আনন্দের অন্যরকম মঞ্চ

- প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৪৪ বার পঠিত
ক্রীড়া ডেস্ক : লম্বা সময় পর আনন্দের অন্যরকম মঞ্চ। হিমালয় বিজয়িনীদের অভ্যর্থনা জানাতে চলছে ক্ষণগণনা। আজকের দুপুরটা হবে অন্যরকম, কারণ সাফজয়ী নন্দিনীরা দেশে পা ফেলবেন বীরবেশে। স্বজন, পরিচিতজন, শহর-গ্রামের মানুষ ফুটবলকন্যাদের নিয়ে উল্লাসে মাততে সবাই আছেন মুখিয়ে।
সোমবার রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালের দর্শকদের একদম নিশ্চুপ করে দেন বাংলার জ্যোতির্ময় নারীরা। সেই থেকে বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে লেগেছে উৎসবের রং। প্রমীলা ফুটবলারদের ঘর হয়ে উঠেছে উচ্ছ্বাসের আঙিনা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাংলাদেশ ভাসছে আনন্দের জোয়ারে।
সাফজয়ী কন্যারা গ্রামের খেলার মাঠে যেতেন রীতিমতো লড়াই করে। কখনও দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ, কখনও মানুষের নেতিবাচক কথা হজম করার যুদ্ধ। পরিবারের অনেক বারণ, এলাকাবাসীর কটুকথা, উত্ত্যক্ত সহ্য করেও একাগ্র চিত্তে ফুটবলে মনোনিবেশ করে দেশকে বড় সাফল্য এনে দিলেন তাঁরা।
সাবিনার বাড়িতে আনন্দের ফল্কগ্দুধারা :নারী ফুটবল দলের দলনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের ফল্কগ্দুধারা। শহরের সবুজবাগ এলাকায় সাবিনাদের বাস। পরিবারে পাঁচ বোনের মধ্যে সাবিনা চতুর্থ। বাবা সৈয়দ আলী গাজী ছিলেন ব্যবসায়ী, এখন আর বেঁচে নেই। সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুনে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার মেয়ের ধ্যান-জ্ঞান ফুটবল ঘিরে। টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় ও আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় আমাদের আনন্দের শেষ নেই। ওর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে কী যে খুশি হতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেতার পর সাবিনা নেপাল থেকে কয়েকবার আমাকে ফোন করেছে। জানতে চেয়েছে, আমরা তার ফাইনাল খেলা দেখেছি কিনা।’
জীর্ণ কুঁড়েঘরে রুপনার প্রতীক্ষায় মা :’ছোটবেলায় একবার রুপনার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। তবু তাকে আটকানো যায়নি। মাঠে গেলই গেল। ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহের কাছে আমরা হেরেছিলাম। এখন আমার মেয়ে দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনায় গর্ববোধ করছি, খুব খুশি লাগছে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে বেড়ে ওঠা নারী সাফ ফুটবলের সেরা গোলরক্ষক রুপনার মা কালোসোনা চাকমা মেয়েকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন।
রাঙামাটির নানিয়ারচরের ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম ভুইয়োদামে জন্ম রুপনা চাকমার। তিনি পৃথিবীতে আসার আগেই মারা যান বাবা গাথা মনি চাকমা। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রুপনা সবার ছোট। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে রুপনাকে বড় করে তোলেন মা। গ্রামের হাছাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাঁর ফুটবলশৈলী নজরে আসে শিক্ষক বীরসেন চাকমার। পরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁকে ঘাগড়াতে নিয়ে যান বীরসেন ও শান্তি মনি চাকমা। ঘাগড়া প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির পর গোলরক্ষকের প্রশিক্ষণ দেন শান্তি মনি। ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাঁর অদম্য শক্তি ও পরিশ্রমে আন্তর্জাতিক অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলে ডাক পান রুপনা। এর পরই তাঁর নামটি ইতিহাস হয়ে গেল।
