পেলের প্রিয় ক্লাব সান্তোস এফসির স্টেডিয়ামে ব্রাজিলীয় ভাষায় লেখা দীর্ঘজীবী হোন রাজা। সবার চোখ একবার হলেও সেখানে আটকে গেছে। সান্তোস এএফসি থেকে ফুটবলের রাজা পেলের কফিন বের হবে। তাই ভোর হতে মানুষের ঢল। সান্তোস ক্লাবের আশপাশে নিরাপত্তা কর্মীদের ভিড়। কালো রঙয়ের কফিন ব্রাজিলের পতাকায় মোড়া, ভেতরে প্রিয় ফুটবলার। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস লুলা ডি সিলভা। সান্ত্বনা দিয়েছেন পেলের পরিবারকে।
দুই পাশে চার জন করে আট জন বিশেষ পুলিশ কফিন কাঁধে গাড়িতে তোলেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পুলিশের বাঁশির শব্দ আর অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সান্তোসের জার্সি গায়ে ব্রাজিলের ফুটবল ভক্তরা। কেউ ১০ নম্বর জার্সি কারো গায়ে ৯ নম্বর জার্সি। নতুন প্রজন্মের যারা পেলের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন তারা কেউ পেলের খেলা দেখেননি। তার পরও পেলের ফুটবলের গল্প শুনেই বড় হয়েছেন।
পৃথিবীতে ফুটবল খেলাটা জনপ্রিয় করতে পেলের পায়ের জাদু কতটা প্রভাব ফেলেছিল, তা শুনতে শুনতে বড় হয়েছে পেলের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ। সান্তোস থেকে পেলের কফিন বের করার সময় দেখা গেছে রাস্তার দুই পাড় জুড়ে মানুষের ঢল। বারান্দা, জানালায় দাঁড়িয়ে বিদায় দিতে দেখা যায়। পেলের কফিনের পেছনে ছুটছে মোটরসাইকেল, গাড়ি। ফুটবল সম্রাটের শেষ যাত্রার ছবি ধরে রাখতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন ব্রাজিলীয়রা। অনেক বয়স্ক মানুষ ব্রাজিলের পতাকা হাতে নিজ বাড়ির দুয়ারে বসে হাত নেড়ে পেলেকে বিদায় দিয়েছেন। পেলের কফিন পুরো শহর ঘুরিয়ে নেওয়া হয়।
অনুমান করা যায়, তারা হয়তো কেউ কেউ পেলের খেলা দেখেছেন। তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠা আবেগ বলছিল কতটা কাছের মানুষকে বিদায় দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ফুটবলের রাজা পেলে। দীর্ঘদিন কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন ৮২ বছর বয়সের মানুষটি। শেষ পর্যন্ত মরণব্যাধির কাছে হার মানতে হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলকে কাঁদিয়ে গেলেন পেলে। ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি মারাদোনার মৃত্যুর শোক যখন ফুটবলপ্রিয় মানুষের মনটাকে শোকাচ্ছন্ন করে রেখেছিল। ঠিক সে সময় আরেক কিংবদন্তি পেলের মৃত্যু শোকের ভার বাড়িয়ে দিল।
সান্তোসের জার্সি গায়ে ফুটবল ভক্তরা ঢোলবাদ্য বাজিয়ে পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নেমে পড়ে। হাতে আরেক ফুটবলার গারিঞ্চার সঙ্গে পেলের ছবি। হাতে বিশ্বকাপ।
মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিয়া সিমেট্রিতে ১৪ তলা ভবনের নবম তলায় পেলের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভার্টিক্যাল সিমেট্রি। পেলে এই স্থানটি পছন্দ করে রেখে গিয়েছিলেন। তার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়। ২০০৩ সালেই কিনে রাখা হয়েছিল এই কবরটি। পেলের বাবা ৯ নম্বর জার্সি গায়ে ফুটবল খেলত বলে এই ভবনের ৯ তলায় তাকে সমাহিত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এই সিমেট্রিতে ১৪ হাজার কবর। বাগান, ওয়ার্টারফল, রেস্তোরাঁ, গাড়ির মিউজিয়াম।