কথা ও কেচ্ছা-কবিতা গানের আকারে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। এগুলো যে মিথ্যা তার প্রমাণ হলো, মা ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরিতে আর হুসাইন (রা.) শহিদ হন ৬১ হিজরিতে। দুই জনের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরের ব্যবধান। এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে আশুরা ও মহররমকে কেন্দ্র করে। আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মাতম করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা বুক চাপড়ায়, কাপড় ছেঁড়ে এবং জাহেলি যুগের কথাবার্তা বলে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্রের অফিসসমূহে ছুটি থাকবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ বিবৃতি দিয়েছেন। সূত্র: ইত্তেফাক।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আজ পবিত্র আশুরা

প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’। ফিরে এলো আজ সেই মোহররম মাহিনা…। আজ মহরমের দশম তারিখ, পবিত্র আশুরা। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা এক অসামান্য তাৎপর্যে উজ্জ্বল। ইবাদত-বন্দেগির জন্যও এই দিবস অতুলনীয়। সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার মর্মন্তুদ সকরুণ শোকগাঁথা এই দিবসকে গভীর কালো রেখায় উৎকীর্ণ করে রেখেছে। ৬১ হিজরি সালের এই দিনে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহিদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। দিনটি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এই দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। মুসলমানদের কাছে বিগত বছরের গোনাহর কাফফারা হিসেবে মহরমের দুটি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মাহে রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহরম মাসের রোজা। এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজ (সহিহ মুসলিম)। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তিনি আশুরার দিনে ইহুদিদের রোজা পালন করতে দেখলেন। ‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ হজরত মুছা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এই দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা (আঃ)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা পালন করলেন এবং অন্যদের রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)। আশুর নিয়ে বহু কথা, অনেক ইতিহাস প্রচলিত থাকলেও সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিস অনুযায়ী পবিত্র আশুরার দিনে মুসা (আ.) ও তার সাথিদের মুক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো ঘটনা প্রমাণিত নয়। এই দিনে মহান আল্লাহ তার রসুল মুসা (আ.) ও তার সঙ্গী বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন এবং ফেরাউন ও তার সঙ্গীদের ডুবিয়ে মারেন। পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য এ কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মহরম নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার :সাধারণ মানুষের মধ্যে মহরম মাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেমন—এই মাসে বিয়েশাদি না করা, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা, কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা, গোশত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা, পান না খাওয়া, নতুন কাপড় ও সুন্দর পোশাক পরিধান না করা, সাদা কাপড় বা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা, সব ধরনের আনন্দ-উৎসব পরিহার করা—এ সবই কুসংস্কার।

আশুরাবিষয়ক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা: ‘উড়িয়া যায়রে জোড়া কবুতর/ফাতেমা কেন্দে কয়, আজ বুঝি কারবালার আগুন লেগেছে মোর কলিজায়/ মা ফাতেমার কান্দন শুনে আরশ থেকে আল্লাহ কয়/যাওগো জিব্রিল বাতাস কর মা ফাতেমার কলিজায়/পুত্রশোকে কলিজা জ্বলে বাতাসে কি ঠাণ্ডা হয়….’ এই সমস্ত নগদ মিথ্যা কথা ও কেচ্ছা-কবিতা গানের আকারে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। এগুলো যে মিথ্যা তার প্রমাণ হলো, মা ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরিতে আর হুসাইন (রা.) শহিদ হন ৬১ হিজরিতে। দুই জনের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরের ব্যবধান। এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে আশুরা ও মহররমকে কেন্দ্র করে। আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মাতম করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা বুক চাপড়ায়, কাপড় ছেঁড়ে এবং জাহেলি যুগের কথাবার্তা বলে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্রের অফিসসমূহে ছুটি থাকবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ বিবৃতি দিয়েছেন। সূত্র: ইত্তেফাক।