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে দুর্গম রাস্তা ও বাঁশের তৈরি সেতু পেরিয়ে রুপনার বাড়ি। গতকাল সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রুপনার মা বসে রয়েছেন জীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে। পাশে তাঁর ভাইয়ের বাড়ি। সাংবাদিক গেছে জানতে পেরে গ্রামের মুরব্বিরাও ছুটে যান রুপনার বাড়ি। গ্রামের মেয়ে রুপনা ও তাঁর দল দেশের জন্য শিরোপা ছিনিয়ে আনায় খুশিতে আত্মহারা গ্রামবাসী।
এদিকে, গতকাল রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রুপনার বাড়ি ভুইয়োদামে ও ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়িতে যান। এ সময় দুই নারী ফুটবলারের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে ৩ লাখ টাকা উপহার তুলে দেন।
সাফল্যের শিখরে কৃষ্ণা :এই দিনটির জন্যই ছিল পরিবারের সবার অপেক্ষা। তাঁরা জানতেন কৃষ্ণা একদিন দেশের জন্য সফলতা বয়ে আনবেন। কৃষ্ণা রানী সরকারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলের গোপালপুরের উত্তর পাথুলিয়া গ্রামে। দর্জির কাজ করে কোনো রকমে সংসারের চাকা ঘোরান বাবা। অভাবের সংসার। দুই ভাইবোনের মুখে কখনও দু’বেলা ভাত জোটেনি। সেই কৃষ্ণা আজ শিকড় থেকে সাফল্যের শিখরে। হিমালয়কন্যাদের বধ করার মিশনে কৃষ্ণার ছিল জোড়া গোল। এতেই আরও বেশি আনন্দে ভাসছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মানুষ।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি লক্ষ্য থেকে কৃষ্ণাকে টলাতে পারেনি এক চুলও। প্রাথমিকে পড়ার সময় ছেলেদের সঙ্গে কৃষ্ণাও ফুটবল খেলতেন। এ নিয়ে পাড়ার লোকজন ছুড়ত বাজে মন্তব্য। মা-বাবা মাঝেমধ্যেই করতেন বকাঝকা। কৃষ্ণার খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁর কাকা একদিন বল কিনে দেন। পরে মানুষের কটুকথা সহ্য করতে না পেরে তাঁর মা একদিন বঁটি দিয়ে ফুটবল কেটেছিলেন। তবু থামেননি কৃষ্ণা। যে ১৬ কোটি মানুষের ‘তাজ’ হবে তাঁকে কি আর থামিয়ে রাখা যায়?
মঙ্গলবার দুপুরে কৃষ্ণাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অনেকেই তাঁদের বাড়িতে এসেছেন। সবাই কৃষ্ণার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পাড়ার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত। কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব সরকার বলেন, ‘মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি হয়েছি। এলাকার মানুষও শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে পারে সেই আশীর্বাদ চাই।’
স্বপ্নার স্বপ্নজয় :সিরাত জাহান স্বপ্নার রংপুরের বাড়িতে চলছে বাঁধভাঙা উল্লাস। অজপাড়াগাঁর এ মেয়ে দেশের হয়ে খেলে বিজয় মুকুট ছিনিয়ে এনেছেন। অভাব-অনটনের সঙ্গে সংগ্রাম ছিল স্বপ্নার নিত্যসঙ্গী। পদে পদে বাধা পাওয়া সেই মেয়েটির দলই আজ বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। সাফে স্বপ্নাদের বড় অর্জনে আনন্দের সীমা নেই স্বপ্নার পরিবার, গ্রামবাসী ও অনুজদের মাঝে। স্বপ্নার নান্দনিক ফুটবলে সাফের শিরোপা জয়ে রাতেই গ্রামের মানুষ আনন্দ মিছিল করে স্বপ্নার বাড়িতে জমায়েত হন। একে অপরকে মিষ্টিমুখ করে আনন্দ উদযাপন করেন।
