বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্সই চ্যাম্পিয়ন : ৪-২ গোলে হেরে ক্রোয়েশিয়া রানার্স আপ : বৃষ্টি বর্ষণে পুরষ্কার বিতরণ
- প্রকাশের সময় : ০৫:১৬:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১৮
- / ৯৯২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: ইতিহাস ছিল ফ্রান্সের পক্ষেই। আর ফাইনাল শেষে নিজেদের ইতিহাস সমৃদ্ধ করলো ফরাসিরা। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করলো ফ্রান্স। রোববার রাতে মস্কোয় ফাইনালে দাপুটে নৈপুণ্যে ৪-২ গোলে জয় কুড়ায় ফরাসীরা। বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপার গৌরব কুড়ালো তারা। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার নৈপুণ্যটাও ছিল চোখেপড়ার মতোই। ম্যাচে ৬৫% বলদখল ছিল ক্রোয়েশিয়ার। আর ফ্রান্সের ৬ শটের বিপরীতে ক্রোয়াটরা প্রতিপক্ষ গোলবারে নেয় ১৩টি শট। ফ্রান্সের শুরুর দুই গোলে ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। হেডে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়ান মারিও মানজুকিচ। ২৮তম মিনিটে ইভান পেরিসিচের গোলে সমতহায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। পরে গ্রিজম্যানের পেনাল্টি থেকে করা দ্বিতীয় গোলেও অবদান ইভান পেরিসিচের। উমতিতি লাফিয়ে উঠায় বল দেখতে পাননি পেরিসিচ, বল হাতে এসে লাগে তার। ভিএআর সিদ্ধান্তে পাওয়া পেনাল্টি গোলে ম্যাচে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
১৫ মিনিটের সামপনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো হলিউড সুপারস্টার উইল স্মিথের সঙ্গে কসোভোর গায়িকা ইরা ইস্ত্রেফির সঙ্গীত। জার্মানীর সাবেক অধিনায়ক ফিলিপ লামের ট্রফি নিয়ে মাঠে প্রবেশ। ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহোর ড্রামের সঙ্গে স্থানীয় শিল্পীদের সুরের মূর্ছনাও ভালো লাগেনি লুঝনিকির দর্শকদের! তাইতো মনমূদ্ধকর এক সমাপনি অনুষ্ঠানে উচ্ছাস ছিল না। এরাই আবার দু’দল মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ¡াসে ফেটে পরে। লুঝনিকির গ্যালারির এদিন অর্ধেকটা জুড়েই ছিলো সাদা-লালের সমাহার। ফ্রান্সের নীল-সাদার উপস্থিতি ছিল সে তুলনায় কম। গ্যালারির লড়াইয়ের মতো শুরুর দিকে মাঠও দখলে রেখেছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু গোল করার মতো কোনো সুযোগ তৈরী করতে পারছিলো না ক্রোয়াটরা। উল্টো ম্যাচের ১৮ মিনিটে আন্তোইন গ্রিজম্যানের ফ্রি কিকে আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠা দলটি (১-০)। বক্সের বাইরে থেকে গ্রিজম্যানের করা ফ্রি কিক মারিও মানজুকিচের মাথা ছুঁইয়ে আশ্রয় নেয় জালে।
তবে গোল হজমের পরই ঘুরে দাড়ায় ক্রোয়েশিয়া। তার নজির এবারের বিশ্বকাপে আগেও দেখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বের তিন ম্যাচের তিনটিতেই আগে গোল হজম করে পরে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। ডেনর্মাকের বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনে ডেনর্মাকের বিপক্ষে প্রথম মিনিটেই গোল খায় ক্রোয়েশিয়া। চার মিনিটেই সেই গোল শোধ করেন মারিও মানজুচিক। পরে টাইব্রেকারে জিতে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়াটরা। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে আগে এক গোল খেয়ে দুই গোল দেয় ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটি। এই ম্যাচের নিস্পত্তিও হয় টাইব্রেকারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও দু’দুবার পিছিয়ে গিয়ে টাইব্রেকারে ম্যাচ জেতে ফিফা র্যাঙ্কিং ২০ নাম্বারে থাকা দলটি। গতাকল লুঝনিকিতে এক গোল হজমের পর দশ মিনিটের ব্যবধানে তা শোধও করে তারা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে বিপদজনক অবস্থায় ফ্রি কিক পায় ক্রোয়েশিয়া। ইভান রাকিটিচের শট বক্সের মধ্যে কয়েক পাক ঘুরে পেরিসিচের পায়ে পরলে ব্যথা পাওয়া পায়ে জাদু দেখান এই মিডফিল্ডার। দুর্দান্তভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একজনকে কাটিয়ে বা পায়ের কোনাকুনি শটে নিশানা খুঁজে পেলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া (১-১)। সমতা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ইভান রাকিটিচ-পেরিসিচরা। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে আবারও দূভার্গ্য ভর করে ক্রোয়েশিয়ানদের । ৩৪ মিনিট ফ্রান্সের এক ফ্রি কিকে লাফিয়ে উঠে হেড করতে ব্যর্থ হন মাতুইদি। এতেই তার পেছনে থাকা পেরিসিচের হাতে লাগে বল। রেফারি প্রথমে এড়িয়ে গেলেও। ফ্রান্সের দাবির প্রেক্ষিতে ভিএআর নেয়। আর্জেন্টাইন রেফারি ভিএআর দেখে নিশ্চিত হন পেনাল্টি। গ্রিজম্যান সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি (২-১)। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। ডি বক্সের ভেতর থেকে আন্তে রেবিচের জোরালো শটে ফরাসি গোলরক্ষক লরিস ফিস্ট করলে বল বার উঁচিয়ে যায়। ৫৯তম মিনিটে পল পগবার গোলে স্বস্তি বাড়ে ফরাসি শিবিরে। আর ডি বক্সের বাইরে থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের আদায় করা গোলে শিরোপার একবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ফ্রান্স। পরে যদিও ‘কমেডি অব ইরর’ দেখান ফ্রান্স অধিনায়ক হুগো লরিস। এক পাসে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পেরে দৃষ্টিকটুভাবে গোল হজম করেন এ ফরাসি গোলরক্ষক।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে এই লুঝনিকি স্টেডিয়ামেই সমতা সূচক গোলটি করেছিলেন ইভান পেরিসিচ। তার সহযোগিতায় মারিও মানজুকিচের গোলে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে উঠার ওই ম্যাচের পায়ের মাংশ পেশীতে টান পরে পেরিসিচের। আঘাত এতোটাই গুরুতর ছিলো যে মস্কোর একটি হাসপতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে এই মিডফিল্ডারকে। ফ্রান্সে বিপক্ষে ফাইনালের আগে তাকে নিয়ে দোটানায় ছিলেন ক্রোয়েট কোচ জ্বালাতকো দালিচ। তাইতো দু’দিন বিশ্রাম দিয়েছিলোন এই তারকা ফুটবলারকে। ইনজুরি আক্রান্ত ইভান পেরিচিসকে নিয়েই একাদশ সাজান দালিচ। ফ্রান্সের একাদশও ছিলো অপরবর্তীতো।
উল্লেখ্য, সেমিফাইনালে ফ্রান্স ২-০ গোলে বেলজিয়ামকে এবং ক্রোয়েশিয়া ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে।