দেশের মাটিতে টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের
- প্রকাশের সময় : ০৮:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫
- / ৮৮৮ বার পঠিত
ঢাকা, ৯ নভেম্বর: দেশের মাটিতে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে এমন কীর্তি গড়লো টাইগাররা। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে এক ওয়ানডে হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে মাশরাফি বাহিনী। এই নিয়ে নবমবারের মত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। আর সব মিলিয়ে ৩-এর অধিক ম্যাচের ২০তম সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানডের চেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের জন্য ৩২ রান কম টার্গেট পায় জিম্বাবুয়ে। জয়ের জন্য ২৪২ রানের টার্গেটে ছুটতে গিয়ে ২৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসে সফরকারীরা। চামু চিবাবা ১৪ ও রেগিস চাকাবা ১ রান করে ফিরে যান। চাকাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার আরাফাত সানি। আর চিবাবার উইকেট তুলে নেন অধিনায়ক মাশরাফি।
শুরুর ধাক্কাটা এরপর ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ক্রেইগ আরভিন ও সিন উইলিয়ামস। কিন্তু সফল হতে পারেননি তারা। মাত্র ২২ রানের জুটি গড়েন আরভিন ও উইলিয়ামস। সেøায়ার ডেলিভারিতে উইলিয়ামসকে বোকা বানান পেসার মুস্তাফিজুর। ১৪ রান করেন উইলিয়ামস।
এরপর আরভিনের সাথে জুটি বেঁধে দলের রানের পালে হাওয়া যোগান অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা। ভয়ংকর হয়ে উঠার আভাস দিচ্ছিলেন এ জুটি। তাতেই সর্তক হয়ে যান বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। সেই সুযোগে আরভিনকে রান আউটের জালে আটকে দেন লিটন দাস। মিড-অফ দিয়ে সরাসরি থ্রোতে আরভিনকে ২৬ রানেই থামিয়ে দেন লিটন। ৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। কারণ তখনও ম্যাচ জয়ের জন্য ১৭৯ বলে ১৬৪ রান দরকার পড়ে সফরকারীদের। তবে ধীরে ধীরে জিম্বাবুয়ে শিবির থেকে চিন্তা দূর করার পণ করেন চিগুম্বুরা। বাংলাদেশ বোলারদের দেখেশুনে খেলার পাশাপাশি রান তোলার গতিটাও ধরে রেখেছিলেন তিনি এবং সিকান্দার রাজা। প্রত্যক ওভারে পাঁচের কিছুটা বেশি রান তুলে দলীয় স্কোর দেড়-শতাধিকের কোটা অতিক্রম করেন চিগুম্বুরা ও রাজা।
তাতে চিন্তাটা সুইচ করে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে দলীয় ১৫১ ও ১৫৬ রানে চিগুম্বুরা ও উইলিয়ামসের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দেন পেসার আল-আমিন হোসেন। ইমরুলের দু’টি ক্যাচেই দু’টি উইকেট অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে আল-আমিনের। তাতেই দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। চিগুম্বুরা ৭৭ বলে ৪৭ ও সিকান্দার ৪২ বলে ৩৩ রান করেন।তাদের বিদায়ে জিম্বাবুয়ের ঘাড়ে চেপে বসে বাংলাদেশের বোলাররা। ফলে ১৮৩ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারী দলের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর। আল-আমিন এবং নাসির নিয়েছেন যথাক্রমে ২টি করে উইকেট। ম্যাচের সেরা হয়েছেন ইমরুল কায়েস। একই ভেন্যুতে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
এর আগে, দ্বিতীয় ম্যাচেও টস ভাগ্যে জয় পান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এলটন চিগাম্বুরা। তামিমের সাথে বাংলাদেশ দলের ইনিংসের শুরু করেন ইমরুল কায়েস। তবে শুরুটা খুব ভালো করতে পারেননি তারা। মাত্র ৩২ রানের জুটি গড়েন তামিম ও ইমরুল। সপ্তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ১৯ রান করে ফিরে যান তামিম।তামিমের পথকে অনুসরণ করে প্যাভিলিয়নে যোগ দেন তিন নম্বরে নামা লিটন কুমার। এবারও ব্যর্থ লিটন। করেন মাত্র ৭ রান। লিটনের পর উইকেটে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে তার ব্যাট এ ম্যাচেও কথা বলেনি। মাত্র ৪ রান করে থামতে হয় মাহমুদুল্লাহকে। ফলে ৩ উইকেটে ৭৯ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
