জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ : দ্রুত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই

- প্রকাশের সময় : ১০:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৬৯৫ বার পঠিত
জাতিসংঘ থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ: জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি। তাই তাদেরই রহিঙ্গাদের বিষয়টির সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমান সরকারের মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কার্যত মিয়ানমার কোন শর্তই মানছে না। এজন্য তিনি জাতিসংঘ সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি কামনা সহ যেসকল দেশ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেসব দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতদিন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হতে ততদিন বাংলাদেশ সাধ্যমতো তাদের সুস্থ্য পরিবেশে সেবা দিয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তাঁর সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন ও অগ্রতির কর্মকান্ড তুলে ধরে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বের সকল দেশকেই ঐক্যবদ্ধ হিসেবে কাজ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের এবারের সাধারণ অধিবেশনে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্ক এসে পৌছান এবং পরদিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকেই জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয়া ছাড়াও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্পের নৈশভোজে অংশ নেন। আরো উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায়। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত নয় বারের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিলেন। আর যেকোন দেশের সরকার প্রধান হিসেবে সর্বাধিক ১৫ বার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিলেন শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্ক সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা) জাতিংঘের মূল ভবনের অ্যাসেম্বলী হাউজে তার ভাষণ শুরু করেন এবং তিনি ১৯ মিনিট ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের মধ্যে জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সহ অন্যান্যরা অ্যাসেম্বলী হাউজে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হলে দর্শক গ্যালারী থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা করতালী দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ত্বের সাথে তুলে ধরেন। এসময় তিনি নিজের শারনার্র্থী থাকা অবস্থার সাথে রোহিঙ্গাদের তুলনা করে বলেন, মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক মহলের বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশ আহত হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎস মিয়ানমারে তাই এর সমাধানও সেখানেই হতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফিরে যেয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আন্তজার্তিক শান্তিরক্ষী মিশনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাংলাদেশের সাত হাজারেরও বেশি সদস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান ধারন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, সরকার প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধেও কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসকে বাংলাদেশের মাটিতে কার্যক্রম চালাতে দিবে না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তার সরকারের অবস্থান ‘জিরো’ টরারেন্স।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৩ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিদ্যুত স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের স্থান। প্রধনমন্ত্রী পানি সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকবো। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এর জন্য তিনি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকেই দ্বায়িত্ব পালন করার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সমর্থনের কথা পূণর্ব্যক্ত করেন এবং ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে বিশ্বকে হিংসা হানাহানি ভুলে শান্তির পথে হাটারও আহবান জানান।
এদিকে নিউইয়র্ক সফরের ৫ম দিন বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইইউ’র সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও মিয়ানমার সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সাথেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ ভবনেই পূর্বনিধারিত বৈঠকে অংশ নেন এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রপতির সাথেও। অপরদিকে ইউএসএইচসিআর এবং ইউনিসেফের প্রেসিডেন্টদের সাথেও আলাদা আলাদা বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি বৈঠকেই তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের টেকসই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতি জোর আহ্বান জাানন।
সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আল ওথেইমিনও বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারা বিশ্বে মুসলমানেরা কেন নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা সদস্য দেশগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। যদি কোনো সমস্যা থেকেই থাকে তবে তা দ্বিপক্ষীয় অথবা আঞ্চলিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। অপর এক সভায় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসাবে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছন বলে জানান। বৃহস্পতিবার বিকালের এই সভায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত ছিলেন।