নিউইয়র্ক ১২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সোমবার নিউইয়র্ক আসছেন প্রধান উপদেষ্টা : ইউনূস-বাইডেন বৈঠক মঙ্গলবার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৮৪ বার পঠিত

মিজানুর রহমান: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অত্যাসন্ন ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক আসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি-বিপ্লবের অপচেষ্টা রোধসহ অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে আপদকালীন সরকার। সেই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশন তথা বিশ্ব নেতাদের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও দফায় দফায় শিডিউল পরিবর্তন করার কারণে সফরটি হচ্ছে কি-না? তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু না, দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, একটি ছোট্ট ডেলিগেশন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্ক পৌঁছাচ্ছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ভবনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। এজন্য পূর্ব প্রস্তাবিত ২৪ সেপ্টেম্বরের বদলে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। তার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ এরই মধ্যে নিউইয়র্কগামী ফ্লাইট ধরেছেন।
ঢাকা ছাড়ার আগে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়াশিংটনের তরফে একটি শিডিউল বা ¯øট প্রস্তাব করা হয়েছে। শেষ সময়ে বৈঠকে এটি এসেছে জানিয়ে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শীর্ষ বৈঠকটি এখনো প্রস্তাবিত। কারণ নির্ধারিত সময়ে দু’জনের নিউইয়র্কে উপস্থিতিসহ অন্যান্য অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে যেকোনো ফর্মে বৈঠকটি হওয়ার বিষয়ে ঢাকা আশাবাদী। এদিকে নিউইয়র্কে পোস্টেড বাংলাদেশের এক কূটনীতিক বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের কারণেই প্রধান উপদেষ্টার সফর একদিন এগিয়ে এসেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেবলমাত্র টাইমিংয়ের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হচ্ছে না। যদিও বৈঠকটির বিষয়ে উভয়ের আগ্রহ ছিল। কিন্তু না, প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে পৌঁছানোর আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত একটি কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের মধ্যকার বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন: ওদিকে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এতে যোগ দিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। জুলাই-আগস্ট মাসে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে সফর সংক্রান্ত বক্তব্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্কে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীরা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল চার্টার্ড বিমানে নিউইয়র্ক সফর করবেন না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা টিম, মিডিয়া প্রতিনিধি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অপরিহার্য কর্মকর্তা মিলে ডেলিগেশন হবে মোট ৫৭ সদস্যের। তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চ-পর্যায়ের সভাসমূহে অংশগ্রহণের জন্য ভিন্ন ভাবে দুই দিন আগে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার অগ্রগতির জন্য একযোগে কাজ করা।’ এই প্রতিপাদ্যের ওপর এবারের অধিবেশন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকট, বহুপক্ষীয়তা ও আলোচনার পথ উপেক্ষা করার ফলে সৃষ্ট সংকট থেকে সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পাশাপাশি উদ্ভূত নানারকম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপের অনুপস্থিতি ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত অর্থবহ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এবছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে।
এ সংবর্ধনায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধান অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়েরর মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ডাচ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রæপের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড’র প্রশাসকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মিস্টার হোসেন বলেন, এ রকম সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ইতালির প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের আলোচনা চলছে। এছাড়াও, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে আমিও বেশ কয়েকটি ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবো। এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো- সামিট অব দ্য ফিউচার। এটি আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য সামিট অব দ্য ফিউচার-এ বিশ্ব নেতারা প্যাক্ট অব দ্য ফিউচার শীর্ষক একটি ভবিষ্যৎমুখী ঘোষণাপত্র গ্রহণ করবেন। এই প্যাক্ট অব দ্য ফিউচারের সংযুক্তি হিসেবে ডিক্লারেশন অন দ্য ফিউচার জেনারেশনস এবং গেøাবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট শীর্ষক আরও দু’টি ঘোষণাপত্র গৃহীত হবে বলে আমরা আশাবাদী। উল্লেখ্য, এই তিনটি ডকুমেন্টের চলমান সমঝোতা প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় ঢাকায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া আমি আরও যেসব সভায় অংশগ্রহণ করবো বলে আশা করছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মন্ত্রীপর্যায়ের সভা, কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সভা, স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বার্ষিক মন্ত্রীপর্যায়ের সভা এবং এশিয়া সহযোগিতা সংলাপের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা ইত্যাদি। এছাড়া আমরা রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করছি। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে বা বিশ্ব সভায় নতুন পদচারণা। বিশ্ব দরবারে বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি বিরাট সুযোগ। জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো প্রত্যেকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর উপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সবক’টিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মনে করে। সার্বিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে দেখা হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির, তবে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক হবে: ওদিকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নিউইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হচ্ছে না বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা-সাক্ষাৎ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনাদের দু’জনের নিউইয়র্কে উপস্থিতি একসঙ্গে হচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ছাড়ার পরপর প্রধান উপদেষ্টা পৌঁছাবেন। কাজেই তাদের সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে একধরনের টানাপোড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতেই হবে। সমস্যার সমাধান করতে হলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করবো এবং ওয়ার্কিং রিলেশন (কাজের সম্পর্ক) যেন হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করবো। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সোমবার নিউইয়র্ক আসছেন প্রধান উপদেষ্টা : ইউনূস-বাইডেন বৈঠক মঙ্গলবার

