নিউইয়র্ক ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শোক, লজ্জা ছাপিয়ে অবিশ্বাস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮
  • / ৭২৭ বার পঠিত

সামন হোসেন, মস্কো (রাশিয়া) থেকে: রাশিয়াজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের হাতে নিহত রুশদের কমপক্ষে ১৭টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। প্রতিদিন স্তম্ভগুলোতে ফুল রেখে যায় কেউ না কেউ। বুধবার (২৭ জুন) বিকালে সেখানে ফুলের সংখ্যাটা নিশ্চয় বেড়েছে জার্মানদের বিদায়ে। রাশিয়ার কোনো না কোনো পরিবারের কেউ না কেউ মারা গিয়েছেন সেই যুদ্ধে। তারাই হয়তো ফুল নিয়ে হাজির হয়েছেন সেই সব স্মৃতিস্তম্ভে। তাইতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ফুটবল বিশ্বযুদ্ধে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় অন্যরা ব্যথিত হলেও রুশরা খুশিই হয়েছেন! মুখে ফুটে না বললেও তাদের আকার ইঙ্গিতে তেমনটাই বোঝা যায়। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানদের বিদায়ে বিশ্বকাপ যে রং হারিয়েছে সেটাও মানছেন তারা।

১৪ জুন থেকে ২৭ জুন। মাত্র দুই সপ্তাহ। এই সময়েই কেমন ওলটপালট হয়ে গেল জার্মানীর বিশ্বকাপ স্বপ্ন। রাশিয়ায় যে দলটা এসেছিল ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে (অন্য দলটি ইতালী) তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে, সেই জার্মানীই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ! সেটিও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে! বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানির বিদায় অবিশ্বাস্য ব্যাপারই। গ্রুপ পর্ব চালু হওয়ার পর থেকে তারা পরের রাউন্ডে যায়নি, এমন নজির নেই। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটিই বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে। এবারের আসর তো বটেই, বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই বড় অঘটন এটি। প্রথম ম্যাচেই জার্মানীর বিপর্যয়ের ইঙ্গিত মিলেছিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে তারা হেরেই শুরু করেছিল বিশ্বকাপ-রক্ষার মিশন। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই সুইডেনের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। কোরিয়ার বিপক্ষে জয় পেলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হতো জার্মানির, কিন্তু এখন হেরেই বিদায় নিতে হচ্ছে।
জার্মানদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের নানা কারণ দেখছে বিশ্ব মিডিয়া। অন্যতম একটি কারণ হলো দলীয় কোন্দল। সিনিয়র ফুটবলারদের উপর জোয়াকিম লো’র আস্থা হারানো। একটা দল জিততে থাকলে তাদের ভুলত্রুটিগুলো যেমন চোখে পড়ে না, তেমন ভেতরে ভেতরে কোচ ফুটবলারদের দ্বন্দ্বও সামনে আসে না। সেটা বোঝা যায়, দল ব্যর্থ হলে। যা ঘটেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বেলায়। মেক্সিকোর কাছে হারের পর জার্মানির কোচ ফুটবলারের দ্বন্দ্ব সামনে চলে এসেছে। কোচ ও ফুটবলাররা পরস্পরের দোষারোপের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছিলেন। সুইডেন ম্যাচে মেসুত ওজিল ও সামি খাদিরাকে বসিয়ে তরুণে আস্থা রেখেছিলেন জোয়াকিম লো। কিন্তু তরুণরাও তার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি।
তাইতো জার্মান পোস্ট জোয়াকিম লোকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। জার্মানির ডাগআউটে লো আছেন ১৪ বছর ধরে। প্রথমে এসেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের সহকারী হয়ে। ক্লিন্সমান নিজ দেশে আয়োজিত ২০০৬ বিশ্বকাপে হতাশ করার পর উত্তরসূরি হিসেবে জোয়াকিম লোকে বেছে নেয়া হয়। সেই লো অবশেষে এক যুগ ধরে জার্মানির কোচের দায়িত্ব পালন করার পর সরে যাচ্ছেন! এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আসতে বাকি নেই। ছাঁটাই হওয়ার আগে লো নিজেই সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
১৯৯০ সালের পর জোয়াকিল লো’র হাত ধরেই ২০১৪ সালে এসেছে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও লো সরে যাবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। লো যদিও পরিষ্কার ধারণা দেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারার পর ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ বলেন, ‘এখনই এই প্রশ্নের (অবসর নেবেন কি না) উত্তর দেয়া আমার জন্য কঠিন। পুরো ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এখন হতাশাচ্ছন্ন হয়ে আছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে কথা বলবো। তখন দেখা যাবে কী হয়।’
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিদায় নেয়া অবশ্য একদমই নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ইউরোপের দলের জন্য। এ নিয়ে টানা চার ইউরোপিয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলো। ২০০২ সালে ফ্রান্স, ২০১০ সালে ইতালী আর ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেন প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়েছিল। এবার জার্মানী। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারলো না জার্মানী। অথচ তারা ফাইনাল খেলেছে ৭ বার, সেমিফাইনাল খেলেছে ১৩ বার, কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ১৬ বার। জার্মানীর মতো এত ধারাবাহিক দল বিশ্বকাপেই আর নেই!
এতো সব সাফল্যের পর গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানদের বিদায়ে আরেকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন বৃটিশ সাংবাদিক রবার্ট আন্থনি। দ্য নিউইর্য়ক টাইমসের এই সাংবাদিক জানান, এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলো জার্মানরা। তারা ধরেই নিয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপও জিতবে তারা। তাইতো বিশ্বকাপে আসার আগেই জোয়াকিম লো’র সঙ্গে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি করেছিলো। সবকিছু মিলিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসে ডুবেছে জার্মানি। কারণ যাইহোক গ্রুপ পর্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানীর বিদায়ে বিশ্বকাপ যে শ্রী হারিয়েছে, সেটা মানছেন তার খোদ শত্রুরাও। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

