অগমেন্টেড রিয়েলিটি কল্পনা আর বাস্তবতার মেলবন্ধন
- প্রকাশের সময় : ১১:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১৪৯ বার পঠিত
সায়েন্স ফিকশন গল্পের মতো নিজের ঘরে বসে ত্রিমাত্রিক জগতের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার বৈপ্লবিক প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। কল্পনার রাজ্যের সঙ্গে বাস্তব জগতের মেলবন্ধন তৈরি করার প্রযুক্তিটির নাম অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) বা উদ্দীপিত বাস্তবতা।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) এমন এক ধরনের প্রযুক্তি যা বাস্তব জগতের ওপর কম্পিউটার নির্মিত ডিজিটাল তথ্য, যেমন ছবি, ভিডিও অথবা ত্রিমাত্রিক মডেলকে একত্র করে নতুন একটি সম্মিলিত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এটি বাস্তব জগতের ওপর একটি ডিজিটাল স্তর যুক্ত করে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা একই সঙ্গে বাস্তব ও কম্পিউটার নির্মিত বিষয়বস্তু উপভোগ করতে পারে।
তবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পুরোটাই কল্পিত জগৎ। এটি বাস্তবতা থেকে আলাদা এক জগতে নিয়ে যায়। তবে এআরের মাধ্যমে একই সঙ্গে বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের স্বাদ পাওয়া যায়।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি কাজ করে মূলত ক্যামেরার মাধ্যমে। বিশেষ ধরনের ক্যামেরার সেন্সরের মাধ্যমে চার পাশের বস্তুগুলোর দূরত্ব ত্রিমাত্রিকভাবে পরিমাপ করা হয়। তারপর সেই দূরত্ব প্রসেস (প্রক্রিয়া) করে সেখানে ত্রিমাত্রিক উপাদান যুক্ত করা হয়।
গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের এক গবেষণায় বলা হয়, ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) বাজার ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। ভবিষ্যতে এআর প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার হবে তার একটি ধারণা বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
শিক্ষা: কোনো বিষয়কে বোঝার জন্য এআরের সাহায্য নেওয়া যাবে। এটি ভিডিও দেখার চেয়েও বেশি কার্যকর। কারণ এআর মাধ্যমে বিভিন্ন উপাদানকে নেড়েচেড়ে দেখার মতো ত্রিমাত্রিক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। যেমন সৌরজগৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ার টেবিলে চোখের সামনে গ্রহগুলো চলে আসবে। গ্রহগুলো কোন কক্ষপথে রয়েছে, তা সৌরজগতের ভার্চুয়াল মডেলটি নেড়েচেড়ে দেখতে পারবে।
বিনোদন: এআর গেমগুলো ব্যবহারকারীদের কল্পিত জগতের অংশীদার হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা দেয়। যেমন, রেসিং গেম খেলোয়াড়দের ড্রয়িংরুমে একটি কল্পিত রেসিং ট্র্যাক তৈরি হবে, যা তাদের বাস্তব ট্র্যাকের মতো অভিজ্ঞতা দেবে।
ব্যবসা: এআর অ্যাপগুলো ব্যবহার করে কাপড় কেনার আগে তা পরীক্ষা করে দেখা যাবে। অথবা আসবাবপত্রের কোনো ত্রিমাত্রিক চিত্র ঘরে স্থাপন করে আগে থেকে বোঝা যাবে সেটি ঘরের জন্য কতটা উপযোগী। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্যও এটি ব্যবহার করা যাবে।
প্রশিক্ষণ: এআর প্রযুক্তি কর্মীদের জটিল কাজের জন্য ধাপে ধাপে নির্দেশনা প্রদান করতে বা যন্ত্রপাতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করতে ব্যবহার করা যাবে।
স্বাস্থ্যসেবা: চিকিৎসকদের জটিল অস্ত্রোপচার পরিকল্পনা তৈরিতে এআর প্রযুক্তি সাহায্য করবে। ত্রিমাত্রিক
কঙ্কালের মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা মানুষের দেহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। ফলে শুধু বইয়ের মধ্যেই তাঁদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকবে না। রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকেরা এআর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
নির্মাণশিল্পে: দালানকোঠাসহ অন্যান্য কাঠামো নির্মাণ করতে এআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। প্রকল্পের বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক নকশা তৈরি করা যাবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
পর্যটন ও ভ্রমণ: কোনো নতুন জায়গার রাস্তাঘাট বা ইতিহাস সম্পর্কে জানিয়ে দেবে এআর। চোখের সামনে বিল্ডিংয়ের ওপর থাকা বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে ত্রিমাত্রিকভাবে জানিয়ে দেবে এ প্রযুক্তি। অথবা কোন রাস্তাটি কোন দিকে যাবে, সে নির্দেশনাও ত্রিমাত্রিকভাবে তুলে ধরবে এটি।
এআর প্রযুক্তি এখনো বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক। এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তুলবে বলে প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা মনে করেন। সূত্র : আজকের পত্রিকা।