১৯৮২ বিশ্বকাপ: স্পেনের বিশ্বকাপ কলঙ্কিত করেছিল জার্মানি-অস্ট্রিয়া

- প্রকাশের সময় : ০৭:৫২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২
- / ৬৮ বার পঠিত
এখনকার সময় হলে কি হতো জানি না, তবে সেই সময় সেই আশির দশকে ম্যাচ গড়াপেটার এক কুশ্রী নির্দশন করেও পার পেয়েগিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি আর অস্ট্রিয়া। সেবারই প্রথম ১৬ দলের পরিবর্তে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ২৪ দল। আফ্রো-এশীয় ভোটে তখন ফিফার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন হোয়াও আভেলানজে। ভোটের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বকাপে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে দল বাড়ানো হবে।
সেই হিসেবেই সেবার আফ্রিকা থেকে চমক নিয়ে এসেছিল আলজেরিয়া। গ্রুপ পর্বেই পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে বাঘাবাঘা সব ক্রীড়া সাংবিদকদের ভবিতব্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। সেবার একটা পর্যায়ে গিয়ে হিসাবটা দাঁড়ায় এমন যে, দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে ১-০ গোলে হারালে পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া দু’দলই উঠে যাবে পরের ধাপে। বাদ পড়বে আলজেরিয়া। অন্ধকারাচ্ছ্বন্ন আফ্রিকার দেশকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় দেওয়ার ‘শ্বেতপত্র’ যেন তৈরি করেই রেখেছিল জার্মান আর অস্ট্রিয়রা।
সেদিন ২৫ জুন, ১৯৮২। স্পেনের গিজনের স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ইতিহাসে র্নিলর্জ্জতম ম্যাচটি হয়েছিল। ম্যাচের দশ মিনিটের মধ্যেই জার্মানি করে ১-০ গোল এগিয়ে যায়। ম্যাচের বাকি ৮০ মিনিট আর কোন খেলাই হয়নি। নিজেদের মধ্যে বল কাটাকাটি করে সময় পার করে দিয়েছিল, কখনও ভুল করে প্রতিপক্ষের গোলমুখে বল গেলেও তা ফিরিয়ে মাঝমাঠে নিয়ে এসেছিল অস্ট্রিয়ার খেলোয়াররা।
ফুটবলকে কলঙ্কের পাকে ডুবিয়ে বাকি ৮০ মিনিট কাটিয়েছিল তারা। যা দেখে মাঠে থাকা অস্ট্রিয়ার ধারাভাষ্যকাররা টেলিভিশন দর্শকদের অনুরোধ করেছিলেন টিভি বন্ধ করে দিতে। ম্যাচের শেষ আধ ঘন্টা নিজেরাই ধারাভাষ্য দেওয়া বন্ধ রেখেছিলেন। পশ্চিম জার্মানির ধারাভাষ্যকার এরেরহার্ড স্টানজেক স্বদেশী ফুটবলারদের এই কুশ্রী মনোভাবে কেঁদে ফেলেছিলেন বলতে বলতে – ‘যা হচ্ছে মাঠে, তা চুড়ন্তা নোংড়ামি। ফুটবলের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।’
জার্মান ফুটবলার রুমেনিগেরা অবশ্য কলার তুলেই বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানোর গর্ব অনুভব করেন আজও। সেদিন সেই গ্যালারিতে আলজেরিয়ার প্রচুর সমর্থক কেঁদেছিলেন। গ্যালারি থেকে ডলার তুলে দেখিয়েও ছিলেন বিশ্বের ফুটবল সমর্থকদের, বোঝাতে যে ঠিক কি হয়ে চলেছে মাঠে। কিন্তু ফিফা কর্ণপাত করেনি। সেই বিরাশিতে এমন অভিযোগ প্রমাণের মতো যথেষ্ট প্রশাসনিক ব্যাবস্থাও ছিল না তাদের হাতে। সেমিফাইনালেও বির্তকিত হয় জার্মানির ম্যাচটি। প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে ১-১ থাকে ম্যাচটি।
অতিরিক্ত সময়ে গিয়েও ৩-৩। পেনাল্টিতে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু ওই ম্যাচে জার্মান গোলরক্ষক টোনি শু্যমাখার। ফরাসি স্ট্রাইকার বাতিস্তর ওপর রাগে অন্ধ হয়ে ঝাপিয়ে পড়েন শু্যামাখার। আহত বাতিস্ত অজ্ঞান হয়ে তিন মিনিট ওখানেই পড়েছিলেন। পরিষ্কার লাল কার্ড, কিন্তু ডাচ রেফারি কর্ভার এবং লাইন্সম্যান কিছুই দেখেননি। তারা স্ট্রেচার ডাকিয়ে মাঠ থেকে সংজ্ঞাহীন ফরাসি ফুটবলারকে বের করে নিয়ে যেতে বলেন !
১১ জুলাই বার্নাব্যুতে ইতালি-পশ্চিম জার্মানি ফাইনাল। রেফারি ব্রাজিলের কোয়েলা, পশ্চিম জার্মানি আর এই রেফারিকে বাগে আনতে পারেননি। ফাইনালে ৩-১ হেরে যায় জার্মানরা। আর তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ইতালি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ওই বিশ্বকাপটি কলঙ্কিত হয়ে আছে ওই পশ্চিম জার্মানি-অস্ট্রিয়ার সমঝোতার ম্যাচটির জন্য।