এলিয়েন খুঁজে পাওয়া ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’
- প্রকাশের সময় : ০৯:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩
- / ৯৩ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : মহাবিশ্বে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, অনেক বিজ্ঞানী এখন আর সে প্রশ্ন করেন না। বরং তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কবে সেই প্রাণের খোঁজ মিলবে? বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ আশাবাদী যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো দূরের কোনো গ্রহে জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে। বৃহস্পতি গ্রহে মিশন পরিচালনা করছেন, এমন একজন বিজ্ঞানী আরো একধাপ এগিয়ে বলছেন, বরফে ঢাকা এই গ্রহে কোনো প্রাণ না থাকলে সেটাও হবে অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহে জীবন থাকা সম্পর্কে ইঙ্গিত শনাক্ত করেছে। সেখানে পৃথিবীর মতো আরো অনেক গ্রহ রয়েছে বলে নাসা ধারণা করছে। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়া হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। সেজন্য এর মধ্যেই বেশ কিছু মিশন শুরু হয়েছে বা শুরু হতে যাচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্যাথরিন থেইম্যানস বলেন, অসীম নক্ষত্র এবং গ্রহের একটি মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করি। সেখানে অবশ্যই আমরাই শুধু একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারি না। তিনি বলেন, এই মহাবিশ্বে আমরাই একা আছি কি না, সে প্রশ্নে উত্তর খোঁজার মতো প্রযুক্তি এবং ক্ষমতা এখন আমাদের আছে।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এখন দূরের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারে। পৃথিবীর মতো জীবিত প্রাণী দ্বারা উৎপাদিত হয়, এমন রাসায়নিকের সন্ধান করতে পারে। গেল মাসের শুরুর দিকে সেখানে বড় ধরনের একটি আবিষ্কার হয়, ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাস শনাক্ত করা হয়, যা পৃথিবীতে সামুদ্রিক জীব দ্বারা উৎপাদন হয়ে থাকে। এই গ্রহটিকে বিজ্ঞানীরা ডাকেন ‘গোল্ডিলক্স জোন’ নামে। যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঐ গ্রহ ঘুরছে, তার থেকে এমন দূরত্বে সেটি রয়েছে, যাতে সেটির ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডা হয় না। সেখানে তরল পানি থাকার জন্যও সঠিক তাপমাত্রা রয়েছে, যা জীবন থাকার জন্য অপরিহার্য।
বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষজ্ঞ দল আশা করছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই তারা জানতে পারবেন যে, আগ্রহ উদ্দীপক এসব ইঙ্গিত সেখানে আসলেই জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কি না। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নিক্স মধুসূদন। তিনি বিবিসিকে বলেন, এসব ইঙ্গিত যদি সত্যি বলে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তা ‘জীবনের সন্ধান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকে আমূল বদলে দেবে। যদি আমরা এই গ্রহে জীবনের চিহ্ন খুঁজে পাই, তাহলে এই সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে যে, মহাবিশ্বে এরকম আরো জীবন থাকতে পারে।
তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, পাঁচ বছরের মধ্যে মহাবিশ্বের জীবন সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার একটি বড় পরিবর্তন হবে। কিন্তু যদি এই গ্রহে জীবনের খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে বিজ্ঞানীদের এই দলের তালিকায় আরো ১০টি গোল্ডিলক্স গ্রহ রয়েছে, যেগুলো নিয়ে তারা গবেষণা করবেন। এরপরেও আরো কিছু গ্রহের তালিকা রয়েছে তাদের কাছে।
মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে যেসব গবেষণা চলছে, তার মধ্যে এই প্রকল্প সেগুলোর মধ্যে একটি মাত্র। অন্য প্রকল্পগুলোর কিছু কিছু সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোয় প্রাণের সন্ধান করছে। আবার কিছু প্রকল্পে নজর দেওয়া হচ্ছে মহাকাশের আরো গভীরে।
নাসা ২০৩০ সাল নাগাদ ‘হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডব্লিউও) বা বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে। সেখানে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল চিহ্নিত করতে এবং পর্যালোচনা করতে সক্ষম হবে। এই দশকের শেষদিকে আসছে বিশাল বড় টেলিস্কোপ (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ-ইএলটি)। চিলির মরুভূমি থেকে সেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। অন্য টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় সেটিতে বড় আকারের আয়না থাকবে, ফলে সেটি গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল আরো ভালোভাবে দেখতে পারবে। এগুলো এতই অবিশ্বাস্য শক্তিশালী যে, শত শত আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ শনাক্ত করতে পারে।
আবার ভিনগ্রহ থেকে রেডিও সিগন্যাল আসছে কি না, তা নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা চলছে। সার্চ ফর এক্সটা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা করছে। যদিও বিশাল মহাবিশ্ব জুড়ে এলোমেলোভাবে চালানো এসব অনুসন্ধানে এখনো কোনো সম্মিলিত ফলাফল আসেনি, কিন্তু অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত হলে তারা তখন সেদিকে অনুসন্ধানের জন্য গুরুত্ব দিতে পারবে।
৩০ বছর আগেও অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে, এমন কোনো গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ ছিল না। কিন্তু এখন এরকম ৫ হাজারের বেশি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নিয়ে গবেষণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কেট২-১৮বি গবেষণা দলের একজন সদস্য কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির শুভজিত্ সরকার মনে করেন, সব উপাদান একটি আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, যদি আমরা জীবনের লক্ষণ খুঁজে পাই, তাহলে সেটি বিজ্ঞানের জন্য বিশাল এক বিপ্লব হবে। তার ফলে মানবজাতির নিজের এবং মহাবিশ্বে তার অবস্থানের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল একটি পরিবর্তন এনে দেবে। সূত্র: বিবিসি