শোক, লজ্জা ছাপিয়ে অবিশ্বাস

প্রকাশের সময় : ০৮:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮

সামন হোসেন, মস্কো (রাশিয়া) থেকে: রাশিয়াজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের হাতে নিহত রুশদের কমপক্ষে ১৭টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। প্রতিদিন স্তম্ভগুলোতে ফুল রেখে যায় কেউ না কেউ। বুধবার (২৭ জুন) বিকালে সেখানে ফুলের সংখ্যাটা নিশ্চয় বেড়েছে জার্মানদের বিদায়ে। রাশিয়ার কোনো না কোনো পরিবারের কেউ না কেউ মারা গিয়েছেন সেই যুদ্ধে। তারাই হয়তো ফুল নিয়ে হাজির হয়েছেন সেই সব স্মৃতিস্তম্ভে। তাইতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ফুটবল বিশ্বযুদ্ধে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় অন্যরা ব্যথিত হলেও রুশরা খুশিই হয়েছেন! মুখে ফুটে না বললেও তাদের আকার ইঙ্গিতে তেমনটাই বোঝা যায়। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানদের বিদায়ে বিশ্বকাপ যে রং হারিয়েছে সেটাও মানছেন তারা।

১৪ জুন থেকে ২৭ জুন। মাত্র দুই সপ্তাহ। এই সময়েই কেমন ওলটপালট হয়ে গেল জার্মানীর বিশ্বকাপ স্বপ্ন। রাশিয়ায় যে দলটা এসেছিল ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে (অন্য দলটি ইতালী) তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে, সেই জার্মানীই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ! সেটিও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে! বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানির বিদায় অবিশ্বাস্য ব্যাপারই। গ্রুপ পর্ব চালু হওয়ার পর থেকে তারা পরের রাউন্ডে যায়নি, এমন নজির নেই। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটিই বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে। এবারের আসর তো বটেই, বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই বড় অঘটন এটি। প্রথম ম্যাচেই জার্মানীর বিপর্যয়ের ইঙ্গিত মিলেছিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে তারা হেরেই শুরু করেছিল বিশ্বকাপ-রক্ষার মিশন। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই সুইডেনের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। কোরিয়ার বিপক্ষে জয় পেলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হতো জার্মানির, কিন্তু এখন হেরেই বিদায় নিতে হচ্ছে।
জার্মানদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের নানা কারণ দেখছে বিশ্ব মিডিয়া। অন্যতম একটি কারণ হলো দলীয় কোন্দল। সিনিয়র ফুটবলারদের উপর জোয়াকিম লো’র আস্থা হারানো। একটা দল জিততে থাকলে তাদের ভুলত্রুটিগুলো যেমন চোখে পড়ে না, তেমন ভেতরে ভেতরে কোচ ফুটবলারদের দ্বন্দ্বও সামনে আসে না। সেটা বোঝা যায়, দল ব্যর্থ হলে। যা ঘটেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বেলায়। মেক্সিকোর কাছে হারের পর জার্মানির কোচ ফুটবলারের দ্বন্দ্ব সামনে চলে এসেছে। কোচ ও ফুটবলাররা পরস্পরের দোষারোপের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছিলেন। সুইডেন ম্যাচে মেসুত ওজিল ও সামি খাদিরাকে বসিয়ে তরুণে আস্থা রেখেছিলেন জোয়াকিম লো। কিন্তু তরুণরাও তার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি।
