নিউইয়র্ক ১১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক রেজুলেশন উত্থাপন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১
  • / ৫৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্বের শিকার বিশ্বের ১.১ বিলিয়ন মানুষকে ২০৩০ সালের মধ্যে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ করে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে শুক্রবার (২৩ জুলাই) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো “সকলের জন্য দৃষ্টি : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ” শীর্ষক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক প্রথম রেজুলেশন। ‘ফ্রেন্ডস অব ভিশন’ এর পক্ষে রেজুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। উপস্থিত সকলে রেজুলেশনটিকে অনন্য একটি রেজুলেশন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ বৈশ্বিক সংস্থা-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিরাময়ে সর্বসম্মতভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হল। বিভিন্ন পর্যায়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার শিকার বিশ্বের ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের চক্ষু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমে ব্যাপকভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে দৃষ্টি বা ভিশন বিষয়ক এই গ্রæপ অব ফ্রেন্ডস। রেজুলেশনটি উত্থাপনের সময় বাংলাদেশের সাথে যোগ দেয় গ্রæপটির অপর দুই সহ-সভাপতি ‘এন্টিগুয়া ও বারবাডোস’ এবং আয়ারল্যান্ড। এতে সর্বমোট ১১৫টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা করে।
সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রেজুলেশনটিকে বিশ্বের সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য উৎসর্গ করেন এবং সকল দেশের প্রতি আহŸান জানান যাতে দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সকল জনগণকে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবায় পূর্ণ প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। রেজুলেশনটিতে সুদৃঢ় কিছু ম্যান্ডেট/বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং কোটি কোটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কাছে শক্তিশালী আশার বার্তা পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “আজকের এই রেজুলেশনটি চক্ষু সেবার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহুর্ত। রেজুলেশনটিতে নেতৃত্ব দিতে পেরে বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে”। তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের ১.১ বিলিয়ন মানুষ প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিয়ে বসবাস করছে। প্রতিরোধযোগ্য দৃষ্টিহীনতা একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যার জন্য প্রয়োজন একটি বৈশ্বিক সমাধান-এর জন্যই আমরা আজ ঐক্যমতে পৌঁছুতে পেরেছি। আমাদের এই ঐক্যমত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ, তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জীবন ধারায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস”।
বৈশ্বিকভাবে পরিচালিত একটি জরিপের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা এবং অন্ধত্বজনিত কারণে মানুষের উৎপাদনশীলতা হারানোর ক্ষতির হিসেব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে যা একটি বিশাল বৈশ্বিক আর্থিক বোঝা। চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ শুধু শিক্ষা থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার ৪৪% হ্রাস করেনা বরং এটি বেতনভূক্ত চাকুরি পাবার সুযোগ ১০% বাড়িয়ে দেয়। অন্ধত্বের ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতাও একটি ইস্যু, কারণ দেখা গেছে ৫৫% অন্ধ মানুষ মহিলা বা বালিকা; পুরুষদের তুলনায় তাদের অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ৮% বেশি।
স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “বলাই বাহুল্য বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে। এরফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এসকল মানুষ তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারছেনা। রেজুলেশনটি এই অবস্থা পাল্টাতে ভূমিকা পারবে বলে আমার বিশ্বাস”।
রেজুলেশনটিতে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জাতীয় প্রতিশ্রæতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও দাতাদের লক্ষ্য-ভিত্তিক অর্থায়ন, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব মোকাবিলায় সহযোগিতা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। জাতিসংঘ যাতে এর সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মাধ্যমে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি তাদের কাজের সাথে যুক্ত করে নেয় সে অনুরোধও জানানো হয়েছে এতে। এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং এ সংক্রান্ত পরবর্তী পর্যালোচনায় চক্ষু সেবার জন্য নতুন একটি লক্ষ্য অন্তর্ভূক্ত করারও আহŸান জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে।
যথাযথ চক্ষু স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার নেই এমন মানুষগুলোর প্রায় ৯০ ভাগ বাস করে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। ২০১৮ সালের এক হিসেব মতে বাংলাদেশে ৩০ ও তদুর্ধ বয়সের অন্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং ৬০ লাখেরও বেশি মানুষের চশমা পরিধান বা অন্য কোনো উপায়ে দৃষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন হয়।
উল্লেখ্য ১৯৯৯ সালে গৃহীত ‘ভিশন-২০২০’ শীর্ষক বৈশ্বিক পদক্ষেপ স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক রেজুলেশন উত্থাপন

