২৫ কোটি বছর পর পৃথিবী মানুষহীন হয়ে পড়বে
- প্রকাশের সময় : ০৬:১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১১৫ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : পৃথিবীতে নতুন একটি অতিমহাদেশ (সুপারকন্টিনেন্ট) গঠনের মধ্য দিয়ে পুরো মানবজাতিসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষকরা বলছেন, আগামী ২৫ কোটি বছরের মধ্যেই তা ঘটতে পারে, যেটি পৃথিবী গ্রহের বয়সের হিসাবে খুব বেশি সময় নয়। করোনা মহামারিজনিত লকডাউনের সময় এই গবেষণা শুরু করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার জিওসায়েন্সে সোমবার প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, দূর ভবিষ্যতের ওই সম্ভাব্য গণপ্রাণ বিলুপ্তির প্রধান কারণ হবে বড় অগ্ন্যুৎপাতজনিত উচ্চ তাপমাত্রা।
আগ্নেয়গিরিগুলোর সক্রিয়তা বেড়ে গিয়ে বর্তমান মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসৃত হবে। এ ছাড়া আরো বুড়িয়ে যাওয়া সূর্য আরো বেশি করে তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করবে। বেড়ে যাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের মরুভূমির আকার। গবেষকরা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ওই দৈত্যাকার অতিমহাদেশের নাম দিয়েছেন প্যানজিয়া আলটিমা।
বর্তমানের সব মহাদেশ সংযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে এটি। ওই ভূতাত্ত্বিক পুনর্বিন্যাসের ফলে জলবায়ু যে কতটা চরমভাবাপন্ন হতে পারে তার চিত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে এটাই প্রথম গবেষণাভিত্তিক মডেল। যুক্তরাজ্যের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা ইউকে মেট অফিসের জলবায়ু মডেল এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণা বলছে, অতিমহাদেশ প্যানজিয়া আলটিমায় তাপমাত্রার চরম রূপ নাটকীয় চেহারা নেবে।
তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (স্থলভাগে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত) বাড়তে পারে। এর ফলে পুরো পৃথিবী ২৬ কোটি বছর আগের পারমিয়ান-ট্রায়াসিক যুগে ফিরে যেতে পারে। পৃথিবী এর আগে সর্বশেষ ওই সময়েই এমন চরম উত্তাপের শিকার হয়েছিল। অতীতের ওই সময়টায় পৃথিবীতে ৯০ শতাংশেরও বেশি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় জীবনধারণ অনেক ধরনের প্রাণের পক্ষে অসহনীয় হয়ে যাবে।
খাপ খাওয়াতে ধীরগতিই হবে কাল
প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসরের হঠাৎ অবলুপ্তিকে পৃথিবীর প্রাণজগতের সর্বশেষ মহাবিলুপ্তি বলা হয়। এর পরবর্তী সময়ে স্তন্যপায়ীরা সফলতার সঙ্গে বিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু উত্তাপের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতার গতি সম্ভবত বেশি ধীর। তাদের মধ্যে আছে মানুষও, যার ইতিহাস পৃথিবীতে তুলনামূলকভাবে কম সময়ের। বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষের প্রাচীন প্রজাতি পৃথিবীতে এসেছে মাত্র ৬০ লাখ বছর আগে। তত দিনে ডাইনোসর যুগের তুলনায় পৃথিবী তুলনামূলকভাবে অনেক শীতল হয়ে এসেছিল। মানবজাতির ইতিহাসে আমাদের প্রজাতি এ পর্যন্ত দ্রুত অগ্রগতি করেছে। তবে অন্য প্রজাতিগুলোর বিলুপ্তি এবং নিজের সৃষ্ট জলবায়ু সংকট থেকে সেই ভবিষ্যতে পার পেয়ে গেলেও প্যানজিয়া আলটিমা যুগে আমাদের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তাপজনিত সরাসরি প্রভাব ছাড়াও উদ্ভিদজগতে বিপর্যয় নেমে আসার ফলে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হবে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রায় উদ্ভিদ নাজুক অবস্থায় পড়বে। তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হলে তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।
ভবিষ্যতে কোন প্রজাতি
গবেষণাপত্রের মূল লেখক ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ফার্নসওয়ার্থ বলেন, ‘আরেকটি গণবিলুপ্তির আশঙ্কা আমাদের প্রাণিজগতের ক্ষণস্থায়িত্বের কথাই আবারও মনে করিয়ে দেয়। পৃথিবীর পরিবেশ খুবই পরিবর্তনশীল। এখন যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা মানুষের জন্য ভাগ্যের বিষয়। আমরা যে অপেক্ষাকৃত শীতল পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়ে এসেছি, জলবায়ুকে তার বাইরে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। এখন আমরাই পৃথিবীতে প্রধানতম জীব প্রজাতি। কিন্তু পৃথিবী ও এর জলবায়ু সিদ্ধান্ত নেবে, মানুষের এই অবস্থান কত দিন টিকবে। এরপর যেকোনো প্রজাতি প্রধান হবে তা কেউ জানে না। তা হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন কিছু।’
গবেষণার লাভালাভ
গবেষণার লেখকরা স্বীকার করেছেন, অতি দীর্ঘমেয়াদি সময়সীমার কারণে তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে বড় মাত্রার অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে তাঁদের প্রত্যাশা, গবেষণাটি অতীতের গণপ্রাণ বিলুপ্তির ঘটনা এবং অন্য গ্রহের সম্ভাব্য বসবাসযোগ্যতা সম্পর্কে জরুরি ধারণা দেবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মানুষের বিকল্প আবাসের উপযোগী একটি গ্রহ খুঁজে পেতে সুদূর ছায়াপথগুলো অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তাঁরা প্রধানত যে শর্তগুলো বিবেচনায় রেখেছেন তা হচ্ছে নিকটতম সূর্য (নক্ষত্র) থেকে গ্রহটির দূরত্ব এবং পানির উপস্থিতি। এবারের নতুন গবেষণাটি ইঙ্গিত করছে টেকটনিকসও একটি গ্রহের জলবায়ুর ধরন নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর পৃষ্ঠ যে বিশাল কিছু খণ্ডে বিভক্ত তাদের টেকটনিক প্লেট বলে। এই সঞ্চরণশীল প্লেটগুলোর গতি-প্রকৃতিকেই বলা হয় টেকটনিকস। অধ্যাপক ফার্নসওয়ার্থ বলেন, ‘নাসা যদি শুধু একটি গ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে পারে, তবে আমি এমন একটি গ্রহ বেছে নেব, যেটিতে কোনো অতিমহাদেশ ছিল না। এখনকার পৃথিবীর মতো মহাদেশগুলো চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেই বেশি ভালো।’ সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান