নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত : সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বতিল হওয়ায় প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভ
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ
- প্রকাশের সময় : ১০:৪২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৬৬ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের মূল পর্বে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দেবেন। নিউইয়র্ক সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে তাঁর ভাষণ প্রদানের কর্মসূচী রয়েছে বলে জাতিসংঘের সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। দেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী ড. ইউনূসের এটি হবে প্রথম ভাষণ। জাতিসংঘে তার যোগদান ঘিরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। ড. ইউনূস তার ভাষণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ‘জুলাই বিপ্লব’ ছাড়াও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, তাঁর সরকারের আগামী কর্মসূচী ও বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে নিউইয়র্ক পৌছার পর জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাঁর জন্য নির্ধারিত জাতিসংঘ ভবনের অদূরেই ম্যানহাটানের বিলাসবহুল ‘হায়াত গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল নিউইয়র্ক’ হোটেলে উঠেন। পরদিন মঙ্গলবার থেকেই তিনি ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করবেন। এই হোটেলেই তিনি চারদিন অবস্থান করছেন এবং হোটেলটি ‘প্রধান উপদেষ্টার’ মিনি কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের মূল মঞ্চে ভাষণ প্রদান ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচীতে অংশ নেওয়ার পর এদিন রাতেই তাঁর দেশের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করার কথা। প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা তিনি বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেন।
নিউইয়র্কের দেশী-বিদেশী এবং জাতিসংঘের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে ড, মুহাম্মদ ইউনূস সকলের মন জয় করেছেন। বলা যায়- ‘তিনি এলেন, জয় করলেন’। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠক, প্রেসিডেন্ট প্রদত্ত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মানে আয়োজিত নৈশ ভোজ আর সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফাস্ট লেডী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন আয়োজিত ‘ক্লিনটন গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ (সিজিআই) লিডার্স স্টেজ’ অনুষ্ঠানে যোগদান ও ড, ইউনূসের ব্যবহার-ভাষণ বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হচ্ছে। খোদ বাইডেন প্রশাসন ছাড়াও ভারত সহ বিভিন্ন দেশ আর সকল মহল ড. ইউনূসের সরকার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন।
জাতিসংঘ সফরের প্রথমদিন মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো: জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ইতালীর প্রেসিডেন্ট জর্জিয়া মেলোনী, সৌদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স শেখ শাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়াই এর সাথে সাক্ষাৎ, রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই লেবেল আলোচনা এবং ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত হাইলেভেল সাইড ইভেন্টে যোগদান। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ ভবনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার ড. ইউনূসের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো হোটেলেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সিএসও’র কোঅর্ডিনেটর কেরী কেনেডী, ইউএস এইড-এর এডমিনিষ্ট্রেটর সামান্তা পাওয়ার-এর সাথে সাক্ষাৎ, জাতিসংঘ ভবনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহাবাজ শরীফ, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক সাথে সাক্ষাৎ, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ভবনে আয়োজিত জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষ ইভেন্ট এবং গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন যোগদান। এছাড়াও জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত ‘স্যোসাল বিজনেস, ইয়্যুথ ও টেকনোলজী’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে যোগ দেন ড. ইউনূস। এদিন তিনি বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অজয় বাঙ্গা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভোন ডের লিয়ান, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী সালমান বিন হামাদ বিন ইশা আল খলিফা’র সাথে পৃথক পৃথকভাবে সাক্ষাৎ এবং দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট-এ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন ড. ইউনূস।
সফরের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বার্তা সংস্থা সিএনএস-এর সাথে সাক্ষাৎ, ফোর্বস ম্যাগাজিন আয়োজিত ইভেন্টে যোগদান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনী বিøঙ্কস-এর সাথে সাক্ষাৎ, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এন্ড বিসিআইইউ’র অনুষ্ঠানে যোগদান, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্থনী গোতেরাস, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্ক্রফ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিসি)-এর প্রকিকিউটর করীম এ এ খান, জাতিসংঘের রিফ্যুজি বিষয়ক হাই কমিশনের কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্দি, ইউএস সিনেটর ডিক দূবীন, আইএলও’র ডিরেক্টর জেনারেল গিলবার্ট এফ হুনুগবো, ইউএনডিপি’র এডমিনিষ্ট্রেটর অচিম স্টেইনারের সাথে সাক্ষাৎ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে নৈশভোজে যোগদান।
সফরের চতুর্থ এবং শেষদিন শুক্রবার ড. ইউনূসের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ মইজ্জু’র সাথে সাক্ষাৎ, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ, ভয়েস অব আমেরিকা’র বাংলা ও এনপিআর-এর সাথে সাক্ষাৎকার, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল রাবাব ফাতিমার সাথে সাক্ষাৎ এবং বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নিউইয়র্কে আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বতিল হওয়ায় প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ মিশন আর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের ব্যানারে তাঁর সংবর্ধনা আয়োজনের উদ্যোগ চলছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোন পক্ষই সংবর্ধনা আয়োজনের ব্যাপারে ঢাকা থেকে কোন গ্রীন সিগন্যাল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়। যদিও কোন কোন পক্ষ থেকে হোটেল পর্যন্ত বুকিং করাও হয়েছিলো। কমিউনিটির কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতে বাংলাদেশের সরকান প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বা সরাসরি কোন মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব না হলেও কনস্যুলেটের সহায়তায় ভার্চুয়ালী প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজিত হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের মতামত দেশের সরকার প্রধানের সাথে শেয়ার করতে পারতেন। কেননা, দেশের ‘জুলাই বিপ্লব’ সফল করতে প্রবাসীরাও অসামান্য অবদান রেখেছেন। এছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সাথে ‘সংবাদ সম্মেলন বা মতবিনিময়’ করতে পারতেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান- এমন মতামত জানিয়েছেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান। যা অতীতে হয়ে আসছে।