তাইওয়ানের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪৬ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাইওয়ানের ভোটাররা তাদের জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে আগামী ১৩ জানুয়ারি ভোট দিতে যাচ্ছেন। এই ভোটের দিকে বেশ গভীরভাবে তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কারণ এই স্বায়ত্ত্বশাসিত দ্বীপটি ওয়াশিংটন ও বেইজিং দুই পক্ষের জন্যই কৌশলগতভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
এই নির্বাচনের ফলাফল চীনের সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং একইসঙ্গে এই পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়াতে পারে ও সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) সাই ইং-ওয়েন। চীন এই রাজনৈতিক দলকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে থাকে। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর সংবিধান অনুসারে সরে দাঁড়াচ্ছেন সাই ইং-ওয়েন। এখন তার উত্তরসূরী হওয়ার লড়াইয়ে তিনজন প্রার্থী আছেন।
তবে ডিপিপি অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে ১১৩ সদস্যের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার আশা করছে, তাহলে আইন তৈরি, বাজেট, যুদ্ধ ঘোষণা এবং কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে।
বর্তমান প্রার্থীদের মধ্যে লাই একজন সাবেক ডাক্তার, যিনি তাইওয়ানের সম্ভাব্য সবরকম শীর্ষ রাজনৈতিক পদেই বসেছেন। ২০২০ সাল থেকেই তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে। প্যান-গ্রিন জোটেরও নেতা তিনি ও চীনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সম্পূর্ণ বিপক্ষে, তাইওয়ানের স্বতন্ত্র সত্তার পক্ষের একজন ঘোর সমর্থক।
তিনি চীনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। চীনের কাছে তিনি কট্টরপন্থি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ এবং ‘সাইয়ের চেয়েও আরও বেশি খারাপ’। কিন্তু ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তিনি ততই সাইয়ের বলা কথারই পুনরাবৃত্তি করছেন, যে তাইওয়ান এরইমধ্যে স্বাধীন, আর এর নতুন করে কোনো ঘোষণার দরকার নেই।
অন্য প্রার্থী হউ ইয়ো-ই, কুমিনতাং (কেএমটি) একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। ২০২২ সালে নিউ তাইপে সিটির (রাজধানীর পাশের শহর) মেয়র হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি, একজন মধ্যপন্থার যোগ্য লোক হিসেবে খ্যাতি আছে তার।
প্যান-ব্লু জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি, চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন – এমনকি প্রয়োজনে ভবিষ্যতে মিলিত হয়ে যাওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী তিনি। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেন, তার আপাতত লক্ষ্য থাকবে তাইওয়ানের বর্তমান যে পরিচিতি, অর্থাৎ চীনের সঙ্গে মিলে যাওয়াও না, আবার স্বাধীনতার ঘোষণা না, সেটাই ধরে রাখা।
আরেক প্রার্থী কো ওয়েন-জে, তাইওয়ান পিপলস পার্টি (টিপিপি) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০১৪ সালে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের মেয়র পদে লড়ার আগ পর্যন্ত কো ছিলেন একজন সার্জন। ২০১৯ সালে তিনি তাইওয়ান পিপলস পার্টি গঠন করেন, যেসব ভোটাররা ডিপিপি ও কেএমটির প্রতি সন্তুষ্ট নয় তাদের কাছে একটা তৃতীয় পছন্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এই দলটাকে।
তবে তাইওয়ান ও চীনের ব্যাপারে টিপিপি’র অবস্থান ধোঁয়াশাপূর্ণ। কেএমটি ও টিপিপির যৌথভাবে নির্বাচনে লড়ার আলোচনা গত নভেম্বরে মুখ থুবড়ে পড়ে।
চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের চলমান উত্তেজনার মধ্যেও, নানান গবেষণা বলছে তাইওয়ানের জনগণ মনে করে অর্থনৈতিক উন্নয়নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ লোক চায় তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিক।
তরুণ জনগোষ্ঠী ও শ্রমিকদের মধ্যে সবকিছুর উচ্চ মূল্য ও বাড়ির মূল্য দিনদিন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক হতাশ। সাই ইং-ওয়েন তার ২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ভালো দেশ গড়ার, কিন্তু অনেক ভোটারই মনে করে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি।
২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ডিপিপি খুবই খারাপ ফলাফল করে, যাতে পার্টির প্রধান থেকে সরে যেতে হয় সাইকে। এরজন্য অনেকেই দায়ী করে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ডিপিপির ব্যর্থতায়। তাইওয়ানের যাদের বয়স ২০ বছর অথবা যারা এই দ্বীপে টানা ৬ মাস বসবাস করছেন তারা ভোট দেয়ার যোগ্য হবেন। অর্থাৎ সম্ভাব্য ভোটার প্রায় ১৯ মিলিয়ন। গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি হার ছিল ৭৫ শতাংশ।
১৯৪৯ সালে কুমিনতাং সরকার কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে গৃহযুদ্ধে হেরে যাবার পর এটি মেইনল্যান্ড থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় এবং তখন থেকে স্বায়ত্ত্বশাসিত হয়ে আসছে। কয়েক দশক পর তাইওয়ান নিজেদের সংবিধান অনুসারে কর্তৃত্ববাদ থেকে গণতন্ত্রে রুপান্তরিত হয়।
কিন্তু চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি তাইওয়ানে নিয়ন্ত্রণ রাখাকে মনে করে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একাধিকবার বলেছেন, একেন্দ্রীকরণ অবশ্যই করতে হবে এবং প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
যদি চীন কখনো তাইওয়ান দখল করে, তাহলে কোনো কোনো পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিমের প্যাসিফিক অঞ্চলে তারা অবাধে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে ও গুয়াম ও হাওয়াইতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিকেও হুমকির মধ্যে ফেলতে পারবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
হককথা/নাছরিন