তাইতো জার্মান পোস্ট জোয়াকিম লোকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। জার্মানির ডাগআউটে লো আছেন ১৪ বছর ধরে। প্রথমে এসেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের সহকারী হয়ে। ক্লিন্সমান নিজ দেশে আয়োজিত ২০০৬ বিশ্বকাপে হতাশ করার পর উত্তরসূরি হিসেবে জোয়াকিম লোকে বেছে নেয়া হয়। সেই লো অবশেষে এক যুগ ধরে জার্মানির কোচের দায়িত্ব পালন করার পর সরে যাচ্ছেন! এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আসতে বাকি নেই। ছাঁটাই হওয়ার আগে লো নিজেই সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
১৯৯০ সালের পর জোয়াকিল লো’র হাত ধরেই ২০১৪ সালে এসেছে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও লো সরে যাবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। লো যদিও পরিষ্কার ধারণা দেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারার পর ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ বলেন, ‘এখনই এই প্রশ্নের (অবসর নেবেন কি না) উত্তর দেয়া আমার জন্য কঠিন। পুরো ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এখন হতাশাচ্ছন্ন হয়ে আছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে কথা বলবো। তখন দেখা যাবে কী হয়।’
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিদায় নেয়া অবশ্য একদমই নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ইউরোপের দলের জন্য। এ নিয়ে টানা চার ইউরোপিয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলো। ২০০২ সালে ফ্রান্স, ২০১০ সালে ইতালী আর ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেন প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়েছিল। এবার জার্মানী। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারলো না জার্মানী। অথচ তারা ফাইনাল খেলেছে ৭ বার, সেমিফাইনাল খেলেছে ১৩ বার, কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ১৬ বার। জার্মানীর মতো এত ধারাবাহিক দল বিশ্বকাপেই আর নেই!
এতো সব সাফল্যের পর গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানদের বিদায়ে আরেকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন বৃটিশ সাংবাদিক রবার্ট আন্থনি। দ্য নিউইর্য়ক টাইমসের এই সাংবাদিক জানান, এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলো জার্মানরা। তারা ধরেই নিয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপও জিতবে তারা। তাইতো বিশ্বকাপে আসার আগেই জোয়াকিম লো’র সঙ্গে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি করেছিলো। সবকিছু মিলিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসে ডুবেছে জার্মানি। কারণ যাইহোক গ্রুপ পর্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানীর বিদায়ে বিশ্বকাপ যে শ্রী হারিয়েছে, সেটা মানছেন তার খোদ শত্রুরাও। (দৈনিক মানবজমিন)