বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানের জয়, সেমির স্বপ্ন
- প্রকাশের সময় : ০৬:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩
- / ১১৮ বার পঠিত
স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথম ইনিংস শেষে পাকিস্তান জিতবে এমন বলা হলে হেসেই উড়িয়ে দিত সবাই৷ কিন্তু আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান তাদের চরিত্র মেনে চারশো ছাড়ানোর লক্ষ্যের ম্যাচও জিতলো৷ অবশ্য বৃষ্টি আইন ও ফখর জামানের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে পোয়াবারো হয়েছে দলটির৷ এ জয়ে ৮ পয়েন্টের সঙ্গে ১ ম্যাচ হাতে থাকায় সেমিফাইনাল স্বপ্ন টিকে থাকল পাকিস্তানের৷ এদিকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ডও শেষ ম্যাচের আগে সেমিফাইনালের স্পষ্ট দাবিদার৷
ওয়ানডেতে চারশো রানও তাড়া হয়েছে৷ তবে বিশ্বকাপে কখনই নয়৷ সর্বোচ্চ ৩৪৫ রান তাড়া করে এ বিশ্বকাপেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে পাকিস্তান৷ শুধু এ কারণেই নিউজিল্যান্ডের ৪০২ রানের তাড়া করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের ক্ষীণ আশা ছিল৷ সেই আশা বড় করেছেন ফখর৷ অবিশ্বাস্য বিধ্বংসী ঝড়ো ইনিংসে পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়ায় ঠিক পথ দেখিয়েছেন দলকে৷ দ্বিতীয়বার বৃষ্টির বাধা পড়ার আগ পর্যন্ত ৮১ বলে ৮ চার ও ১১ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ১২৬ রানে৷
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই টিম সাউদির বলে মাত্র ৪ রানে আবদুল্লাহ শফিকের বিদায় পাকিস্তানকে ভয় ধরিয়ে দেয়৷ অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে সেই ভয় দূর করেন ফখর৷ পরের ২৩ ওভারে রান-বল হিসাবের দারুণ ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান৷ বাবর হিসেবি খেললেও ফখর ছিলেন বিধ্বংসী৷ দ্বিতীয়বার বৃষ্টি থামার আগ পর্যন্ত ১৯৪ রানের অপরাজিত জুটি দুজনের৷ এর মাঝে ১২৮ রানই ফখরের৷ বাবর অপরাজিত ছিলেন ৬৩ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রানে৷
ম্যাচে যে বৃষ্টির বাগড়া আসবে তার আভাষ ছিল শুরু থেকেই৷ তবে আভাষটা ছিল পরের ইনিংসের জন্য৷ শুরুর ইনিংস নির্বিঘ্নেই হয়েছে৷ পাকিস্তানের ইনিংসেই সম্ভাবনা মতো বৃষ্টি নামে৷ শুরুতে ২১.৩ ওভারের সময় আর দ্বিতীয়বার বাধা পড়ে ২৫.৩ ওভারের সময়৷ দুবারই বৃষ্টি আইনের হিসাবে এগিয়ে ছিল পাকিস্তান৷ প্রথমবার ১ উইকেটে ১৬০ রান নিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান অনুযায়ী বৃষ্টি আইনের লক্ষ্যে চেয়ে ১০ রানে এগিয়ে ছিল তারা৷ পরেরবার ১ উইকেটে ২০০ রান নিয়ে তাদের এগিয়ে থাকাটা ছিল ২১ রানের৷
দলকে এগিয়ে রাখার নায়ক ফখর৷ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শুরুর ম্যাচের পর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এই ওপেনার এবার যেন পূর্ণ গতিতে ছুটছেন৷ আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে করেছেন ৮২ রান৷ এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন৷ অবিশ্বাস্য পাওয়ার হিটিংয়ে একেকটি ছক্কা পাঠিয়েছেন বেঙ্গালুরু স্টেডিয়ামের দ্বিতীয়তলা গ্যালারিতে৷ টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ওপেনিংয়ে এই পাওয়ার হিটিং খুঁজে ফিরছিল পাকিস্তান৷ দলটির ফিরে আসা জ্যোতি হয়ে ফখর দারুন রেকর্ডও গড়েছেন৷
