কঠিন মুহূর্তে মহানবী (সা.) যাদের ক্ষমা করেন
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩
- / ১০২ বার পঠিত
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন স্বভাবজাত ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে বেশ পছন্দ করতেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে ক্ষমাশীল মনোভাব ও ভালোবাসা দিয়ে দ্বিনের দিকে আকৃষ্ট করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন। আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন।
’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মহান আল্লাহর এই বাণী ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন’ সম্পর্কে বলেন, রাসুল (সা.)-কে মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা ক্ষমা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৭)
নিম্নে মহানবী (সা.)-এর ক্ষমার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো।
১. তায়েফবাসীর জন্য ক্ষমা : আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জীবনে কি উহুদ দিবসের চেয়েও অধিকতর কঠিন কোন দিন এসেছে? তিনি বলেন, তোমার সম্প্র্রদায়ের হাতে আকাবার দিন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা এর চেয়েও অধিকতর কঠিন ছিল। যখন আমি (আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে তায়েফের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ) ইবনু আবদে ইয়ালিল ও ইবনু আবদে কিলালসহ কয়েকজনের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পেশ করলাম।
তারা আমার দাওয়াতের ডাকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া দেয়নি। তখন আমি অত্যন্ত বিষণ্ন অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং ‘কারনুস সাআলিব’ নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। তারপর যখন আমি মাথা উঠালাম তখন দেখি, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়াপাত করছে এবং এর মধ্যে জিবরাইল (আ.)-কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, মহা মহিমান্বিত আল্লাহ আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের উক্তি এবং আপনার বিরুদ্ধে তাদের উত্তরও শুনেছেন এবং তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার সম্প্র্রদায়ের লোকজনের ব্যাপারে যেরূপ ইচ্ছা সেরূপ আদেশ তাঁকে করেন।
তখন পাহাড়ের ফেরেশতাও আমাকে ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের উক্তি আল্লাহ তাআলা শুনেছেন আর আমি হলাম পাহাড়ের (তত্ত্বাবধানকারী) ফেরেশতা। আপনার রব আপনার কাছে আমাকে এ জন্য পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার ইচ্ছামতো আমাকে নির্দেশ দেন। (আপনি বললে) আমি এ পাহাড় দুটিকে তাদের ওপর চাপা দিয়ে দেব। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, (না, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম) আমি বরং আশা করি যে, আল্লাহ তাআলা হয়তো তাদের ঔরস থেকেই এমন ব্যক্তি বের করে আনবেন, যারা তাঁর সঙ্গে কিছুকে শরিক না করে এক আল্লাহর ইবাদত করবে।
(মুসলিম, হাদিস : ৪৫৪৫)
২. জাদুকর লাবিদকে ক্ষমা : আয়েশা (রা.) বলেন, জুরাইক গোত্রের লাবিদ ইবনে আসাম নামক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জাদু করে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মনে হতো যেন তিনি একটি কাজ করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। এক দিন বা এক রাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বারবার দোয়া করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার কাছে দুজন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দুপায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেন, এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি বলেন, জাদু করা হয়েছে। প্রথমজন বলেন, কে জাদু করেছে? দ্বিতীয়জন বলেন, লাবিদ বিন আসাম। প্রথমজন জিজ্ঞেস করেন, কিসের মধ্যে? দ্বিতীয়জন উত্তর দেন, চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ানোর সময় ওঠা চুল এবং এক পুং খেজুরগাছের ‘জুব’-এর মধ্যে।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। পরে ফিরে এসে বলেন, হে আয়েশা! সে কূপের পানি মেহেদির পানির মতো লাল এবং তার পাড়ের খেজুরগাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মতো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দেবেন না? তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৩)-সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ
নাসরিন /হককথা