লড়াই করেও হারল বাংলাদেশ, এশিয়া কাপের স্বপ্নভঙ্গ
- প্রকাশের সময় : ০১:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৪২ বার পঠিত
খেলা ডেস্ক : ২১ রান বাকি থাকতেই থেমে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে প্রথম দল হিসেবে এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে টাইগারদের। প্রথম ম্যাচে হারের পর এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছানোর সমীকরণটি বেশ জটিলই হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। সিরিজে টিকে থাকতে দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না টাইগারদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও তা আর হয়ে ওঠেনি। ফলে ২১ রানের পরাজয় নিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে সাকিব অ্যান্ড কোং-কে।
টস জিতে বোলারদের নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে ২৫৭ রানে বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর সবার চোখ ছিল ব্যাটাররা কী করতে পারে, তার দিকে। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালোও করেছিল বাংলাদেশি ব্যাটাররা। কিন্তু ভালো শুরুর পর যে আশা জেগেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তদের মনে, প্রথম উইকেট হারানোর পর থেকেই তার গ্রাফ বারবার উপরে উঠেছে, আবার নিচে নেমেছে। তবে শ্রীলঙ্কান বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি ব্যাটাররা। ১১ বল বাকি থাকতেই ২৩৬ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে প্রথম দল হিসেবে এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে টাইগারদের।
শনিবার কলোম্বোতে শ্রীলঙ্কার ২৫৭ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাইম শেখ। ব্যাট হাতে এদিন শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন মিরাজ। মাহিশ থিকশানার এক ওভারে দুটি চারের মার মারেন মিরাজ। তবে উইকেটে থিতু হতে খানিকটা বেগ পেতে হয় নাইমকে। একবার ইনসাইড এজ হয়েও উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল যাওয়ায় বেঁচে যান তিনি।
দলীয় ৫৫ রানের মাথায় ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। দাসুন শানাকার বলে বদলি নামা দুসান হেমন্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। তিনি ২৯ বলে ২৮ রান করে আউট হওয়ার পর নাইমও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। শানাকার বলেই কাটা পড়েন তিনি। কচ্ছপগতির ইনিংস খেলে ৪৬ বলে ২১ রান করে ফেরেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে জুটিতে লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে আসা সাকিব আল হাসানকেও থিতু হতে দেননি মাথিশা পাথিরানা। মাথিশার রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন টাইগার অধিনায়ক। প্রথমে লঙ্কান ফিল্ডারদের আবেদন নাকচ করে দেন আম্পায়ার। তবে শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিলে স্নিকোমিটারে দেখা যায়, বল সাকিবের ব্যাট স্পর্শ করেছে। ফলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাকিব।
এরপর সাকিবের মতোই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৫ রান করা লিটন দাস। অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুঁলিয়ে বল করেছিলেন দুনিথ ওয়েলালাগে। লিটন ড্রাইভ করতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন। বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় মেন্ডিসের গ্লাভসে। এর ফলে ৮৩ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। এই দুজনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ একশ’ ছাড়িয়ে যায়। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে আবারও লঙ্কানদের ত্রাতা হয়ে দেখা দেন শানাকা।
ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের বলে জায়গা বানিয়ে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মুশফিক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক করতে না পারায় কাসুন রাজিথার হাতে ধরা পড়তে হয় তাকে। ২৯ রান করে মুশফিক ফিরে গেলেও হাফ সেঞ্চুরি পান হৃদয়। শানাকার লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে চার মেরে ৭৩ বলে পঞ্চাশ পার করেন তিনি। তবে মুশফিকের পর ক্রিজে আসা শামীম হোসেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি থিকশানা। ডানহাতি এই স্পিনারের বলে লেগ বিফোর হয়ে মাত্র ৫ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন শামীম, তবে শেষরক্ষা হয়নি।