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক বছরে চার সেঞ্চুরি করা পঞ্চম ব্যাটার হয়েছেন তিনি৷ ওয়ানডেতে এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে এমন কীর্তি আছে ডেসমন্ড হেয়নেস, শচিন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং ও বিরাট কোহলির৷ শুধু তাই নয়, বিধ্বংসী ইনিংসটিতে দ্বিতীয়বার বৃষ্টি নামার আগ পর্যন্ত ১১ ছক্কা মেরেছেন ফখর৷ আগের ম্যাচের ৮ ছক্কাসহ দুই ম্যাচেই ১৬ ওভারবাউন্ডারি তার৷ বিশ্বকাপে কোন পাকিস্তানী ব্যাটারের সর্বোচ্চ৷ তাই ২০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন ফখর৷
এ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার (আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭.২ ওভারে) পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি তার৷ তার আগে বিশ্বকাপে সবশেষ ২০ ওভারের ভেতর সেঞ্চুরি করা ব্যাটার ছিলেন ২০০৩ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে কানাডার জন ডেভিসন৷ বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ১০ বা তার বেশি ছক্কা হাঁকানো চতুর্থ ব্যাটারও হয়েছেন পাকিস্তান ওপেনার৷
অথচ প্রথম ইনিংস শেষে ম্যাচটি শুধুই নিউজিল্যান্ডের৷ রাচিন রবীন্দ্রর নেতৃত্বে ব্যাটিং অভিযানে নেমে রান পাহাড় গড়ে তারা৷ এ আসরে সেরা তরুনের গৌরবটা পেয়েই যাবেন রাচিন৷ তার ব্যাটে চলছে পূর্ণ বসন্ত৷ সেই বসন্তের বাতাসে রান ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আর একটি সেঞ্চুরি তুলে নিলেন আজ৷ ক্যারিয়ারের ও আসরে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরির পথে করেছেন ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ৯৪ বলে ১০৮ রান৷ তার সঙ্গে দলে ফেরা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ১৮০ রানের জুটি শক্ত অবস্থানে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে৷
৫ রানের জন্য সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ক্রিজ ছেড়েছেন উইলিয়ামসন৷ দুজনের বিদায়ের পর ডেরিল মিচেল, মার্ক চ্যাপম্যান ও গ্লেন ফিলিপসরা পাওয়ার হিটিং ক্রিকেটে দলকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান৷ শেষদিকে মিচেল ১৮ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ২৯, চ্যাপম্যান ২৭ বলে ৭ চারে ৩৯ ও ফিলিপস ২৫ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে করেন ৪১ রান৷ তাদের ব্যাটে ভর করেই নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয়বার চারশো রানের মাইলফলক ছুঁয়েছে ব্লাক ক্যাপসরা৷ একাদশে স্পেশালিস্ট স্পিনার ছাড়াই নামা পাকিস্তান চার পেসারের আক্রমণ নিয়ে ছিল বিফল৷ খরুচে পেসারদের মধ্যে কেবল মোহাম্মদ ওয়াসিম ওভারপ্রতি ৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৬০ রানে ৩ উইকেট৷
