এশিয়া ক্রিকেট কাপ : চ্যাম্পিয়ন ভারত ॥ বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পন
- প্রকাশের সময় : ০৯:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০১৬
- / ১০৬৯ বার পঠিত
ঢাকা: হলো না এবারও। এশিয়া কাপের শিরোপা অধরাই থেকে গেল বাংলাদেশের। যা হয়নি চার বছর আগে একই ভেন্যু মিরপুরে। তবে সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে যে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশকে দেখা গিয়েছিল ৬ মার্চ রোববার ছিল তা অনুপস্থিত। খেলার আগে মাঠ ও মাঠের বাইরে যে উচ্ছ্বাস আর উদ্যম ছিল- মাঠে দেখা গেল না তাও। র্যাঙ্কিংসেরা ভারতের জয় অপ্রত্যাশিত ছিল না, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষাতেও ছিল না জয়ের অদম্য আকাঙ্খা। ১২১ রানের টার্গেট দিয়ে বোলিংয়ের শুরুটা ছিল দারুণ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই সাকিব-মুশফিকদের মনে হয়েছে অসহায়। দ্বিতীয় ওভারের সাফল্যের পর কিছুটা সময় ভারত একটু চাপেই ছিল। কিন্তু শিখর ধাওয়ান আর বিরাট কোহলির সাবলীল ব্যাটিংয়ের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন সবাই। ব্যাটিং সহায়ক পিচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা করতে পারেন নি টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিচ আরও ব্যাটিং সহায়ক হয়ে পড়ায় ১২১ রানের লক্ষ্য তেমন বড় মনে হয়নি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে স্বাগতিকরা হেরেছে আট উইকেটে। আগে ব্যাট করে কর্তিত ওভারের এই ম্যাচে ১২০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। দুটি পরিবর্তন, চার পেসার নিয়ে খেলা এসব কিছুই দমাতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। ১৫ ওভারের ম্যাচে সাত বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ধোনিরা। শিখর ধাওয়ান তার টি-২০ ক্যারিয়ার সেরা ৬০ রান করে আউট হলেও ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন বিরাট কোহলি। ম্যাচ সেরা হন ধাওয়ান আর আসর সেরা হন বাংলাদেশের সাব্বির রহমান। রানার্স আপ বাংলাদেশ পায় ৩০০০০ ডলার। আর চ্যাম্পিয়ন ভারত পায় ৬০০০০ ডলার। এটি ভারতের ষষ্ঠ এশিয়া কাপ শিরোপা।
ভারতের জয়ের আগে রোববার প্রথম জয়টা হয়েছে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেরই! সন্ধ্যা ৬টা থেকে থেকে যেভাবে ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তাতে এশিয়া কাপ ফাইনালের ভাগ্য অন্ধকারেই মুখ লুকাতে বসেছিল। দেড় ঘন্টা আগেই প্রায় ভরে যাওয়া গ্যালারি খালি হয়ে গিয়েছিল এক দমকা হাওয়াতেই। গ্যালারির বিভিন্ন জায়গায় লাগানো স্পন্সরের ব্যানার, পোষ্টারও ততোক্ষণে ভেসে গেছে বৃষ্টির বানে। দর্শকরা আশ্রয় নিয়েছে ছাউনির নিচে। এভাবে গেলো ঘন্টা খানেক। থামতে শুরু করেছে বৃষ্টি। কিন্তু মিরপুরের মাঠ তো চুপচুপেই। খেলা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে তখনো সংশয়। কিন্তু মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের ধারণা ছিলো বৃষ্টি থামার পর তারা ঠিকই ম্যাচ শুরুর অপেক্ষা করছিলেন। হলোও তাই। পৌনে আটটার দিকে বৃষ্টি থামতেই ম্যাচ শুরু করার বন্দোবস্তে লেগে গেলো গোটা তিরিশেক মানুষ। তখনই বোঝা গেছে মাঠে গড়াচ্ছে ম্যাচ। কাজ চললো পুরো সোয়া এক ঘন্টা। এরপরই ঘোষণা এলো ১৫ ওভারের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। টসের পর মাশরাফি বলছিলেন, জিতলে তিনিও আগে বোলিংই নিতেন। এমন ছোট হয়ে আসা ম্যাচে যে পরে ব্যাটিং