এরপর একাই লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন হৃদয়। তবে তরুণ এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। থিকশানার বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ৮২ রান করা হৃদয়। রিভিউ নিয়েও ব্যর্থ হয়ে শেষমেষ ভক্তদের হৃদয় ভেঙে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দেন তিনি। পরে তাসকিন আহমেদকেও ফেরান থিকশানা। শেষ দিকে নাসুম আহমেদের ১৫ ও হাসান মাহমুদের ১০ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে। ৪৮.১তম ওভারে মাথিশা পাথিরানার বলে নাসুম বোল্ড হয়ে গেলে ২১ রান বাকি থাকতেই থামে বাংলাদেশের লড়াই। লড়াই করেও হারল বাংলাদেশ, এশিয়া কাপের স্বপ্নভঙ্গএর আগে টস জিতে উইকেট ও কন্ডিশন বিবেচনায় প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব।
বৃষ্টির কারণে কলম্বোর উইকেটে শুরু থেকেই ছিল সুইং। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে শুরুতেই উইকেটের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান লঙ্কানরা। তবে উদ্বোধনী জুটি দ্রুতবেগে রান তুলতে থাকে। এরপর ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ১৮ রান করে অভিজ্ঞ দিমুথ করুনারত্নে বিদায় নিলে উইকেটে থিতু হন পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে স্কোরবোর্ডে তারা যোগ করেন ৭৪ রান।
এসময়ে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় বেশ কয়েকবার সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে হাসান মাহমুদের বলে পাথুম নিশাঙ্কার ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করতে ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। এরপর শরিফুলের শর্ট লেংথের বলে পুল করেছিলেন মেন্ডিস, স্কয়ার লেগে থাকা শামীমের হাত গলে সেটি ছক্কা হয়ে যায়। একটু পেছনে থাকলে ক্যাচটি তিনি অনায়াসে নিতে পারতেন। ফলে ২৯ রানে জীবন পেয়ে যান মেন্ডিসও। নিশাঙ্কা-মেন্ডিস জুটিতেই শতরান পার করে শ্রীলঙ্কা। ২৩.২তম ওভারে শরিফুলের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন নিশাঙ্কাকা। আর এতেই ভাঙ্গে ৭৪ রানের জুটি। তার আগে অবশ্য ৫০ বলে ৩০ রান করেন তিনি।
এরপর ৭২ বলে অর্ধশতক তুলে নেন মেন্ডিস। কিন্তু এর পরই হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তিনি। ফলাফল, যা হওয়ার তাই! শরিফুলের বাউন্সারে আপার কাট করতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। থার্ড ম্যান অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা তাসকিন সেটিকে তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। তার পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে ক্রিজে আসা-যাওয়া শুরু হয় লঙ্কান ব্যাটারদের। চারিথা আসালাঙ্কাকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি তাসকিন। স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে টপ এজ করেন তিনি। লং অফ থেকে দৌড়ে গিয়ে সেই ক্যাচ লুফে নেন সাকিব।
১০ রান করে ফেরা আসালাঙ্কার পর হাসান মাহমুদের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচের শিকার হন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৬ রান করে তিনি সাজঘরে ফিরলে দাসুন শানাকাকে নিয়ে আবারও বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। এর মধ্যেই ৪২ বলে অর্ধশতক তুলে নেন সামারাবিক্রমা। তবে ৪৬.৪তম ওভাবে হাসানের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান শানাকা। ফলে ভাঙে সামারাবিক্রমা ও শানাকার ৬০ রানের জুটি।
শেষদিকে দুনিথ ওয়েলালাগেকে রান আউট করেন হাসান। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিনের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন মাহিশ থিকশানা। আর শেষ বলে পরপর দ্বিতীয় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তিনি ৭২ বলে ৯৩ রান করে আউট হলে ২৫৭ রানে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ৯ উইকেটের একটি রান আউট বাদে সবগুলোই যায় পেসারদের ঝুলিতে। এর মধ্যে তাসকিন ও হাসান মাহমুদ নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। সূত্র : বাংলা 24
বেলী/হককথা