নিউইয়র্ক ০৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা

মুক্তি পেলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১১:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • / ১৬৩ বার পঠিত

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গত সোমবার তাকে মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

নিজের অপরাধ স্বীকার করার বিষয়ে অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। অ্যাসাঞ্জ এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন বলে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পুলিশ ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালের গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়ে আসছে যে, অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অনেক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। প্রসঙ্গতঃ, ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হৈ-চৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এরপর অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র, শুরু হয় গ্রেফতার তৎপরতা। গ্রেফতার এড়াতে এক পর্যায়ে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন এবং সেখানেই প্রায় সাত বছর কাটান।

২০১৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি এখন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নিবেন। কিন্তু তাকে নতুন করে আর কারাগারে যেতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি’র পার্টনার সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে যে, নিজের অপরাধ স্বীকার করার জন্য অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে পাঠানো হবে না। উল্টো, এতদিন তিনি যে কারাভোগ করেছেন, সেটির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

অ্যাসাঞ্জ ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ নিজেদের অ্যাকাউন্টে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে যে, যুক্তরাজ্যের কারাগারের একটি ছোট্ট কক্ষে ১৯০১ দিন বন্দী থাকার পর সোমবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছাড়া পেয়েছেন। ‘(সোমবার) বিকালে তাকে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে ছেড়ে দেওয়া হয়, যেখান থেকে তিনি একটি বিমানযোগে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন,’ বলেছে উইকিলিকস। অ্যাসাঞ্জ এরপর অস্ট্রেলিয়া ফিরবেন বলেও জানানো হয়েছে।

এক্স অ্যাকাউন্টে অ্যাসাঞ্জের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে উইকিলিকস। সেই ভিডিওতে জিনস ও নীল রঙের শার্ট পরা অ্যাসাঞ্জ স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে দেখা গেছে। তবে বিবিসির পক্ষে স্বাধীনভাবে ভিডিওটি যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস অ্যাসাঞ্জ এক্স পোস্টে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে পাশে থেকেছেন বলেই মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবি পূরণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেটি অনুযায়ী অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আগামী ২৬শে জুন উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত বলেই বিচারিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওই দ্বীপটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অ্যাসাঞ্জের মুক্তি এবং মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে তার আইনজীবী রিচার্ড মিলার কোনও মন্তব্য করেননি। তবে এরআগে দীর্ঘদিন ধরে তার পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সূত্র : বিবিসি।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা

মুক্তি পেলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

প্রকাশের সময় : ০৬:১১:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গত সোমবার তাকে মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

নিজের অপরাধ স্বীকার করার বিষয়ে অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। অ্যাসাঞ্জ এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন বলে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পুলিশ ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালের গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়ে আসছে যে, অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অনেক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। প্রসঙ্গতঃ, ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হৈ-চৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এরপর অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র, শুরু হয় গ্রেফতার তৎপরতা। গ্রেফতার এড়াতে এক পর্যায়ে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন এবং সেখানেই প্রায় সাত বছর কাটান।

২০১৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি এখন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নিবেন। কিন্তু তাকে নতুন করে আর কারাগারে যেতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি’র পার্টনার সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে যে, নিজের অপরাধ স্বীকার করার জন্য অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে পাঠানো হবে না। উল্টো, এতদিন তিনি যে কারাভোগ করেছেন, সেটির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

অ্যাসাঞ্জ ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ নিজেদের অ্যাকাউন্টে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে যে, যুক্তরাজ্যের কারাগারের একটি ছোট্ট কক্ষে ১৯০১ দিন বন্দী থাকার পর সোমবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছাড়া পেয়েছেন। ‘(সোমবার) বিকালে তাকে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে ছেড়ে দেওয়া হয়, যেখান থেকে তিনি একটি বিমানযোগে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন,’ বলেছে উইকিলিকস। অ্যাসাঞ্জ এরপর অস্ট্রেলিয়া ফিরবেন বলেও জানানো হয়েছে।

এক্স অ্যাকাউন্টে অ্যাসাঞ্জের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে উইকিলিকস। সেই ভিডিওতে জিনস ও নীল রঙের শার্ট পরা অ্যাসাঞ্জ স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে দেখা গেছে। তবে বিবিসির পক্ষে স্বাধীনভাবে ভিডিওটি যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস অ্যাসাঞ্জ এক্স পোস্টে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে পাশে থেকেছেন বলেই মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবি পূরণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেটি অনুযায়ী অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আগামী ২৬শে জুন উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত বলেই বিচারিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওই দ্বীপটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অ্যাসাঞ্জের মুক্তি এবং মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে তার আইনজীবী রিচার্ড মিলার কোনও মন্তব্য করেননি। তবে এরআগে দীর্ঘদিন ধরে তার পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সূত্র : বিবিসি।