তাই দলের স্কোরে রান তোলার দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের কাঁেধ। সাথে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ইমরুল। ততক্ষণে উইকেটের সাথে সন্ধি করে ফেলেন ইমরুল। তাই মুশফিকুরকে নিয়ে দলের স্কোরটা ভালোই সচল রেখেছিলেন তিনি। তা করতে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান ইমরুল। ইমরুলের হাফ-সেঞ্চুরির পরই নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন মুশফিকুর। ২৮ বলে ২১ রান করে আউট হন গত ম্যাচে ১০৭ রান করা মুশফিকুর। টেস্ট দলপতির বিদায়ের পরও নিজের ইনিংসটাকে বড় করার পথেই হাটচ্ছিলেন ইমরুল। কিন্তু হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। অকেশনাল বোলার সিন উইলিয়ামসকে ছক্কা মারতে গিয়ে জিম্বাবুয়েকে নিজের উইকেটটি উপহার দেন ইমরুল। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৯ বলে ৭৬ রান করেন তিনি। সাত ইনিংস পর দু’অংকের কোটা পেরিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন ইমরুল।
এরপর সপ্তম উইকেটে জুটি বাঁধেন সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন। আগের ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া সাব্বির এবারও তেমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। আর ব্যাট হাতে কিছুটা মারমুখীও ছিলেন তিনি। কিন্তু তার ৪০ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটি থামে দলীয় ১৯৩ রানে। তাতে শেষদিকে দলের স্কোরকে সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিয়ে নেন নাসির। ভালোই সফল হন তিনি। ৩টি বাউন্ডারিতে ৫৩ বলে ৪১ রান করেন নাসির। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৪১ রান করতে পারে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের পক্ষে পেনিয়াঙ্গারা ৩টি উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক চাকাভা ব পেনিয়াঙ্গারা ১৯
ইমরুল কায়েস ক ক্রেমার ব উইলিয়ামস ৭৬
লিটন কুমার দাস ক চাকাভা ব ব পেনিয়াঙ্গারা ৭
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক চাকাভা ব ক্রেমার ৪
মুশফিকুর রহিম ক জঙ্গবে ব ক্রেমার ২১
সাব্বির রহমান ক চাকাভা ব জঙ্গবে ৩৩
নাসির হোসেন ক আরভিন ব পেনিয়াঙ্গারা ৪১
মাশরাফি বিন মর্তুজা ক চিবাবা ব মুজারাবানি ১৩
আরাফাত সানি ক আরভিন ব মুজারাবানি ১৩
আল-আমিন হোসেন অপরাজিত ১
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ৫
অতিরিক্ত বা-৪, লে বা-৬, ও-৭, নো-১ ১৮
মোট ৯ উইকেট, ৫০ ওভার ২৪১
উইকেট পতন : ১/৩২ (তামিম), ২/৪৭ (লিটন), ৩/৭৯ (মাহমুদুল্লাহ), ৪/১২৭ (মুশফিকুর), ৫/১৫১ (ইমরুল), ৬/১৯৩ (সাব্বির), ৭/২৩১ (মাশরাফি), ৮/২৩৪ (নাসির), ৯/২৩৬ (সানি)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
বোলার ওভার মেডেন ওান উইকেট অতিরিক্ত
পেনিয়াঙ্গারা ১০ ০ ৩৮ ১ ও-১
জঙ্গবে ৮ ০ ৪৭ ১ ও-১
মুজারাবানি ৯ ০ ৩২ ২ ও-১
সিকান্দার ৭ ০ ৩৩ ০ ও-২
ক্রেমার ১০ ০ ৪১ ২ ও-১
উইলিয়ামস ৬ ০ ৩৭ ১ নো- ১, ও-২
জিম্বাবুয়ে ইনিংস :
চিবাবা ব মাশরাফি ১৪
চাকাভা এলবিডব্লু ব আরাফাত ১
আরভিন রান আউট (লিটন) ২৬
উইলিয়ামস ক নাসির ব মুস্তাফিজুর ১৪
চিগুম্বুরা ক ইমরুল ব আল-আমিন ৪৭
সিকান্দার ক ইমরুল ব আল-আমিন ৩৩
ওয়ালার ক মুশফিকুর ব নাসির ৮
জঙ্গবে ব মুস্তাফিজুর ১১
ক্রেমার স্ট্যাম্পড মুশফিকুর ব নাসির ১
পেনিয়াঙ্গারা ক মাশরাফি ব মুস্তাফিজুর ৪
মুজারাবানি অপরাজিত ১
অতিরিক্ত লে বা-১১, ও-১২ ২৩
মোট অলআউট, ৪৩.২ ওভার ১৮৩
উইকেট পতন : ১/২২ (চাকাবা), ২/২৩ (চিবাবা), ৩/৪৫ (উইলিয়ামস), ৪/৭৮ (আরভিন), ৫/১৫১ (সিকান্দার), ৬/১৫৬ (চিগুম্বুরা), ৭/১৭৫ (ওালার), ৮/১৭৭ (জঙ্গবে), ৯/১৮১ (পেনিয়াঙ্গারা), ১০/১৮৩ (ক্রেমার)।
বাংলাদেশ বোলিং :
বোলার ওভার মেডেন রান উইকেট অতিরিক্ত
মুস্তাফিজুর ৮ ০ ৩৩ ৩ ও-৩
মাশরাফি ৯ ১ ৪৭ ১ ও-২
আরাফাত ৯ ০ ৩৪ ১ ও-২
আল-আমিন ৮ ০ ২২ ২ ও-১
নাসির ৯.২ ০ ৩৬ ২ ০
ফল : বাংলাদেশ ৫৮ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইমরুল কায়েস (বাংলাদেশ)।