দেশ ও মেয়ের জয়ে আনন্দ অশ্রুতে পরিণত হয় ধান ভাঙার কাজ করে সংসার চালানো স্বপ্নার মা লিপি বেগমের। তিনি বলেন, ‘তিন মেয়ের মধ্যে স্বপ্না ছোট। ছোটবেলা থ্যাকি ওর ফুটবল খেলার নেশা। ২০১১ সালে প্রথম স্বপ্না বঙ্গমাতায় ফুটবল খেলে। হারুন স্যার ওকে ফুটবল খেলার জন্য নিয়া গেছিল। এলাকার মানুষ নানান কতা কইছে।’
জানা যায়, নয়াপুকুরের বর্গাচাষি মোকছেদ আলীর ছোট মেয়ে স্বপ্না। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে অসাধারণ প্রতিভা ছিল তাঁর। তাই চতুর্থ শ্রেণিতে থাকাকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে পালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে তাক লাগান স্বপ্না।
মারিয়ার ঘরে অভাব :মারিয়া মান্দার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুরের দক্ষিণ গামারিতলা ইউনিয়নের মন্দিরকোনা গ্রামে। নৌকায় নেতাই নদী পার হয়ে যেতে হয় মারিয়া মান্দাদের বাড়িতে। সেখানে শখানেক মন্দি পরিবার রয়েছে। মারিয়া উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বর্তমানে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় তিনি। কৃষক বাবা ধীরেন্দ্র মারাক মারা গেছেন ১৪ বছর আগে। অভাবের সংসারে চার সন্তানকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন মা এনতা মান্দা।
তিনি জানান, অভাবের সংসারে তিন বেলা খাবার দিতে পারেননি মেয়েকে। তবুও অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন খেলা শিখেছেন। আজ দেশের জন্য আনন্দ এনেছেন মেয়ে।
সুদিন ফিরেছে সানজিদার পরিবারে :সানজিদা আক্তারও ধোবাউড়ার কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের প্রথম দিকের যোদ্ধা। তাঁর বাড়ি কলসিন্দুর গ্রামেই। কৃষক লিয়াকত আলী ও জ্যোৎস্না খানম দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সানজিদা। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় খেলা শুরু হয় সানজিদার। মা অনেক নিষেধ করলেও কথা শোনেননি সানজিদা। বাবার আগ্রহে খেলা চালিয়ে আজ গর্বিত করেছেন পরিবার ও দেশকে।
বাবা লিয়াকত আলী জানান, কলসিন্দুর বাজারে বসে অনেক লোকের মাঝে খেলা দেখেছেন। মেয়ে গোল না দিতে পারলেও ভালো খেলেছেন। বাবার বারণ শোনেননি শামছুন্নাহার জুনিয়র :শামছুন্নাহার জুনিয়র খেলার ১৪ মিনিটে প্রথম গোল করেন। গামারিতলা ইউনিয়নের রানীপুর গ্রামের নেকবর আলীর মেয়ে শামছুন্নাহার তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। বাবা নেকবর আলী বলেন, ‘খেলায় যেতে অনেক নিষেধ করেছিলাম মেয়েকে। সে শোনেনি। মানুষ অনেক খারাপ কথা বলত। মফিজ স্যারের অনুরোধে মেয়েকে খেলায় পাঠিয়েছিলাম। আজ বিদেশ সফর করছে, খেলছে, দেশের জন্য জয় এনে দিচ্ছে- এটা অনেক আনন্দের।’
ফোন করে দোয়া চেয়েছেন শামছুন্নাহার সিনিয়র :কৃষক মিরাস উদ্দিনের মেয়ে শামছুন্নাহার সিনিয়র। কলসিন্দুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ূয়া শামছুন্নাহারের বাড়ি রানীপুর গ্রামে। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ তিনি। মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘ছেলেরা ফুটবল খেলে জানতাম, মেয়েরা এসবে যায় না। মেয়েকে অনেক নিষেধ করা হলেও খেলায় যায়। এখন ভালো খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
শিউলিকে ঘিরে সবার স্বপ্ন :গারো পাহাড়ের কাছাকাছি নলগড়া গ্রামে শিউলি আজিমের বাড়ি। ওই গ্রামের কৃষক নিকুঞ্জ হাউই ও বাসনা আজিমের মেয়ে শিউলি আজিম। দুই বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। শিউলির ছোট ভাই তুষার আজিম বলেন, বোনকে ঘিরে আমাদের সব স্বপ্ন। বোন শুধু আমাদের না, দেশের সম্পদ।
