এক টুকরো সরকারি জমি পেয়েও ঘর বানাতে পারলাম না: ঋতুপর্ণা চাকমা

- প্রকাশের সময় : ০২:১৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
- / ৯৩ বার পঠিত
২০২২ ও ২০২৪ সালে টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ঋতুপর্ণা চাকমা। স্বীকৃতি হিসেবে এই কৃতি খেলোয়াড়কে একটি জমি বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। তবে ঋতুপর্ণার জন্য প্রশাসনের বরাদ্দকৃত জমিতে বসতঘর তুলতে বাধার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে আক্ষেপ করে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বিশাল স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঋতুপর্ণা। আক্ষেপ করে বলেছেন, ঘরহীন ছিলাম। এক টুকরো সরকারী জমি পেলাম তাও কিছু মানুষ তা দখল করে নিলো। তবে কারা তার বসতঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে সেটি খোলাসা করেননি। এ নিয়ে ঋতুপর্ণা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কারা বাধা দিচ্ছে সে প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বক্তব্য জানাননি কেউই। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।
২০২৪ সাফের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা এই মিডফিল্ডারের অভিযোগ, “এতদিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু এরইমধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি, কোনো এক মহল থেকে বাধা আসতে শুরু করেছে। তাহলে আমার ঘাগড়ায় কি কোন ঠাঁই নেই? এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলছি, দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, নিজে জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পাইলাম কই?”
কারা বসতঘর তুলতে বাধা দিচ্ছে—জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা বলেন, “২০২২ সালে আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি ও বাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়াসহ নানা আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপরে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বদলি হয়ে গেলে সেই আশ্বাস শুধু আশ্বাসে থেকে যায়। আমিও এত মাথা ঘামাইনি এসব নিয়ে। পরে আবার ২০২৪ সালে সাফ জয়ী হওয়ায় পরে রাঙ্গামাটিতে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হলে সেখানে আমি আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরি এবং জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা আমাকে একটা ঘর ও রাস্তা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত পরশু আমাকে ইউএনও স্যার ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে বাড়ি করে দেওয়ার জায়গা দেখান এবং জায়গাটি মাপ দেওয়া হয়। সেই জায়গাটা আমাকে দেওয়া হবে এবং আমার ঘর নির্মাণ করা হবে বলে জানান।” ফেসবুকে দেওয়া ঋতুপর্ণার পোস্ট। তবে বসতঘর নির্মাণের আগেই হুমকি পাওয়া নিয়ে ঋতুপর্ণা আরও বলেন, “পরদিন আমি বাড়িতে এলে আমাকে বলা হলো সেই জায়গাটা নাকি ৭০ জনের মতো একটা কমিটির দখলে। সেই জায়গাটা যদি নিই তাহলে আমি বিতর্কিত হবো এবং নানা ধরণের কথাবার্তা বলা হয় আমাকে। যদিও তারা কোন কমিটির এবং তারা কে এসব কিছুই জানি না। বিষয়টি আমি ইউএনও এবং এডিসিকে (অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক) জানিয়েছি। বিষয়টি তারা দেখবেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে।”
এ নিয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলা ইউএনও কাজী আতিকুর রহমান বলেছেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গত কয়েকদিন আগে আমি ঋতুপর্ণাসহ সেই জায়গাটা দেখে এসেছি। কাল (শুক্রবার) বিকেলে শুনেছি কেউ একজন ঋতুপর্ণাকে ফোন করে বলেছে, সেই জায়গাটা ওরা একজনের থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে এখন ঋতুপর্ণা যদি সাত লাখ টাকা দেয় তাহলে সে জায়গাটা পাবে। না হলে সেখানে ঘর নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। শুনে আমি আশ্চর্য হলাম যে, খাস জায়গায় তো দখলে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের যদি জায়গা নিয়ে আপত্তি থাকে তাহলে তারা আমাদের কাছে আসুক। প্রশাসনের পক্ষে থেকে ঋতুপর্ণাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা বিষয়টি দেখছি। এরইমধ্যে এডিসি স্যারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। কেউ বললে তো আর হবে না, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেছেন, “ঋতুপর্ণা চাকমার ফেসবুক পোস্টটি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা সরকারি জায়গা সরকারি টাকায় বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা তাকে (ঋতুপর্ণা) ঘর তুলে দেব। এখানে অন্য কারও সুযোগ নেই কিছু করার। যারা বলেছে তারা কী বুঝে বলেছে নাকি না বুঝে বলেছে সেটা আমরা বলতে পারব না।” কারা বাধা দিচ্ছে—জানতে চাইলে এডিসি বলেন, “এ বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নেব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।” ঋতুপর্ণার জন্ম রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে। গ্রামের বাড়ি মগাছড়িতে হলেও তার যাতায়াতের সুবিধার্থে উপজেলার ঘাগড়া বাজারের পাশেই সরকারি খাস জায়গা বরাদ্দ দেয় প্রশাসন।