নিউইয়র্ক ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুরিদদের প্রতি মওলানা ভাসানীর নির্দেশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৪৪ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
এদিকে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অপরদিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বা নবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুরিদদের প্রতি মওলানা আবাদুল হামিদ খান ভাসানী কি নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল মওলানা ভাসানী’র বক্তব্য ছিলো নি¤œরূপ:
‘আগামী ১৪ বৈশাখ, ২৭ এপ্রিল মোতাবেক ১২ই রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার হযরত মোহাম্মদের (দঃ) জন্ম ও ওফাত দিবস। এই উপলক্ষে বরাবরের মতো সনেমশাষে নির্ধারিত কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হইবে। বাংলা ও আসামের আমার মুরিদান ও ধর্মপ্রাণ সকল মুসলমান নারী পুরুষকে আহ্বান জানাইতেছিঃ আসন্ন নবী দিবসে সন্তোষে হাজির হইয়া এখানকার কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করুন।
একটানা নয় মাসে মাত্র যে দোহাই দিয়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত করা হইয়াছে তাহা হইল ইসলাম রক্ষা! আপনারা ভাল করিয়া জানেন, যেহেতু মিথ্যা ও অন্যায়ের কোনদিন বিজয় সূচিত হয় নাই, তাই ঐতিহাসিক নিয়মে পাকফৌজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে। তাহাদের ধ্বংস আমাদিগকে দিয়াছে স্বাধীনতা। কিন্তু তাই বলিয়া স্বাধীনতায় গদগদ হইয়া ইসলামের মহান বৈশিষ্ট্য ভুলিয়া গেলে চলিবে না। আপনাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে, ইসলাম সকল মানুষকে, সে মুসলমান হউক বা না হউক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দান করিয়াছে। ভন্ডরা তাহা ভুলিয়া গিয়া পরধর্মে হাত দিয়া থাকে। ইসলাম মানুষকে সততা, ত্যাগ ও সাধনার পথে চলিতে বলে। কিন্তু আমরা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীকে দেখিয়াছি, ইসলামের নামে তাহারা মানুষের উপর জুলুম করিয়াছে।
তজ্জন্য ইসলামকে জুলুমকারীর ধর্ম হিসাবে দেখিলে চলিবে না। ইসলামকে আমরা কখনো তলাইয়া দেখিতে যাই নাই। বংশানুক্রমে যাহারা মুসলমান, তাহাদের চরিত্র পর্যালোচনা করিয়াই আমরা ইসলামের স্বরূপ অনুধাবন করিতে চেষ্টা করি। কিন্তু একমাত্র হযরত মোহাম্মদের (দঃ) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করিয়া আমরা পূর্ণ ইসলামকে উপলব্ধি করিতে পারি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম ফাতেহা ইয়াজদাহাম আমাদের দুয়ারে হাজির। আমি তাই মুরিদদের প্রতি নির্দেশ দিতেছি এবং জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানাইতেছি- আপনারা আসন্ন নবী দিবস উদযাপন করুন এবং ওয়াদাবদ্ধ হউনঃ ন্যায় ও সত্যের পথে আমরা অটল, অচল থাকিব- ভীতি হুমকি যাহা কিছুই আসুক না কেন।’
[সাপ্তাহিক হক কথা, ৯ই এপ্রিল, ১৯৭২]

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

নবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুরিদদের প্রতি মওলানা ভাসানীর নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হককথা ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
এদিকে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অপরদিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বা নবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুরিদদের প্রতি মওলানা আবাদুল হামিদ খান ভাসানী কি নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল মওলানা ভাসানী’র বক্তব্য ছিলো নি¤œরূপ:
‘আগামী ১৪ বৈশাখ, ২৭ এপ্রিল মোতাবেক ১২ই রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার হযরত মোহাম্মদের (দঃ) জন্ম ও ওফাত দিবস। এই উপলক্ষে বরাবরের মতো সনেমশাষে নির্ধারিত কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হইবে। বাংলা ও আসামের আমার মুরিদান ও ধর্মপ্রাণ সকল মুসলমান নারী পুরুষকে আহ্বান জানাইতেছিঃ আসন্ন নবী দিবসে সন্তোষে হাজির হইয়া এখানকার কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করুন।
একটানা নয় মাসে মাত্র যে দোহাই দিয়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত করা হইয়াছে তাহা হইল ইসলাম রক্ষা! আপনারা ভাল করিয়া জানেন, যেহেতু মিথ্যা ও অন্যায়ের কোনদিন বিজয় সূচিত হয় নাই, তাই ঐতিহাসিক নিয়মে পাকফৌজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে। তাহাদের ধ্বংস আমাদিগকে দিয়াছে স্বাধীনতা। কিন্তু তাই বলিয়া স্বাধীনতায় গদগদ হইয়া ইসলামের মহান বৈশিষ্ট্য ভুলিয়া গেলে চলিবে না। আপনাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে, ইসলাম সকল মানুষকে, সে মুসলমান হউক বা না হউক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দান করিয়াছে। ভন্ডরা তাহা ভুলিয়া গিয়া পরধর্মে হাত দিয়া থাকে। ইসলাম মানুষকে সততা, ত্যাগ ও সাধনার পথে চলিতে বলে। কিন্তু আমরা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীকে দেখিয়াছি, ইসলামের নামে তাহারা মানুষের উপর জুলুম করিয়াছে।
তজ্জন্য ইসলামকে জুলুমকারীর ধর্ম হিসাবে দেখিলে চলিবে না। ইসলামকে আমরা কখনো তলাইয়া দেখিতে যাই নাই। বংশানুক্রমে যাহারা মুসলমান, তাহাদের চরিত্র পর্যালোচনা করিয়াই আমরা ইসলামের স্বরূপ অনুধাবন করিতে চেষ্টা করি। কিন্তু একমাত্র হযরত মোহাম্মদের (দঃ) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করিয়া আমরা পূর্ণ ইসলামকে উপলব্ধি করিতে পারি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম ফাতেহা ইয়াজদাহাম আমাদের দুয়ারে হাজির। আমি তাই মুরিদদের প্রতি নির্দেশ দিতেছি এবং জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানাইতেছি- আপনারা আসন্ন নবী দিবস উদযাপন করুন এবং ওয়াদাবদ্ধ হউনঃ ন্যায় ও সত্যের পথে আমরা অটল, অচল থাকিব- ভীতি হুমকি যাহা কিছুই আসুক না কেন।’
[সাপ্তাহিক হক কথা, ৯ই এপ্রিল, ১৯৭২]