প্রকাশের সময় : ১২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিজানুর রহমান: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অত্যাসন্ন ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক আসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি-বিপ্লবের অপচেষ্টা রোধসহ অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে আপদকালীন সরকার। সেই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশন তথা বিশ্ব নেতাদের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও দফায় দফায় শিডিউল পরিবর্তন করার কারণে সফরটি হচ্ছে কি-না? তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু না, দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, একটি ছোট্ট ডেলিগেশন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্ক পৌঁছাচ্ছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ভবনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। এজন্য পূর্ব প্রস্তাবিত ২৪ সেপ্টেম্বরের বদলে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। তার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ এরই মধ্যে নিউইয়র্কগামী ফ্লাইট ধরেছেন।
ঢাকা ছাড়ার আগে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়াশিংটনের তরফে একটি শিডিউল বা ¯øট প্রস্তাব করা হয়েছে। শেষ সময়ে বৈঠকে এটি এসেছে জানিয়ে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শীর্ষ বৈঠকটি এখনো প্রস্তাবিত। কারণ নির্ধারিত সময়ে দু’জনের নিউইয়র্কে উপস্থিতিসহ অন্যান্য অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে যেকোনো ফর্মে বৈঠকটি হওয়ার বিষয়ে ঢাকা আশাবাদী। এদিকে নিউইয়র্কে পোস্টেড বাংলাদেশের এক কূটনীতিক বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের কারণেই প্রধান উপদেষ্টার সফর একদিন এগিয়ে এসেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেবলমাত্র টাইমিংয়ের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হচ্ছে না। যদিও বৈঠকটির বিষয়ে উভয়ের আগ্রহ ছিল। কিন্তু না, প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে পৌঁছানোর আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত একটি কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবেন। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের মধ্যকার বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন: ওদিকে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এতে যোগ দিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। জুলাই-আগস্ট মাসে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে সফর সংক্রান্ত বক্তব্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্কে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীরা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল চার্টার্ড বিমানে নিউইয়র্ক সফর করবেন না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা টিম, মিডিয়া প্রতিনিধি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অপরিহার্য কর্মকর্তা মিলে ডেলিগেশন হবে মোট ৫৭ সদস্যের। তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চ-পর্যায়ের সভাসমূহে অংশগ্রহণের জন্য ভিন্ন ভাবে দুই দিন আগে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার অগ্রগতির জন্য একযোগে কাজ করা।’ এই প্রতিপাদ্যের ওপর এবারের অধিবেশন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকট, বহুপক্ষীয়তা ও আলোচনার পথ উপেক্ষা করার ফলে সৃষ্ট সংকট থেকে সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পাশাপাশি উদ্ভূত নানারকম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপের অনুপস্থিতি ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত অর্থবহ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এবছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে।
এ সংবর্ধনায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধান অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়েরর মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ডাচ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রæপের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড’র প্রশাসকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মিস্টার হোসেন বলেন, এ রকম সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ইতালির প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের আলোচনা চলছে। এছাড়াও, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে আমিও বেশ কয়েকটি ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবো। এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো- সামিট অব দ্য ফিউচার। এটি আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য সামিট অব দ্য ফিউচার-এ বিশ্ব নেতারা প্যাক্ট অব দ্য ফিউচার শীর্ষক একটি ভবিষ্যৎমুখী ঘোষণাপত্র গ্রহণ করবেন। এই প্যাক্ট অব দ্য ফিউচারের সংযুক্তি হিসেবে ডিক্লারেশন অন দ্য ফিউচার জেনারেশনস এবং গেøাবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট শীর্ষক আরও দু’টি ঘোষণাপত্র গৃহীত হবে বলে আমরা আশাবাদী। উল্লেখ্য, এই তিনটি ডকুমেন্টের চলমান সমঝোতা প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় ঢাকায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া আমি আরও যেসব সভায় অংশগ্রহণ করবো বলে আশা করছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মন্ত্রীপর্যায়ের সভা, কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সভা, স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বার্ষিক মন্ত্রীপর্যায়ের সভা এবং এশিয়া সহযোগিতা সংলাপের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা ইত্যাদি। এছাড়া আমরা রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করছি। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে বা বিশ্ব সভায় নতুন পদচারণা। বিশ্ব দরবারে বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি বিরাট সুযোগ। জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো প্রত্যেকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর উপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সবক’টিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মনে করে। সার্বিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে দেখা হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির, তবে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক হবে: ওদিকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নিউইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হচ্ছে না বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা-সাক্ষাৎ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনাদের দু’জনের নিউইয়র্কে উপস্থিতি একসঙ্গে হচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ছাড়ার পরপর প্রধান উপদেষ্টা পৌঁছাবেন। কাজেই তাদের সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে একধরনের টানাপোড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতেই হবে। সমস্যার সমাধান করতে হলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করবো এবং ওয়ার্কিং রিলেশন (কাজের সম্পর্ক) যেন হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করবো। (দৈনিক মানবজমিন)