নিউইয়র্ক ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্লুটোর মনোমুগ্ধকর ছবি প্রকাশ করল নাসা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • / ২২ বার পঠিত

সৌরমণ্ডলের দূরতম ‘বামন গ্রহ’ প্লুটোর স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের নাসার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট করা হয় রোববার।

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে প্লুটোর ছবির সঙ্গে কিছু তথ্য দিয়েছে নাসা; বলা হয়েছে, মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান নিউ হরাইজন সম্প্রতি প্লুটোর এই ছবিটি পাঠিয়েছে। সৌরমণ্ডল ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি তুলতে কয়েক বছর আগে এই নভযানটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিল নাসা।

ছবিতে প্লুটোর বরাফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। নাসার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলা হয়েছে, প্লুটোর কক্ষপথ থেকে ২২ হাজার ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ছবিটি তুলেছে নিউ হরাইজন।

প্লুটোর পুরো পৃষ্ঠ পুরু হিমবাহের স্তর দিয়ে আচ্ছাদিত। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পানি, নাইট্রোজেন ও মিথেন জমে তৈরি হওয়া পুরু এই বরফের স্তরের নীচেই রয়েছে এই গ্রহের পাথুরে পৃষ্ঠ। হিমবাহের নিচে প্লুটোতে জমাট বরফের সমুদ্র রয়েছে বলেও মনে করেন অনেক মহাকাশ বিজ্ঞানী।

১৯৩০ সালে মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী স্লাইড উইলিয়াম টমবাউ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফ্ল্যাগস্টাফ শহরের মানমন্দির (মহাকাশ পর্যবেক্ষণ স্থান) ল’ওয়েল অবজারভেটরিতে প্রথম গ্রহসদৃশ একটি বস্তু দেখতে পান এবং সেই বস্তুটিকে সৌরমণ্ডলের নবম গ্রহ বলে ঘোষণা করেন। রোমান পুরাণের পাতাল দেবতার নামে সেই গ্রহের নাম রাখেন ‘প্লুটো’।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্লুটো সৌরমণ্ডলের নবম গ্রহ হিসেবে স্বীকৃত ছিল; কিন্তু এই নিয়ে সমস্যা শুরু হয় ১৯৯২ সালে, প্লুটোর কিছু স্যাটেলাইট ইমেজ মহাকাশবিজ্ঞানীদের হাতে আসার পর। সেসব ইমেজ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন—‘গ্রহ’ হিসেবে পরিচিত মহাজাগতিক বস্তুগুলোর ন্যূনতম যতখানি আয়তন ও ভর থাকতে হয়, প্লুটোর আয়তন ও ভর তার তুলনায় অনেক কম।

এই তথ্য আসার পর প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা থাকবে কিনা প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে। পরে বিস্তর আলোচনা ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে বাতিল হয় প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা এবং এটি পরিচিতি পায় ‘বামন গ্রহ’ হিসেবে।

গ্রহজাতীয় এবং গ্রহ ও গ্রহাণুর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে বলা হয় বামন গ্রহ। বামন গ্রহের আয়তন ও ভর গ্রহের চেয়ে কম এবং গ্রাহণুর চেয়ে বেশি থাকে।

নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্লুটোর পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ৩টি রঙের দেখা মিলেছে— সাদা, তামাটে ও বাদামি। তবে গ্রহটির পৃষ্ঠের প্রধান রং বাদামি লাল।

পৃথিবী থেকে সূর্য ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে, আর প্লুটোর সঙ্গে সূর্যের দূরত্ব ৫৯০ কোটি কিলোমিটার। নিজ কক্ষপথে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর হিসেবে প্লুটোর লাগে ২৪৮ বছর। কক্ষপথে প্লুটোর গতি মাত্র ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার।

প্লুটোর প্রশস্ততা (ব্যাস) ২ হাজার ২৫০ কিলোমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক ব্যাসের তুলনায় এটি প্রায় অর্ধেক এবং চাঁদের ব্যাসের দুই তৃতীয়াংশ। সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে সৌরমণ্ডলের এই প্রাণনক্ষত্রের আলো ও তাপ সেভাবে পায় না প্লুটো। এই বামন গ্রহের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৩৮৭ ডিগ্রি।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্লুটোর মনোমুগ্ধকর ছবি প্রকাশ করল নাসা