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১

নিউইয়র্ক: প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্বের শিকার বিশ্বের ১.১ বিলিয়ন মানুষকে ২০৩০ সালের মধ্যে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ করে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে শুক্রবার (২৩ জুলাই) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো “সকলের জন্য দৃষ্টি : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ” শীর্ষক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক প্রথম রেজুলেশন। ‘ফ্রেন্ডস অব ভিশন’ এর পক্ষে রেজুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। উপস্থিত সকলে রেজুলেশনটিকে অনন্য একটি রেজুলেশন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ বৈশ্বিক সংস্থা-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিরাময়ে সর্বসম্মতভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হল। বিভিন্ন পর্যায়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার শিকার বিশ্বের ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের চক্ষু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমে ব্যাপকভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে দৃষ্টি বা ভিশন বিষয়ক এই গ্রæপ অব ফ্রেন্ডস। রেজুলেশনটি উত্থাপনের সময় বাংলাদেশের সাথে যোগ দেয় গ্রæপটির অপর দুই সহ-সভাপতি ‘এন্টিগুয়া ও বারবাডোস’ এবং আয়ারল্যান্ড। এতে সর্বমোট ১১৫টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা করে।
সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রেজুলেশনটিকে বিশ্বের সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য উৎসর্গ করেন এবং সকল দেশের প্রতি আহŸান জানান যাতে দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সকল জনগণকে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবায় পূর্ণ প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। রেজুলেশনটিতে সুদৃঢ় কিছু ম্যান্ডেট/বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং কোটি কোটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কাছে শক্তিশালী আশার বার্তা পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “আজকের এই রেজুলেশনটি চক্ষু সেবার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহুর্ত। রেজুলেশনটিতে নেতৃত্ব দিতে পেরে বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে”। তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের ১.১ বিলিয়ন মানুষ প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব নিয়ে বসবাস করছে। প্রতিরোধযোগ্য দৃষ্টিহীনতা একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যার জন্য প্রয়োজন একটি বৈশ্বিক সমাধান-এর জন্যই আমরা আজ ঐক্যমতে পৌঁছুতে পেরেছি। আমাদের এই ঐক্যমত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ, তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জীবন ধারায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস”।
বৈশ্বিকভাবে পরিচালিত একটি জরিপের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা এবং অন্ধত্বজনিত কারণে মানুষের উৎপাদনশীলতা হারানোর ক্ষতির হিসেব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে যা একটি বিশাল বৈশ্বিক আর্থিক বোঝা। চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ শুধু শিক্ষা থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার ৪৪% হ্রাস করেনা বরং এটি বেতনভূক্ত চাকুরি পাবার সুযোগ ১০% বাড়িয়ে দেয়। অন্ধত্বের ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতাও একটি ইস্যু, কারণ দেখা গেছে ৫৫% অন্ধ মানুষ মহিলা বা বালিকা; পুরুষদের তুলনায় তাদের অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ৮% বেশি।
স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “বলাই বাহুল্য বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে। এরফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এসকল মানুষ তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারছেনা। রেজুলেশনটি এই অবস্থা পাল্টাতে ভূমিকা পারবে বলে আমার বিশ্বাস”।
রেজুলেশনটিতে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জাতীয় প্রতিশ্রæতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও দাতাদের লক্ষ্য-ভিত্তিক অর্থায়ন, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব মোকাবিলায় সহযোগিতা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। জাতিসংঘ যাতে এর সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মাধ্যমে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি তাদের কাজের সাথে যুক্ত করে নেয় সে অনুরোধও জানানো হয়েছে এতে। এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং এ সংক্রান্ত পরবর্তী পর্যালোচনায় চক্ষু সেবার জন্য নতুন একটি লক্ষ্য অন্তর্ভূক্ত করারও আহŸান জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে।
যথাযথ চক্ষু স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার নেই এমন মানুষগুলোর প্রায় ৯০ ভাগ বাস করে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। ২০১৮ সালের এক হিসেব মতে বাংলাদেশে ৩০ ও তদুর্ধ বয়সের অন্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং ৬০ লাখেরও বেশি মানুষের চশমা পরিধান বা অন্য কোনো উপায়ে দৃষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন হয়।
উল্লেখ্য ১৯৯৯ সালে গৃহীত ‘ভিশন-২০২০’ শীর্ষক বৈশ্বিক পদক্ষেপ স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।