অনলাইনে যেসব কাজ জঘন্য পাপ
- প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
- / ৬৯ বার পঠিত
মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম প্লাটফর্ম ফেসবুক। বৃদ্ধ থেকে যুবক প্রায় সব শ্রেণিরই এখানে বিচরণ রয়েছে। তাই অপরাধীরাও মানুষকে ফাঁদে ফেলতে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে টার্গেট করেছে। নতুন নতুন ফাঁদ পেতে তারা বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করছে, কারো কারো থেকে অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, মানুষের অজান্তেই তাদের ছবিকে কারসাজি করে বিভিন্ন অশ্লীল পেজ বা ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে যার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, বিভিন্ন মহলে তার মানহানি হচ্ছে। কাউকে কাউকে আবার সেই কারসাজি করা ছবি-ভিডিও দেখিয়েই অপকর্ম করতে কিংবা মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করছে। কাউকে আবার কোনো যোগ্যতা ছাড়াই ঘরে বসে আয় করার মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে তার টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।
কখনো কখনো আইডি হ্যাক করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করা হচ্ছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ সব কয়টি অপরাধ কবিরা গুনাহ। পাশাপাশি বান্দার হক নষ্ট করার শামিল। যা ভুক্তভোগী ক্ষমা না করলে তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার আর কোনো রাস্তাই খোলা থাকবে না।
নিম্নে এই অনলাইনভিত্তিক অপরাধগুলোর ইসলামী বিধান তুলে ধরা হলো—
অশ্লীলতা ছড়ানো : অনেক সময় দেখা যায়, মানুষের অজান্তেই তাকে বিভিন্ন গ্রুপে অ্যাড করে জোর করে অশ্লীল ছবি ভিডিও দেখানো হয়। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। (সুরা নুর, আয়াত : ১৯)
ছবিতে কারসাজি করা : অনেক সময় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের প্রোফাইল থেকে তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ছবি হাতিয়ে নিয়ে সেগুলোতে কারসাজি করা হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই চেহারাগুলোকে অন্য ছবি বা ভিডিওর ক্যারেক্টারগুলোর চেহারায় বসিয়ে দেওয়া হয়।
তারপর তা বিভিন্ন সাইটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, এখানে একসঙ্গে অনেক কবিরা গুনাহ সংঘটিত হয়। ১. মানুষের ছবি বানানোর গুনাহ, কিয়ামতে যার শাস্তি ভয়াবহ। ২. অশ্লীলতা ছড়ানো হয়, যা হারাম। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৬৪)
জিম্মি করে অর্থ আদায় করা : এগুলোকে ব্যবহার করে জিম্মি করে অর্থ আদায় করলে, অন্যের সম্পদ হারাম পদ্ধতিতে ভোগ করার গুনাহ হয়। যা হারাম। কারণ মহান আল্লাহ অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হস্তগত করতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
অন্যের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া : অনেকে আবার অন্যের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার ইত্যাদি ব্যবহার করে আড়ি পাতে, যা জঘন্য পাপ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই কাজ করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারো গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান কোরো না। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কারো ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা বা তা বিনষ্ট করা নিষিদ্ধ।
প্রতারণা করা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ অর্থ উপার্জনের প্রলোভন বা মূল্যবান জিনিসপত্র নামমাত্র মূল্যে পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, প্রতারক ও ধোঁকাবাজদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)
অহেতুক সময় নষ্ট করা : সময় মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুমিনের প্রতিটি সেকেন্ডই অত্যন্ত দামি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ প্রতারিত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)
কিয়ামতের দিন প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। আবু বারজা আল-আসলামি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে, কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কী আমল করেছে; কোথা থেকে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কী কী কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)
অতএব জীবনের এই সোনালি সময়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক কাজ করে নষ্ট করে দেওয়া বোকামি বৈ কিছু নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করা হলে তো তা আরো জঘন্য অপরাধ। -সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ
নাসরিন /হককথা