প্রকাশের সময় : ১০:২২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

সৌরমণ্ডলের দূরতম ‘বামন গ্রহ’ প্লুটোর স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের নাসার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট করা হয় রোববার।

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে প্লুটোর ছবির সঙ্গে কিছু তথ্য দিয়েছে নাসা; বলা হয়েছে, মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান নিউ হরাইজন সম্প্রতি প্লুটোর এই ছবিটি পাঠিয়েছে। সৌরমণ্ডল ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি তুলতে কয়েক বছর আগে এই নভযানটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিল নাসা।

ছবিতে প্লুটোর বরাফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। নাসার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলা হয়েছে, প্লুটোর কক্ষপথ থেকে ২২ হাজার ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ছবিটি তুলেছে নিউ হরাইজন।

প্লুটোর পুরো পৃষ্ঠ পুরু হিমবাহের স্তর দিয়ে আচ্ছাদিত। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পানি, নাইট্রোজেন ও মিথেন জমে তৈরি হওয়া পুরু এই বরফের স্তরের নীচেই রয়েছে এই গ্রহের পাথুরে পৃষ্ঠ। হিমবাহের নিচে প্লুটোতে জমাট বরফের সমুদ্র রয়েছে বলেও মনে করেন অনেক মহাকাশ বিজ্ঞানী।

১৯৩০ সালে মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী স্লাইড উইলিয়াম টমবাউ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফ্ল্যাগস্টাফ শহরের মানমন্দির (মহাকাশ পর্যবেক্ষণ স্থান) ল’ওয়েল অবজারভেটরিতে প্রথম গ্রহসদৃশ একটি বস্তু দেখতে পান এবং সেই বস্তুটিকে সৌরমণ্ডলের নবম গ্রহ বলে ঘোষণা করেন। রোমান পুরাণের পাতাল দেবতার নামে সেই গ্রহের নাম রাখেন ‘প্লুটো’।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্লুটো সৌরমণ্ডলের নবম গ্রহ হিসেবে স্বীকৃত ছিল; কিন্তু এই নিয়ে সমস্যা শুরু হয় ১৯৯২ সালে, প্লুটোর কিছু স্যাটেলাইট ইমেজ মহাকাশবিজ্ঞানীদের হাতে আসার পর। সেসব ইমেজ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন—‘গ্রহ’ হিসেবে পরিচিত মহাজাগতিক বস্তুগুলোর ন্যূনতম যতখানি আয়তন ও ভর থাকতে হয়, প্লুটোর আয়তন ও ভর তার তুলনায় অনেক কম।

এই তথ্য আসার পর প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা থাকবে কিনা প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে। পরে বিস্তর আলোচনা ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে বাতিল হয় প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা এবং এটি পরিচিতি পায় ‘বামন গ্রহ’ হিসেবে।

গ্রহজাতীয় এবং গ্রহ ও গ্রহাণুর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে বলা হয় বামন গ্রহ। বামন গ্রহের আয়তন ও ভর গ্রহের চেয়ে কম এবং গ্রাহণুর চেয়ে বেশি থাকে।

নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্লুটোর পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ৩টি রঙের দেখা মিলেছে— সাদা, তামাটে ও বাদামি। তবে গ্রহটির পৃষ্ঠের প্রধান রং বাদামি লাল।

পৃথিবী থেকে সূর্য ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে, আর প্লুটোর সঙ্গে সূর্যের দূরত্ব ৫৯০ কোটি কিলোমিটার। নিজ কক্ষপথে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর হিসেবে প্লুটোর লাগে ২৪৮ বছর। কক্ষপথে প্লুটোর গতি মাত্র ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার।

প্লুটোর প্রশস্ততা (ব্যাস) ২ হাজার ২৫০ কিলোমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক ব্যাসের তুলনায় এটি প্রায় অর্ধেক এবং চাঁদের ব্যাসের দুই তৃতীয়াংশ। সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে সৌরমণ্ডলের এই প্রাণনক্ষত্রের আলো ও তাপ সেভাবে পায় না প্লুটো। এই বামন গ্রহের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৩৮৭ ডিগ্রি।