ফুটবল বিশ্বকাপে কবে খেলবে বাংলাদেশ?

- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২
- / ১৮১ বার পঠিত
চার বছর পর আবার এসেছে দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ। আবার ঘরে ঘরে ফুটবল উৎসব; পায়ে পায়ে ফুটবলের মনোমুগ্ধকর বিশ্বযুদ্ধ। এশিয়া মহাদেশে এটি দ্বিতীয় আয়োজন। ২০০২ সালে এশিয়ায় প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোরিয়া-জাপানের যৌথ উদ্যোগে। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের রথ টানা শুরু হয়েছিল। শুধু ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে স্থগিত ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। পরবর্তী বিশ্বকাপ ২০২৬ সালে; অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে চূড়ান্ত রাউন্ডে খেলবে ৪৮টি দেশ। অর্থাৎ সব মহাদেশ থেকে অংশগ্রহণ বাড়বে। বাংলাদেশ কি চেষ্টা করে দেখতে পারে?
ফুটবল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত রাউন্ডে এ পর্যন্ত অংশ নিতে না পারলেও বাংলাদেশ ফুটবল উৎসবে আলোড়িত হতে কার্পণ্য করে না। আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের জোয়ারে ফুটবলের সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। অবশ্য প্রতিটি বিশ্বকাপই এত আবেগঘন যে, দশ দিগন্তের কোনো অংশই এ আবেশ থেকে দূরে থাকতে পারে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। সারাবিশ্বের সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলের একটি অভাবনীয় সংযোগ তৈরি হয়। এবারও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় একইভাবে স্পন্দিত হবে আনন্দ-বেদনায়। ভূগোলের প্রাচীর ভেঙে পড়বে। সবকিছু মিলে জন্ম হবে এক বিশ্বসংস্কৃতির।
এবার বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে স্বাগতিক কাতার আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে; ২০ নভেম্বর। এই বর্ণাঢ্য উৎসব সাঙ্গ হবে ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে আগামী ২০ ডিসেম্বর। এখন আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে কে ট্রফি জিতবে- ইউরোপ, না লাতিন আমেরিকার দেশ? ২০০২ সালে এশিয়ায় অনুষ্ঠিত কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো ট্রফি জিতেছিল ব্রাজিল।
সবসময় দেখা গেছে- অঘটন, বিপর্যয়, অকল্পনীয় ফল বিশ্বকাপের নিত্যসঙ্গী। শুধু ভালো খেললেই হবে না; ভাগ্যেরও সহায়তা প্রয়োজন। ভাগ্য সহায় না থাকায় ২০১৪ সালে ব্রাজিল নিজ দেশে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছে ৭-১ গোলে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ বিজয়ী ব্রাজিল ভাবতেও পারেনি, এত করুণ পরাজয়ের স্বাদ তাদের পেতে হবে। ফাইনালে জার্মানি ১-০ গোলে পরাজিত করেছে আরেক লাতিন দেশ আর্জেন্টিনাকে। ইউরোপের কোনো দেশের এটাই প্রথম লাতিন বিজয়। অথচ বিশ্বকাপ চলাকালীন লাতিন সমর্থকরা ভেবেছিল, সেবারই প্রথম ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে ফাইনালে। সে হিসাব মেলেনি।
কাতার বিশ্বকাপ সামনে রেখেও সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। লাতিন এ দেশ দুটি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মরিয়া। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়; চ্যাম্পিয়ন তো হবে একটি দেশ। লাতিন ঘরানার মিডিয়া আর দুনিয়াজুড়ে ভক্ত-সমর্থক এবারও আত্মবিশ্বাসী। ইউরোপের কোনো দেশকে নিয়ে তাদের মিডিয়া ও সমর্থকরা কিন্তু এত সোচ্চার নয়। আমাদের দেশেও ফুটবলপ্রেমীদের মনন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ভীষণভাবে সীমাবদ্ধ।
বিশ্বকাপের শিরোপা এখনও ইউরোপ ও লাতিন
আমেরিকার মধ্যেই আটকে আছে। ইউরোপ জিতেছে ১২ বার; লাতিন ৯ বার। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল আর বিশ্বকাপ জেতেনি। এদিকে সেই ১৯৮৬ সালের পর আর জেতেনি আর্জেন্টিনা। উভয় দেশ শিরোপা-ক্ষুধায় ভুগছে।
