নিউইয়র্ক ০২:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর: অনিশ্চিত জীবনে শরণার্থীরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:০২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৮ বার পঠিত

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের মারিউপোল শহর ছেড়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন মিলা পানছেনকো (৫৫)। মাঝে কেটে গেছে প্রায় দুই বছর। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে যে যাত্রায় তিনি নেমেছিলেন, তা আজও শেষ হয়নি তাঁর। অনিশ্চিত এ যাত্রার শেষটা অন্য সবার মতো তাঁর কাছেও অজানা।

মিলা রয়টার্সকে বলেন, ইউক্রেনে বাড়ি হারানোর পর এখন তাঁর নিজের কোনো ঘর নেই। রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত মারিউপোল শহরের বাড়িটি বোমার আঘাতে ধসে পড়েছে। যুদ্ধ শেষ হলেও ইউক্রেনে তাঁর ফেরার কোনো জায়গা নেই।

যুক্তরাজ্যের হ্যাটফিল্ডের একটি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে অস্থায়ীভাবে রয়েছেন মিলা। এটি পরিচালনা করছে ওয়াইএমসিএ নামের তরুণদের একটি দাতা প্রতিষ্ঠান। ‘যেকোনো সময় তারা আমাকে এসে বলতে পারে, যুদ্ধ শেষ। এখন আপনি যেতে পারেন, তখন আমি কোথায় ফিরব?’ প্রশ্নটি মিলার।

মিলা একা নন, দুই লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সবাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। রেডক্রসের এক গবেষণায় দেখা যায়, যুদ্ধের প্রভাবে ইউক্রেনে বসবাসকারী অন্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় ইউক্রেনীয়রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কেবল যুক্তরাজ্য নয়, ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাজুড়ে একই সমস্য তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে এসব অঞ্চল ও দেশে ৬০ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক এই শরণার্থীর সেখানে নিজের কোনো ঘর কিংবা পরিচয় নেই। ফলে দীর্ঘমেয়াদের ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

ইউক্রেনীয়দের বিষয়ে এসব দেশের গভীর সহানুভূতি রয়েছে—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এসব দেশ কেবল স্বল্প মেয়াদে ইউক্রেনের শরণার্থীদের সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে শরণার্থীদের চাপ তৈরি হয়েছে অঞ্চলগুলোতে। ফলে সহায়তাকারী অনেক দেশ এ খাতে ব্যয় কমাতে চাইছে।

যুক্তরাজ্যে আসা ইউক্রেনের শরণার্থীদের প্রাথমিকভাবে দেশটিতে থাকার সময়সীমা কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী ইউক্রেনীয় পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী স্বজনদের থাকার সুযোগটিও বন্ধ করে দিয়েছে লন্ডন। এদিকে ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য চলতি মাসে সহায়তা তহবিল বাড়িয়েছে পোল্যান্ড। দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্দেশনা অনুযায়ী, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই শরণার্থীদের জন্য সহায়তা বহাল রাখতে হবে। পোল্যান্ড বলেছে, সামনে এই শরণার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমানো হতে পারে।

কয়েকটি দেশের সরকার কিয়েভের সরকারের ইচ্ছার প্রতিও সংবেদনশীল, তারা চায় ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা শেষ পর্যন্ত দেশটির পুনর্গঠনে সাহায্য করতে সেখানে ফিরে যাক। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য ১৮ মাসের জন্য ভিসা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব নাগরিক ইউক্রেনে ফিরে যাবেন।

তবে ইউক্রেনে ফেরার মতো অবস্থা নেই অনেকের। মিলা জানান, মারিউপোলে ফিরে যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই তাঁদের। তিনি হ্যাটফিল্ডে থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চান। মারিউপোল দখলের সময় পালিয়ে প্রথমে ইতালিতে আসেন মিলা। এরপর চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে একটি স্থানীয় পরিবারে আশ্রয় নেন প্রথমে। পরে একটি কলেজে ইংরেজি ভাষায় কোর্স করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চাকরির চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে চান তিনি। কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি খুঁজে না পেয়ে গৃহহীনদের তালিকায় নাম লেখাতে বাধ্য হন মিলা। এরপর আশ্রয় মেলে হ্যাটফিল্ডের ওয়াইএমসিএ শেয়ার্ড হাউসে। ওয়েলভিন হ্যাটফিল্ড জেলায় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ ইউক্রেনীয় পরিবার ও ৯ ইউক্রেনীয় ব্যক্তি গৃহহীন হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে আসা প্রতিটি ইউক্রেনীয় নাগরিকের জন্য একদফা আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। কাউন্সিলগুলোর মাধ্যমে শরণার্থীদের এসব অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। বর্তমানে এ অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ পাউন্ড থেকে কমিয়ে মাত্র ৫ হাজার ৯০০ পাউন্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতি আফগান শরণার্থীর জন্য এ সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি। এই পরিমাণকে অপর্যাপ্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সূত্র : আজকের পত্রিকা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর: অনিশ্চিত জীবনে শরণার্থীরা

