টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০২৪
শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় রেকর্ড গড়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ
- প্রকাশের সময় : ০১:৫৮:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
- / ৯০ বার পঠিত
বাংলাদেশের ঈদুল আজহার আনন্দে বাড়তি খুশির উপলক্ষ এনে দিলেন ক্রিকেটাররা। শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় ছোট্ট পুঁজি নিয়েও বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নেপালকে হারিয়ে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠে গেছে বাংলাদেশ। গ্রæপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে সোমবার (১৭ জুন) কিংস্টনে নেপালকে ২১ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। ১০৭ রানের লক্ষ্যে ৪ বল বাকি থাকতে ৮৫ রানে গুটিয়ে যায় নেপাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে কম রান করে জেতার নজির নেই আর কোনো।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তানজিম হাসান সাকিব। ৪ ওভারে ২ মেডেনসহ ৭ রানে ৪ উইকেট নেন এই ডানহাতি তরুণ পেসার। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ¯্রফে ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেন দু’জন। তানজিমের ২৪ ডেলিভারির ২১টি থেকেই রান করতে পারেনি নেপাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা রেকর্ড। এদিকে এই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে ৩টি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১০৬ রানের সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে ইনিংসের ৎুথম বলেই বোলার সোমপাল কামিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তানজিদ তামিম। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে দীপেন্দ্র সিংয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শানমশ। এতে দুই ওভারেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তানজিদ, শানমশ, লিটনের পর প্যাভিলিয়নে ফেরেন হৃদয়ও। এতে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
একের পর এক উইকেট হারাতে হারাতে শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে ৮ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের। সেখান থেকে রিশাদের ৭ বলে ১৩ এবং তাসকিনের অপরাজিত ১৫ বলে ১২ রানের কল্যাণে ১০০ পার করে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ১৭ রান আসে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে। মাহমুদ উল্লাহ করেন ১৩ রান। সোমপাল কামি, দীপেন্দ্র সিং, রোহিত ও লামিচানে ২টি করে উইকেট নেন।
জবাবে ব্যাট করতে নামা নেপালের ইনিংসের তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই ওভারে উইকেট হারানো নেপাল পাওয়ারপ্লেতে হারায় ৪ উইকেট। সপ্তম ওভারে তানজিম সাকিব চতুর্থ শিকার করেন। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারানো নেপালের ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় ৭৮ রানে। ৫২ রানের পার্টনারশিপ করেন দীপেন্দ্র সিং ও কুশল মাল্লা। তবে বেশি দূর যেতে পারেনি নেপাল। ৮৫ রানে অল আউট হয় তারা।
বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে দুই মেডেনসহ ৪ উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ৩ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। শেষ ২ বলে ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
মূলত: তানজিম-মুস্তাফিজ জুটির তোপে ২৬ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নেপাল। এরপর কুসাল মাল্লা ও দিপেন্দ্র সিং ঐরির ব্যাটে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। দু’জনে গড়েন ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি।
একটা পর্যায়ে জয়ের জন্য নেপালের দরকার ছিল ২৪ বলে ৩০ রান, হাতে ৫ উইকেট। এমন সময় বোলিংয়ে এসে কুসলকে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। দলের ১৭তম সেই ওভারে ¯্রফে ১ রান দিয়ে নেন কুসলের (৪০ বলে ২৭ রান) উইকেট। নিজের শেষ ও দলীয় ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ নেন উইকেট মেডেন। ৩১ বলে ২৫ রানের লড়াকু ইনিংস খেলা ঐরিকে কট বিহাইন্ড করেন বাঁহাতি পেসার।
শেষ ওভারে নেপালের দরকার ছিল ২২ রান। প্রথম দুই বলেই বাকি দুই উইকেট তুলে নেন আগের তিন ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকা সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনার ৯ রানে নেন ২ উইকেট। কোনো রান না যোগ করেই শেষ ৪ উইকেট হারায় নেপাল।
বাংলাদেশের দিনের শুরুটা হয়েছিল প্রথম বলেই তানজিদ হাসানের অদ্ভুদ শটে ক্যাচ আউটে। ইনিংসের শেষ হয় মুস্তাফিজুর রহমানের রান আউটে। ৩ বল বাকি থাকতে ১০৬ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। শেষ জুটিতে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের ১৮ রানও ছিল ম্যাচের প্রেক্ষাপটে মহামূল্য।
লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট তো এখন প্রতিপক্ষের জন্য ধরাবাধাই। এ দিন পজিশন বদলেছিলেন দু’জন। ওপেনিংয়ে ফেরেন লিটন, তিনে শান্ত। লাভ কিছু হয়নি। ১২ বলে ১০ করে বিদায় নেন লিটন, ৫ বলে ৪ রান করে শান্ত। এই সংস্করণে লিটনের ফিফটি নেই ১৫ ইনিংস ধরে, শান্তর ১২ ইনিংস। এই বিশ্বকাপে চার ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়কের রান ৪৪ বল খেলে ২৬। ইনিংসে ২০ রান নেই কারো। সর্বোচ্চ ১৭ রান (২২ বলে) সাকিবের। দুটি করে উইকেট নেন নেপালের চার বোলার।
জাকের আলিকে বোল্ড করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন সন্দীপ লামিছানে। মাত্র ৫৪ ম্যাচ লাগল তার। এর চেয়ে দ্রæত ১০০ উইকেট নিতে পেরেছেন শুধু রাশিদ খান, ৫৩ ম্যাচে। এছাড়া ওয়ানডেতে একশ উইকেটে লামিছানেই দ্রæততম। মাত্র ৪২ ম্যাচে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নেপালের লেগ স্পিনার।
প্রায় ১৭ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। এরপর পেরিয়েছে সাতটি আসর। তবে এতদিন গ্রæপ পর্বের বাধা উৎরাতেই পারেনি টাইগাররা। এবার নেপালকে উড়িয়ে সেই আক্ষেপ শেষ করল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১০৬ (তানজিদ ০, লিটন ১০, শান্ত ৪, সাকিব ১৭, হৃদয় ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৩, জাকের ১২, তানজিম ৩, রিশাদ ১৩, তাসকিন ১২*, মুস্তাফিজ ৩; কামি ৩-০-১০-২, ঐরি ৩.৩-০-২২-২, রোহিত ৪-০-২০-২, লামিছানে ৪-১-১৭-২, ভুরতেল ৪-০-২২-০, আবিনাশ ১-০-১০-০)
নেপাল: ১৯.২ ওভারে ৮৫ (ভুরতেল৪, আসিফ ১৭, ০, রোহিত ১, জোরা ১, মাল্লা ২৭, ঐরি ২৫, ঝা ০, কামি ০, লামিছানে ০*, আবিনাশ ০; তানজিম ৪-২-৭-৪, তাসকিন ৪-০-২৯-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৭-৩, রিশাদ ৩-০-১৫-০, সাকিব ২.২-০-৯-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৫-০)
ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: তানজিম হাসান সাকিব
ছবি: আইসিসি