লুকিয়ে খেলায় যেতেন মার্জিয়া :ধোবাউড়া থেকে কলসিন্দুর যাওয়ার পথে মার্জিয়া আক্তারদের বাড়ি। সাখারিয়াপাড়ার বর্গাচাষি মোতালেব হোসেনের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পঞ্চম তিনি। বাবা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ক্ষেতে কাম কইর্যা খাই। মেয়ে ফুটবল খেলতে গেলে মানুষ অনেক মন্দ কথা কইতো। তহন যাইতে দিতাম না। অনেকদিন পলায়া খেলায় যাইতো। না গেলে স্যারেরা আইয়্যা লাইয়্যা যাইতো। কিন্তু এহন মেয়ে আমার গর্ব।’
তহুরাকে নিয়ে গর্ব করেন বাবা :গতকাল বিকেলে কলসিন্দুরের রানীপুর গ্রামে তহুরাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পাকা ভবনের কাজ চলছে। বাড়ির ভেতরে লোকজনকে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কৃষক বাবা ফিরোজ মিয়া। তহুরা খাতুন এবার উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছেন কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় তহুরা এখন পরিবারের সবার গর্ব। তাঁর বাবা ফিরোজ মিয়া জানান, মেয়েকে শুরুতে খেলায় যেতে দিতেন না। পরে স্কুল থেকে সব শিক্ষক তাঁর বাড়িতে আসেন। শিক্ষকরা অনেক বোঝানোর পর মেয়েকে দিতে সম্মত হন তিনি।
ফুটবলের জাগরণে আঁখি পাচ্ছেন বাহবা :সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাড়কোলা গ্রামে আঁখি খাতুনের বাড়ি। বাবা তাঁতশ্রমিক আকতার হোসেন। দেশের ফুটবলের অনন্য এ জাগরণে অন্যদের মতো আঁখিও পাচ্ছেন বাহবা। অথচ এ বাহবার পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও কষ্টের গল্প। যাঁরা আগে আঁখিকে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করতেন, তাঁরাই এখন তাঁকে বাহবা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন।
আঁখির বাবা আকতার হোসেন বলেন, ‘এলাকার স্কুলের মনসুর স্যার ও লাকী ম্যাডাম আঁখিকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। আঁখির জন্য আজ আমি গর্বিত ও সম্মানিত।’
দ্যুতি ছড়িয়েছেন খাগড়াছড়ির তিন ফুটবলার :নারী ফুটবল দলের তিন সদস্য খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা। তাই জেলাবাসীর আনন্দ রীতিমতো উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরছে আনাই-আনুচিং আর মনিকার প্রশংসা। খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস তাঁর ফেসবুকের দেয়ালে তিন নারী ফুটবলারের জন্য ৩ লাখ টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেন।
যমজ বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীদের বাড়ি খাগড়াছড়ির সাতভাইয়াপাড়ায়। ভৌগোলিকভাবে শহরতলিতে হলেও তাঁদের গ্রামটি একেবারেই দুর্গম। সরু-কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এক সাঁকো পেরোলেই তাঁদের ঘর। ঢোকার মুখেই বাড়ির দেয়ালে বাহারি রঙে আঁকা চারটি ফুটবল।
আনাই-আনুচিংয়ের বাবা রিপ্ররুচাই মগ বলেন, ‘মেয়েরা দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনায় আমি খুব খুশি। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তারা নাকি খুশিতে গত রাতে ঘুমাতে পারে নাই। সারারাত আনন্দ করেছে।’
দুর্গম লক্ষ্মীছড়ির মরাচেঙ্গী গ্রামে আরেক কৃতী ফুটবলার মনিকা চাকমার বাড়ি। তাঁর বাবা বিন্দু কুমার চাকমা সোমবারের সাফ বিজয়ের খবর প্রথম শুনেছেন গভীর রাতে মেয়ের ফোন পেয়ে। তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে ইউএনও অফিস থেকে আমাকে ডেকে নেওয়া হয়। প্রশাসনের লোকজনসহ সবাই মিলে মিষ্টিমুখের মাধ্যমে মেয়ের বিজয় উদযাপন করেছি।’
হককথা/এমউএ