যুদ্ধ নয়, শান্তির পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা বন্ধের আহবান : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- প্রকাশের সময় : ১২:১৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৩৩ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতিসংঘ (নিউইয়র্ক) থেকে: জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৭৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ নয়, মানবকল্যাণ চাই, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। তিনি শান্তির পক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানিয়ে বলেছেন যুদ্ধ বা একতরফা নিষেধাজ্ঞা বা পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা কারো কোন জাকির জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। বরং আরা মানবিক বিশ্ব চাই, শান্তি চাই। তিনি যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আকুল আহŸান জানিয়ে বলেন, সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ, তৈরী হোক উত্তম ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বন্ধের আহবান জানিয়ে বলেন, সারা বিশ্বে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘ সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মিয়ানমারে অস্থিরতা, সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুরূহ করে তুলেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান আঞ্চলিক শান্তি, অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সবার জোড়ালো সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধের দাবি জানান।
শুক্রবার নিউইয়র্ক সময় বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দেন। বরাবরের মতো এবারও তিনি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। এনিয়ে তিনি ১৭ বার সরাসরি জাতিসংঘে ভাষণ দিলেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে সেই ভাষণ অনুবাদ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী কভিড প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারির মত একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ আজ জর্জরিত। এ বছরের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য : “একটি সঙ্কটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ: আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাসমূহের রূপান্তরমূলক সমাধান”। এ সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলায় এবং আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ আকাক্সক্ষার প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মানবাধিকার ও শান্তির প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি কভিড মহামারির শিক্ষা নিয়ে এটি সংস্কারের আহŸান জানান। প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালনি সংকটের মতো বৈশ্বিক প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধানের ওপর জোর দিয়ে বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ব্যতীত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনে বাংলাদেশের ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়” উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে। বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বক্তব্য এখনও সমভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড ও পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।