যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার

- প্রকাশের সময় : ০১:৩২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
- / ৬১ বার পঠিত
ক্রীড়া ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্রিকেটের কোনো ফরম্যাটেই জয় ছিল না বাংলাদেশের। তবে এবার বদলে গেছে সেই ইতিহাস। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ এ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। এই অনন্য অর্জনের আনন্দে আকাশেই উড়ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু প্রদীপের নিচে অন্ধকার! সেই অর্জনকে গ্রাস করতে খুব বেশি সময় নেয়নি। টেস্ট সিরিজে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মুমিনুল হক সৌরভের দল। কেউ কেউ বলতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে টেস্ট জয় সহজ নয়! কিন্তু এমন হারও তো কাম্য নয়, যা টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের কঙ্কালই সামনে নিয়ে আসে। ডারবানে প্রথম ম্যাচে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল পোর্ট এলিজাবেথে।
কিন্তু হায়! এখানেও দ্বিতীয় ইনিংসে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮০ রানে গুড়িয়ে গেছে তাসের ঘরের মতো। বিদেশের মাটিতে টানা তিন টেস্টে হার যা এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকারই যেন রুগ্ন ছবি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের অনুপ্রেরণাও যেন জাগিয়ে তুলতে পারেনি দলকে। কেন এমন ব্যর্থতা? টাইগার অধিনায়কের সরল সোজা জবাবই বলে দিচ্ছে এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ। তিনি বলেন, ‘ব্যাখ্যা একটাই ভাই, আমরা খুব বাজে ব্যাটিং করেছি। এটাই আর কিছু না। আমার কাছে মনে হয় বাজে ব্যাটিং করেছি আমরা। দল হিসেবে আমরা ওভাবে খেলতে পারিনি।’
২০০৭, শ্রীলঙ্কা সফরের পর এই প্রথম টানা দুই টেস্টে একশর নিচে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রোটিয়াদের জন্য বিষয়টি একেবারেই উল্টো ফল বয়ে এনেছে। টানা দুই টেস্টে তারা গড়েছে দারুণ রেকর্ড। ডারবানের চতুর্থ ইনিংসের মতো এখানেও মাত্র দুই বোলার মিলেই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। সেই টেস্টের মতো এবারও স্পিনার কেশব মহারাজের শিকার ৭ উইকেট, সাইমন হার্মারের ৩টি। মহারাজ নিজে গড়েছেন অনন্য এক কীর্তি। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে নিয়েছেন ৭ উইকেট। তাদের এই দারুণ রেকর্ড গড়তে অবশ্য সাহায্য করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। দিনের দ্বিতীয় ওভার থেকেই ড্রেসিং রুমে ফেরার মিছিল শুরু হয় নিজেদের একের পর এক ভুল শটে। তাইতো অধিনায়ক মুমিনুল আর কোন কিছুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে কোনো দিকে পিছিয়ে না থাকলেও দলের বাজে ব্যাটিংটাই যে লজ্জার কারণ তা জানিয়েছেন অকপটে। তিনি বলেন, ‘কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলাম না। আমার মনে হয় আমরা দল হিসেবে খেলতে পারিনি। প্রথম টেস্টে আমরা হেরেছি কিন্তু আপনি দেখেন প্রথম ইনিংসে আমরা দল হিসেবে ভালো ব্যাটিং করেছি। ঐ জিনিসগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে পারিনি, সেশন বাই সেশন ব্যাটিং করা, লম্বা সময় টিকে থাকার মত জিনিসগুলো মিসিং ছিল।’
২০০০ এ বাংলাদেশ দলের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে টাইগারদের গর্জন এখন ক্রিকেটে বিশ্বে স্পষ্ট। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে যে কোনো দলই বাংলাদেশকে সমীহ করে। কিন্তু টেস্টে চিত্রটা একেবারেই উল্টো। ২২ বছরে এখন পর্যন্ত ১৩০ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। কিন্তু জয় মাত্র ১৬টিতে। আর ড্র করেছে ১৭টি। অন্যদিকে বিদেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ টেস্ট খেলে মিলেছে ৬ জয় আর ৪ ড্র। এছাড়াও বাংলাদেশ দল টেস্টে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছে এখন পর্যন্ত ২৯ ম্যাচে। এর মধ্যে মাত্র ৩টিতে জয় এসেছে আর ম্যাচ ড্র করেছে ৫টিতে। হেরেছে ২০ ম্যাচে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হার যেন দগদগে ক্ষত। প্রথম ম্যাচে হেরেছে ২২০ রানের বড় ব্যবধানে। মাত্র ৫৩ রানে অল আউট হয়ে গড়েছে লজ্জার ইতিহাস। আর দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। গতকাল শুধু শেষ দেখার ছিল। চোখের পলকেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো ইনিংস। দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভারের কম সময়ের মধ্যেই খেলা শেষ! টেস্টের চতুর্থ দিনে ৮০ রানে অলআউট আর প্রোটিয়াদের প্রাপ্তি ৩৩২ রানের জয়ে। আগের টেস্টের চেয়ে উন্নতির দাবি করতেই পারে বাংলাদেশ। ডারবানে তো ১৯ ওভারে ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দল। এবার ২৭ রান বেশি করেছে আগের চেয়ে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের পর টেস্ট দল নিয়ে প্রত্যাশা ছিল খুব। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। তবে অধিনায়ক মুমিনুল দুই দেশের হার জিতের সঙ্গে কোনোটির তুলনা করতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘দেখেন ওখানকার কন্ডিশন ও এখানকার কন্ডিশন ভিন্ন। আপনি ফ্লুক বলবেন কীনা এটা আপনার হাতে আমার হাতে নাই। টেস্ট ম্যাচে পাঁচ দিন ভালো খেলা ফ্লুক কীনা এটা আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের কন্ডিশন ও এখানকার কন্ডিশন ভিন্ন। আপনি কোনোটার সাথে কোনোটা মেলাতে পারবেন না।’
হককথা/এমউএ