এই বেঙ্গালুরু ও রাচিন- দুজনের যোগসূত্র আছে৷তাই মাঠটিকে হতাশও করেননি কিউই ব্যাটার৷ আদি ভূমিতে করলেন সেঞ্চুরি৷ এই বেঙ্গালুরুতেই বেড়ে উঠেছিলেন রাচিনের বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তি৷ ওয়েলিংটনে পাড়ি জমানোর পরও ছেলেকে বেঙ্গালুরু ভুলতে দেননি রবি৷ নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগে প্রায় প্রতি বছরই কর্ণাটক ক্রিকেট লিগে খেলেছেন রাচিন৷ বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে এই বেঙ্গালুরুতে খেলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সঙ্গে নিজেকে চিনিয়েছেন আলাদাভাবে৷ সেই চেনা-জানার সুবিধা আজ নিলেন রাচিন৷ সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে থাকা আত্মীয়দের বা গ্যালারিতে বসা অনেক কাছের মানুষকেই উপহার দিলেন দারুন এক অর্জন৷
সেই অর্জন বিশ্বকাপে শচিন টেন্ডুলকারের পাশে বসার৷ কালকের ১০৮ রানে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শচিনের করা ৫২৩ রান ছুঁয়েছেন রাচিন৷ সামনের ম্যাচেই কিংবদন্তী ব্যাটারকে ছাড়িয়ে যাবেন ১ রান হলেই৷ তখন এক বিশ্বকাপে ২৪ বছরের তরুণ হয়েও বেশি রানের রেকর্ড নিজের করে নিবেন ইতিমধ্যে তিন সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটি করা রাচিন৷ এছাড়া কিউইদের হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হাতছানি দিচ্ছে এই তরুণকে৷ ২০১৯ বিশ্বকাপে কেন উইলিয়ামসন ৫৭৮ করেছিলেন৷ শীর্ষে উঠতে রাচিনের আর ৫৬ রান চাই৷
উইলিয়াসনের ছায়াতেই সেরাটা দিয়েছেন রাচিন৷ বাংলাদেশ ম্যাচে আঙ্গুলের ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া কিউই অধিনায়ক একাদশে ফেরেন এই ম্যাচ দিয়ে৷ ডেভন কনওয়ে বেঙ্গালুরুর ধীর উইকেটে দেখে খেলেও গতিময় শুরু এনে দেন ৩৯ বলে ৩৫ করে৷ অথচ হাসান আলির ওয়ানডের শততম শিকার হয়ে ফেরেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে৷ সেই থেকে ইনফর্ম রাচিনকে নিয়ে পরের প্রায় ২৪ ওভারে ১৮০ রানের জুটি গড়েন৷ রাচিনের মতো উইলিয়ামসনও সেঞ্চুরির দারপ্রান্তে ছিলেন৷ অথচ ৭৯ বলে ১০ চারে ও ২ ছক্কায় ৯৫ রানে থামেন কিউই অধিনায়ক৷ দলীয় ২৪৮ রানে তার ফেরার পর রাচিনও ফেরেন দ্রুত, দলীয় ২৬১ রানে৷ অবশ্য ৩৫ ওভারে এ দুই ব্যাটারের বিদায়ের পরও বিশাল স্কোরে বাধা পড়েনি নিউজিল্যান্ডের৷
অবশ্য রান পাহাড় তাদের বেদনার বন্যায় ভেসে যাওয়ার বাধা হতে পারেনি৷ ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভাগ্য যেমন দলটির সঙ্গে ছিল না, তেমনি আজও মুখ ফিরিয়ে রেখেছে৷ পূর্ণ ম্যাচ হলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষেই জয় আসতে পারতো, তখন দলটির সেমিফাইনালও নিশ্চিত হতো প্রায়৷ অথচ ম্যাচ শেষে হাসি নিউজিল্যান্ডের নয়, পাকিস্তানের৷
সংক্ষিপ্ত স্কোর : নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৪০১/৬ (রাচিন ১০৮, উইলিয়াসন ৯৫, ফিলিপস ৪১; ওয়াসিম ৩/৬০, ইফতিখার ১/৫৫) ।
পাকিস্তান ২৫.৩ ওভারে ২০০/১ (ফখর ১২৬*, বাবর ৬৬*; সাউদি ১/২৭)
ফল : পাকিস্তান বৃষ্টি আইনে ২১ রানে জয়ী সূত্র : DW
হককথা/নাছরিন