প্রকাশের সময় : ০৩:০২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের মারিউপোল শহর ছেড়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন মিলা পানছেনকো (৫৫)। মাঝে কেটে গেছে প্রায় দুই বছর। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে যে যাত্রায় তিনি নেমেছিলেন, তা আজও শেষ হয়নি তাঁর। অনিশ্চিত এ যাত্রার শেষটা অন্য সবার মতো তাঁর কাছেও অজানা।

মিলা রয়টার্সকে বলেন, ইউক্রেনে বাড়ি হারানোর পর এখন তাঁর নিজের কোনো ঘর নেই। রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত মারিউপোল শহরের বাড়িটি বোমার আঘাতে ধসে পড়েছে। যুদ্ধ শেষ হলেও ইউক্রেনে তাঁর ফেরার কোনো জায়গা নেই।

যুক্তরাজ্যের হ্যাটফিল্ডের একটি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে অস্থায়ীভাবে রয়েছেন মিলা। এটি পরিচালনা করছে ওয়াইএমসিএ নামের তরুণদের একটি দাতা প্রতিষ্ঠান। ‘যেকোনো সময় তারা আমাকে এসে বলতে পারে, যুদ্ধ শেষ। এখন আপনি যেতে পারেন, তখন আমি কোথায় ফিরব?’ প্রশ্নটি মিলার।

মিলা একা নন, দুই লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সবাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। রেডক্রসের এক গবেষণায় দেখা যায়, যুদ্ধের প্রভাবে ইউক্রেনে বসবাসকারী অন্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় ইউক্রেনীয়রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কেবল যুক্তরাজ্য নয়, ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাজুড়ে একই সমস্য তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে এসব অঞ্চল ও দেশে ৬০ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক এই শরণার্থীর সেখানে নিজের কোনো ঘর কিংবা পরিচয় নেই। ফলে দীর্ঘমেয়াদের ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

ইউক্রেনীয়দের বিষয়ে এসব দেশের গভীর সহানুভূতি রয়েছে—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এসব দেশ কেবল স্বল্প মেয়াদে ইউক্রেনের শরণার্থীদের সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে শরণার্থীদের চাপ তৈরি হয়েছে অঞ্চলগুলোতে। ফলে সহায়তাকারী অনেক দেশ এ খাতে ব্যয় কমাতে চাইছে।

যুক্তরাজ্যে আসা ইউক্রেনের শরণার্থীদের প্রাথমিকভাবে দেশটিতে থাকার সময়সীমা কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী ইউক্রেনীয় পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী স্বজনদের থাকার সুযোগটিও বন্ধ করে দিয়েছে লন্ডন। এদিকে ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য চলতি মাসে সহায়তা তহবিল বাড়িয়েছে পোল্যান্ড। দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্দেশনা অনুযায়ী, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই শরণার্থীদের জন্য সহায়তা বহাল রাখতে হবে। পোল্যান্ড বলেছে, সামনে এই শরণার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমানো হতে পারে।

কয়েকটি দেশের সরকার কিয়েভের সরকারের ইচ্ছার প্রতিও সংবেদনশীল, তারা চায় ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা শেষ পর্যন্ত দেশটির পুনর্গঠনে সাহায্য করতে সেখানে ফিরে যাক। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য ১৮ মাসের জন্য ভিসা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব নাগরিক ইউক্রেনে ফিরে যাবেন।

তবে ইউক্রেনে ফেরার মতো অবস্থা নেই অনেকের। মিলা জানান, মারিউপোলে ফিরে যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই তাঁদের। তিনি হ্যাটফিল্ডে থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চান। মারিউপোল দখলের সময় পালিয়ে প্রথমে ইতালিতে আসেন মিলা। এরপর চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে একটি স্থানীয় পরিবারে আশ্রয় নেন প্রথমে। পরে একটি কলেজে ইংরেজি ভাষায় কোর্স করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চাকরির চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে চান তিনি। কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি খুঁজে না পেয়ে গৃহহীনদের তালিকায় নাম লেখাতে বাধ্য হন মিলা। এরপর আশ্রয় মেলে হ্যাটফিল্ডের ওয়াইএমসিএ শেয়ার্ড হাউসে। ওয়েলভিন হ্যাটফিল্ড জেলায় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ ইউক্রেনীয় পরিবার ও ৯ ইউক্রেনীয় ব্যক্তি গৃহহীন হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে আসা প্রতিটি ইউক্রেনীয় নাগরিকের জন্য একদফা আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। কাউন্সিলগুলোর মাধ্যমে শরণার্থীদের এসব অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। বর্তমানে এ অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ পাউন্ড থেকে কমিয়ে মাত্র ৫ হাজার ৯০০ পাউন্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতি আফগান শরণার্থীর জন্য এ সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি। এই পরিমাণকে অপর্যাপ্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সূত্র : আজকের পত্রিকা।