করাটাই সুবিধাজনক। ধোনিও টস জিতে বোলিং নেয়ার কারণ হিসেবে এটিকেই দেখাচ্ছিলেন। কালবৈশাখীর ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত শুরু হয়েছে ম্যাচ। কর্তিত ওভারের ম্যাচে সৌম তামিমের কল্যাণে শুরুটা হয়েছিল ঝড়ের মতো। চতুর্থ ওভারেই সে ঝড় থামিয়েছেন নেহেরা। মাঝের নয়টি ওভারে সাব্বির-সাকিবদের লাগাম টেনে ধরে ছিলেন অশ্বিন জাদেজারা। ঠিক তখনই আবারও মিরপুরে কালবৈশাখী। মাহামুদুল্লাহর এ ঝড়ে একেবারে দিশেহারা করেছেন এবারের এশিয়ার কাপের সবচেয়ে কৃপন বোলার হারদিক পান্ডেকে। তার করা ম্যাচের ১৪তম ওভারেই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান পাকিস্তান জয়ের অন্যতম এ কারিগর। ওই ওভারের দুই ছয় এক চারে ২০ রান সংগ্রহ করেন মাহামুদুল্লাহ। মূলত তার ১৩ বলের ৩২ রানের টনেডো ইনিংসের উপর ভর করেই ভারতকে ১২০ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। আগে বোলিং নেয়া ভারত এদিন একাদশে তিনটা পরিবর্তন আনে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে যে দলটি খেলেছিল পেসই দলটিই রোববার খেলছে। তার মানে ভুবনেশ্বর, হরভজন ও পবন নেগির বদলে দলে আসছেন জাদেজা, নেহরা ও অশ্বিন। এদের মধ্যে অশ্বিন বোলিং করেছেন চমৎকার। তার তিন ওভার থেকে মাত্র ১৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সাব্বির-সাকিবকে ভুগিয়েছেন জাসপিত বোমরা। এদিন তামিমের উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ১৩ রান খরচ করেছেন এই ভারতীয় পেসার। এই দুজনই স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের হাত খুলতে দেননি। সাব্বিরের দিকে তাকালেই যার প্রমান মিলে। পুরো এশিয়া কাপে দুর্দান্ত খেলা সাব্বির এদিনও চেষ্টা করেছেন। অপরাজিত থেকে ২৯ বলে ৩২ রান করেছেনও। তবে যেভাবে খেলতে চেয়েছেন সেটা হয়নি। ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব ফাইনালে খেলেছেন ১৬ বলে ২১ রানের এক কার্যকর ইনিংস। তবে সবাইকে ছাপিয়ে মাহামুদুল্লাহ। তার ছোট্ট একটু ঝড়ে পালটে যায় খেলার দৃশ্যপট। মাত্র ১৩ বলে ৩২ রানে অপরাািজত থাকেন তিনি। মাহামুদুল্লহর ঝড়ে ১৫ ওভারে ১২০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। পুঁজিটাকে যথার্থ প্রমাণে শুরুতেই যথারীতি ব্রেক থ্রু এনে দেয় আল আমিন। উইকেট না পেলেও রানের লাগাম টেনে ধরেছিলেন তাসকিনও। এরা দুজন শুরুর ৪ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ১৯ রান। আবু হায়দার রনির পঞ্চম ওভারে ১৪ রান নিলে ম্যাচে ফেরে ভারত। সাকিবের করা পরের ওভারে কোহলি-ধাওয়ান ১৫ রান যোগ করলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভারতের হাতে। সেখান থেকে নাসির চেষ্টা করেছেন। তার বলে ডীপ মিডউইকেট ক্যাচও ছেড়েছেন আল আমিন। তাতে যা হবার তাই হয়েছে। শেখর ধাওয়ান হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ৩৬ বলে। ৬০ করে তাসকিনের বলে সৌমের হাত ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ধাওয়ান। তার ফেরাটা বিলম্বিতই হয়েছে বলা যায়। ধাওয়ানের ফেরার মাত্র এক ওভার খেলা দীর্ঘায়িত হয়েছে। আল আমিনের করা একটি ওভার খেলেছেন ভারত অধিনায়ক। ওই ওভারে ২০ রান সংগ্রহ করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছেন এই ক্যাপ্টেন কুল। এদিন মোটেও সুবিধা করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। তার করা দুই ওভারে ২৬ রান তুলে নিয়েছেন ধাওয়ান বিরাট কোহলি। বল হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মাশরাফি আল আমিনও। (দৈনিক মানবজমিন)