২০০২ সালে এশিয়াতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। ব্রাজিল সমর্থকরা মনে করছে, আবার যেহেতু এশিয়াতে বিশ্বকাপ, তাই কাপ জেতা তাদের জন্য সহায়ক। ব্রাজিলের প্রথম খেলা সার্বিয়ার বিপক্ষে। ওদিকে আর্জেন্টিনা তো ৩৫ ম্যাচে জিতে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে। প্রথম খেলা সৌদি আরবের বিপক্ষে।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই তারকা যথাক্রমে নেইমার ও মেসির জন্য কাতার বিশ্বকাপ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টিনার মেসি তাঁর জীবনের শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন কাতারে। এবার যদি তিনি দেশের স্বপ্ন পূরণ না করতে পারেন, আর সুযোগ মিলবে না। অন্যদিকে নেইমার জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জেতার জন্য তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। উভয় দেশের টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা সাবেক তারকা এবং নিজ নিজ দলের কোচ বলেছেন, বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা; কোনো দেশই নেইমার ও মেসির ওপর নির্ভরশীল নয়। উভয় দেশই নির্ভর করছে পুরো টিমের ওপর। দল মাঠে নামলে কিছু কৌতূহলের জবাব মিলবে। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, চাপ নেওয়া যাবে না। ফুটবল উপভোগ করতে হবে।
নিজ মহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া সেমিফাইনালে উঠেছিল। আবার এশিয়ায় বিশ্বকাপ। নিজ মহাদেশে কমপক্ষে দুটি দেশের নক আউট রাউন্ডে যাওয়া উচিত। যদিও বিষয়টি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। গ্রুপের খেলার ওপরেই সবকিছু নির্ভর করবে।
আফ্রিকা মহাদেশের কোনো দেশ এখনও সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। অথচ আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রচুর খেলোয়াড় ইউরোপের বিভিন্ন লিগে দাপটের সঙ্গে খেলে থাকেন। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর সমস্যা হলো- দুর্বল ফুটবল ব্যবস্থাপনা, ফুটবলে অর্থের অভাব এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। এশিয়ারও একই ধরনের সমস্যা। দুর্বল পেশাদারি ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও অর্থের অভাব। অনেক দেশে আছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া রয়েছে শারীরিক গঠন ও শক্তিতে ঘাটতি। অবশ্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের শারীরিক সামর্থ্য ফুটবল উপযোগী।
সবার জানা আছে, বিশ্বকাপে ইউরোপের দেশগুলোর কোয়ালিফাইং রাউন্ড সবচেয়ে কঠিন। এবার কোয়ালিফাইং করতে পারেনি চারবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, দু’বারের রানার্সআপ এবং একবার তৃতীয় স্থান অধিকারী দল ইতালি। ইতালি বিশ্বকাপে অনুপস্থিত মানে বিশ্বকাপের জৌলুস খানিকটা ম্লান বৈকি।
বিশ্বকাপে তিনবারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস এবার নিটোল দল নিয়ে খেলতে এসেছে। বেলজিয়াম দলটিও অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু এসব দল নিয়ে আমাদের দেশে তেমন হইচই নেই। আনাচে-কানাচে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা। ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে জার্মানি ও ফ্রান্সের কিছু পতাকা। তারকা খেলোয়াড়দের ছবি শোভা পাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। প্রিয় দলের জার্সি অনেকেই গায়ে চাপিয়েছেন।
একসময় বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও ছিল একই পরিস্থিতি। নিজেদের দল না থাকায় ভারত, পাকিস্তান বা অন্যান্য দল নিয়ে আমরা মেতে থাকতাম। এখন নিজেদের দল বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। ফুটবলেও এমন দিন কি আসবে না?